তােমরা ফেসবুক, ইউটিউব দেখছো এসব দোষের কিছু নয়: উপাচার্য
আগামীর বিশ্ব নিয়ন্ত্রণে নিতে হলে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত অধ্যবসায় এবং সংস্কৃতি-সহশিক্ষা চর্চার আহ্বান জানিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. মাে. মশিউর রহমান বলেন, পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে। তােমাদের প্রতি আমার অনুরােধ- তােমরা প্রযুক্তিবান্ধব হবে। নিয়মিত পাঠগ্রহণ করবে। নিজেদের দক্ষ এবং বিশ্বচ্যালেঞ্জ মােকাবেলার উপযােগী করে গড়ে তুলতে হবে। এটি করতে পারলেই তােমরা আগামী বিশ্ব নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। শনিবার রাজধানীর সােবহানবাগে ড্যাফোডিল টাওয়ারে এমিনেন্স কলেজ এর ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের নবীন বরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন উপাচার্য।
উপাচার্য আরাে বলেন, তােমরা ইন্টারনেট ব্রাউজ করছাে। ফেসবুক, ইউটিউব দেখছো। এসব দোষের কিছু নয়। তবে তােমাদের ই-লাইব্রেরিতেও ঢুকতে হবে। সেখানে অজস্র বই, জার্নাল পাবে। ওর মধ্যে অন্তহীন ডুবে থাকা যায়। এর মধ্যদিয়ে একজন মানবিক মানুষ হয়ে ওঠো। এটি করতে পারলে তােমরা পরিপূর্ণ মানুষ হবে। তােমাদের হাতেই পৃথিবীর নিয়ন্ত্রণ আসবে। বিশ্বায়নের অসুবিধা অনেক। কিন্তু সুবিধা হচ্ছে- এই বিশ্বায়নের যুগে সে চাইলে পৃথিবীটা হাতের মুঠোয় নিয়ে আসতে পারে। তােমাদের হাতের মুঠোয় পৃথিবী আসুক। তাহলেই তুমি বাংলার মর্যাদাবান নাগরিক হিসেবে স্বাধীনতার পাতাকার অতন্ত্র প্রহরী হবে।
উপাচার্য বলেন, ‘আমরা স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপন করছি। জাতির পিতার জন্মশতবর্ষ পালন করছি। এই দেশটি এমন ছিল না। তাহলে কেমন ছিল এই দেশ? কেমন ছিল আমাদের সমাজ? আমাদের স্বাধীনতার ৫০ বছর পালন করছি ঠিকই। কিন্তু ৯ মাসের সশস্ত্র সংগ্রাম, যে মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ। সেই মুক্তিযুদ্ধে যেসব মহান মানুষ প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন তাদের কোনাে কিছুই চাওয়া-পাওয়ার ছিল না। তারা প্রাণ দিয়েছেন শুধুমাত্র তাদের আগামী প্রজন্মের সন্তানরা সুখে, শান্তিতে, শিক্ষায়, সংস্কৃতিতে আলােকবর্তিকার মধ্যদিয়ে পথে পথে হেঁটে যাবে সেই লক্ষ্যে। ৫০ বছর আগের বাংলাদেশে যে তরুণ প্রজন্ম ছিল বাংলাদেশ জাতিরাষ্ট্র সৃষ্টির আগে যে বৈষম্যমূলক সমাজ ছিল যেটি আজও আছে। আমাদের স্বাধীনতার স্বপ্ন ওই জায়গায়।
কারণ আমরা একটি ধনবান সমাজ প্রতিষ্ঠা করেছি বঞ্চিত মানুষের সম্পদ লুষ্ঠনের মধ্যদিয়ে। সেই জায়গায় আমরা থাকতে চাই না। স্বাধীনতার মূল সুর গণতন্ত্র, অসাম্প্রদায়িকতা, ধর্মনিরপেক্ষ একটি সমাজ। অস্ত্রের ব্যবসা, যুদ্ধের ব্যবসা ও ধর্মের ব্যবসা- এসব আমাদের কাম্য নয়, আমাদের কাম্য মানবিক সমাজ। আমাদের যে অনুভূতি, অনুভব, বিশ্বাস এবং ভালােবাসা সেটি আগামী প্রজন্মের সন্তান হিসেবে তােমাদের সাথে মিলিয়ে নিতে চাই, একটা ছন্দ দিতে চাই। একটা সুর মেলাতে চাই। যে সুরের মধ্যদিয়ে অর্থনীতিতে সমৃদ্ধ একটি সমাজ সৃষ্টি হবে। আমাদের মশাল তােমাদের হাতে দিয়ে আমরা আরও আলােকচ্ছুটায় এগিয়ে যাবাে। যেখানে বাংলাদেশ উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হবে। এটি হবে আমাদের সম্মিলীত স্বপ্ন। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে আমি বলবাে, আগামী ৪টি বছর প্রতিটি শিক্ষার্থী সুউচ্চ শিখরে দাঁড়িয়ে বুঝতে চেষ্টা করবে পৃথিবী অনেক এগিয়ে গেছে। সেই জায়গা একজন মানবিক মানুষ হিসেবে তুমি যখন নিজেকে তৈরি করবে তখন তুমিই হবে বাংলাদেশ।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে অনলাইনে যুক্ত ছিলেন ড্যাফোডিল ফ্যামিলির চেয়ারম্যান ড. মাে. সবুর খান। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড্যাফোডিল ফ্যামিলির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মােহাম্মদ নূরুজ্জামান এবং এমিনেন্স কলেজ এর নির্বাহী পরিচালক রথীন্দ্র নাথ দাস। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মিসেস শবনম শরীফ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এমিনেন্স কলেজের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আহমদ ইসমাইল মােস্তফা। অনুষ্ঠান শেষে মনােজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হয়।