জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়পরীক্ষা খবর

পরীক্ষা স্থগিত হওয়ায় সেশনজট আরো বাড়তে পারে

সরকারের সিধান্তের আলোকে স্থগিত করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল পরীক্ষা। ২৪ মে পর্যন্ত কোনো ধরনের পরীক্ষা হবে না বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। যার ফলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় মিলে আগামী তিন মাসে আটকে যাবে শত শত পরীক্ষা। এতে নতুন করে আরো ছয় মাসের সেশনজটে পড়তে হবে শিক্ষার্থীদের। এমনকি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও সৃষ্টি হবে সেশনজট।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা গত বছরের মার্চে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে গত ১৭ মার্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। তখন পর্যন্ত বেশির ভাগ বিষয়ের পরীক্ষা শেষ হলেও দুটি থেকে পাঁচটি বিষয়ের পরীক্ষা আটকে যায়। এর পর থেকে অপেক্ষায় রয়েছেন শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘ অপেক্ষার পর সম্প্রতি স্থগিত পরীক্ষা নেওয়া শুরু হলেও আবারও তা আটকে গেল।

এছাড়াও মাস্টার্স শেষ পর্ব ও ডিগ্রী ২য় বর্ষ পরীক্ষার শুরু হলেও তা স্থগিত করা হয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ১ম, ২য় ও ৩য় বর্ষের পরীক্ষা এতদিনে সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল কিন্তু এসব পরীক্ষার ফরম পূরণই সম্পন্ন হয়নি এখনো। এদিকে ডিগ্রী ১ম ও ২য় বর্ষের পরীক্ষার সময়সীমা অতিক্রম করেছে অনেক আগে৷ মাস্টার্স ১ম পর্ব পরীক্ষাও নেওয়া সম্ভব হয়নি।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে নেওয়া শুরু হয়েছিল এবছর। কিন্তু হল খোলার দাবিতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে শিক্ষা মন্ত্রণালয় গত সোমবার ঘোষণা দিয়েছে সব ধরনের বিশ্ববিদ্যালয় খুলবে আগামী ২৪ মে থেকে। এই সময়ের মধ্যে অনলাইনে বা সরাসরি সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা বন্ধের ঘোষণাও দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।

এই ঘোষণার পর রাত থেকেই একে একে সব বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা দিতে থাকে। অথচ কিছুদিন আগেও পরীক্ষা গ্রহণে শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছিল বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।

নাম প্রকাশ না করে একজন সিনিয়র অধ্যাপক বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সব সময় তাদের স্বায়ত্তশাসনের কথা বলে। বিশেষ করে বড় পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় এই স্বায়ত্তশাসনের কথা বলে সব সময়ই পৃথক থাকার চেষ্টা করে। সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ই তাদের একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্তে পরীক্ষা নেওয়া শুরু করেছিল। অথচ তারাই আবার মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের পর পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা দিচ্ছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্বায়ত্তশাসন নিয়ে কিছুটা হলেও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ’

এই অধ্যাপক আরো বলেন, ‘খুবই অবাক হলাম, শিক্ষামন্ত্রীর ঘোষণার পরদিনই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একাডেমিক কাউন্সিল করে পরীক্ষা বন্ধের ঘোষণা দিচ্ছে। তারা যদি দু-চার দিন পরও একাডেমিক কাউন্সিলের সভা করত, তাহলে তো মন্ত্রণালয় বুঝত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরীক্ষা বন্ধের সিদ্ধান্ত আরো ভেবেচিন্তে নেওয়াটা উচিত ছিল। তবে মন্ত্রণালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ও হল খোলার যে ঘোষণা এসেছে, সেটা ঠিক আছে। বর্তমান মহামারিতে সরকার শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। কিন্তু পরীক্ষাও নিতে পারবে না এই সিদ্ধান্ত মন্ত্রণালয় থেকে না দিলেও পারত।’

জানা যায়, গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণার পর এপ্রিল থেকেই অনলাইনে ক্লাস শুরু করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। আর মে মাস থেকে অনলাইনে পরীক্ষা গ্রহণেরও অনুমতি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এমনকি আরো কিছুদিন পর থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সরাসরি ব্যাবহারিক পরীক্ষা গ্রহণেরও অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু এখন তাদের আর কোনো ধরনের পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ থাকল না। তিন মাস পরীক্ষা নিতে না পারলে তাদেরও প্রথমবারের মতো সেশনজটে পড়তে হবে।

এ ছাড়া গত জুন মাস থেকে অনলাইনে ক্লাস শুরু করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। চলতি বছরের শুরু থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজে পরীক্ষা গ্রহণ শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরীক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে সেশনজট কমিয়ে আনার একটা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল। তবে হল খোলার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ফের পরীক্ষা বন্ধের ঘোষণা আসায় বড় সংকটে পড়তে হবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে।

ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘আগামী ২৪ মে পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো পরীক্ষা নেওয়া যাবে না। আমি শিক্ষার্থীদের বলব, তাদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করেই সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর দ্রুততার সঙ্গে তাদের ক্লাস-পরীক্ষা শেষ করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

শিক্ষা মন্ত্রণালয় মনে করছে, পরীক্ষা শুরুর পরপরই শিক্ষার্থীদের হলে ওঠার আন্দোলন শুরু হয়। কারণ শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা দিতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে হবে। আর তাঁদের বেশির ভাগেরই থাকার জায়গা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল। ফলে হল খোলার আন্দোলন জোরালো হয়েছে। অনেক শিক্ষার্থী জোর করে হলে উঠে পড়ছেন। এতে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। তাই পরীক্ষা বন্ধ করলে শিক্ষার্থীরা আর হলে উঠতে চাইবেন না।

তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ঘোষণার সঙ্গে পরীক্ষা বন্ধের সিদ্ধান্ত আসাটা কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত নয়। কারণ পরীক্ষা না থাকায় শিক্ষার্থীরা ধীরে ধীরে অনলাইন ক্লাসে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলেন। দেশের শিক্ষাব্যবস্থাটাই পরীক্ষানির্ভর। আর পরীক্ষার সঙ্গে চাকরিসহ নানা বিষয় জড়িত। তাই অনলাইনে ক্লাসের সঙ্গে পরীক্ষা চলমান থাকলে সেশনজট অনেকাংশেই কমে আসত। এখন তিন মাস পরীক্ষা বন্ধের ঘোষণা আসায় পুরনো সেশনজটের সঙ্গে নতুন করে আরো ছয় মাসের সেশনজট যুক্ত হবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে একাধিক পরীক্ষা চলমান ছিল। আগামী মার্চ থেকেও আরো একাধিক পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল, যা ফের আটকে গেল। এর মধ্যে মাস্টার্স ফাইনাল পরীক্ষা, ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষ, অনার্স চতুর্থ বর্ষ, বিভিন্ন প্রফেশনাল পরীক্ষা, ডিগ্রি তৃতীয় বর্ষ, মাস্টার্স প্রিলিমিনারি অন্যতম। এই বিশ্ববিদ্যালয়েই বছরে প্রায় ৪০০ ধরনের পরীক্ষা নেওয়া হয়। এর সবটাই প্রায় আটকা পড়ে গেল।

শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে EducationsinBD.com এর ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন YouTube Channel জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল নোটিশ দেখুন এখানে একসাথে National University Notice Board অনার্স /মার্স্টাস/ ডিগ্রি পরীক্ষার প্রিমিয়াম সাজেশন পেতে ফেসবুক পেজে মেসেজ দিন। https://www.facebook.com/PremiumSuggestion আমাদের ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করুন Facebook Group

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *