সাত সরকারি কলেজে ভয়াবহ সেশনজট
সাত সরকারি কলেজে ভয়াবহ সেশনজট । ঢাকার সাত সরকারি কলেজকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত করা হয়েছিল সেশনজট কমানো ও শিক্ষার মান উন্নয়নের দোহাই দিয়ে। চার বছর পর দেখা যাচ্ছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ভুক্ত কলেজের একই ব্যাচের শিক্ষার্থীরা পাস করে বের হলেও সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা আটকে আছেন। এই সাতটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হলো ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ।
ওই সাত কলেজের ২০১৭ সালের স্নাতকোত্তর পরীক্ষা শুরু হয়েছিল চলতি বছরের মার্চে। কিন্তু দুটি পরীক্ষা হওয়ার পরই করোনার কারণে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। আটকে যায় পরীক্ষাও। কেবল স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থী নন, স্নাতক চতুর্থ ও তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরাও সেশনজটের শিকার। এর প্রভাব পড়ছে প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের ওপরও।
সরকারের নীতিনির্ধারকেরা দাবি করে থাকেন যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের সেশনজট কমেছে। কিন্তু সাত কলেজের পরিসংখ্যান ভিন্ন কথা বলে। এসব কলেজের যে শিক্ষার্থীরা ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিলেন, এখনো তাঁরা স্নাতকোত্তর পরীক্ষা শেষ করতে পারেননি। ২০১৭ সালে যখন সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়, তখন ওই শিক্ষার্থীরা ছিলেন তৃতীয় বর্ষে। তাঁরা স্নাতকোত্তরে ভর্তি হন ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে। একই বর্ষের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ভুক্ত কলেজের শিক্ষার্থীদের স্নাতকোত্তর পরীক্ষা ২০১৯ সালের আগস্ট মাসেই শেষ হয়েছে। তিতুমীর কলেজের একজন শিক্ষার্থী ক্ষোভের সঙ্গে বলেছেন, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশনজটের মধ্যেও আমার বন্ধুরা পাঁচ বছরের শিক্ষাজীবন ছয় বছরে শেষ করতে পেরেছে; আর আমাদের পরীক্ষা কবে শেষ হবে তা জানি না।’
এই ক্ষোভ কেবল ওই শিক্ষার্থীর নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের প্রায় দেড় লাখ শিক্ষার্থীর। সেশনজট কমানোর কথা বলে কর্তৃপক্ষ তাঁদের শিক্ষাজীবন গভীর অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। সময়মতো পরীক্ষা নেওয়া ও ফল প্রকাশের দাবিতে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা চার বছর ধরে দফায় দফায় আন্দোলন করেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার ধরনা দিয়েছেন।
সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা গত সপ্তাহেও বলেছেন, অবিলম্বে তাঁদের দাবি না মানা হলে পুনরায় মাঠে নামতে বাধ্য হবেন। সে রকম পরিস্থিতি যাতে না হয়, সে জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। আগামী ২০ জানুয়ারি থেকে সাত কলেজের স্নাতকোত্তর পরীক্ষা নেওয়ার যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, তা যেন রক্ষিত হয়। একই সঙ্গে স্নাতক শেষ বর্ষ ও তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষার সময়সূচিও নির্ধারণ করা প্রয়োজন।
সর্বোপরি এই বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন নিয়ে যাঁরা এ রকম অবিবেচনাপ্রসূত ও অবাস্তব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাঁদের জবাবদিহির আওতায় আনা হোক।