কোন এলাকায় কখন লোডশেডিং হবে জেনে নিন
বিদ্যুৎ–সংকট মোকাবিলায় দেশজুড়ে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ লোডশেডিং হতে পারে দুই ঘণ্টা পর্যন্ত। কোন এলাকায় কখন লোডশেডিং হবে, তা এরই মধ্যে জানিয়েছে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি)।
ডিপিডিসি-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বিকাশ দেওয়ান বলেন, এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংয়ের সময়সূচির সম্ভাব্য তালিকা ডিপিডিসির ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে। ওয়েবসাইটে গিয়ে ‘সম্ভাব্য লোডশেডিং শিডিউল’ নামের লিঙ্কে ক্লিক করলেই সময়সূচি জানতে পারবেন বলে জানান তিনি।
হঠাৎ কেন দেশে লোডশেডিং বৃদ্ধি পেয়েছে? শতভাগ বিদ্যুতের যুগে প্রবেশ করেছে দেশ তবুও কেন লোডশেডিং? বিতরণ সংস্থার কর্মকর্তারা বলছেন, সরবরাহ ঘাটতির কারণে বেশ কিছু এলাকায় লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, দেশে বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৫ হাজার ৫৬৬ মেগাওয়াট। মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন ৫৬০ কিলোওয়াট। বিদ্যুৎ সুবিধা পাওয়া জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ১০০ ভাগ। প্রি-পেইড মিটার স্থাপন করা হয়েছে ৪৭ লাখ ৩২ হাজার ৪৯টি। সোলার হোম সিস্টেম ৬০ লাখ। মোট সিস্টেম লস ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ।
কোন এলাকায় কখন লোডশেডিং হবে জেনে নিন
এলাকাভিত্তিক সম্ভাব্য লোডশেডিংয়ের তালিকা https://dpdc.org.bd/site/nocs/load_shedding
বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য মতে, সাড়ে ২৫ হাজারেরও বেশি মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে বাংলাদেশের। তবে গড়ে উৎপাদন হয় সাড়ে ১২ হাজার মেগাওয়াট। গত শুক্রবার দিনের সর্বোচ্চ চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে উৎপাদন ১০ হাজার ২৬৩ মেগাওয়াট এবং সন্ধ্যায় ছিল সর্বোচ্চ ১৩ হাজার ২৪৩ মেগাওয়াট। জানা গেছে, চলতি মৌসুমে বিদ্যুতের চাহিদা ১৫ হাজার মেগাওয়াট। সে হিসাবেও চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষমতা রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জ্বালানি সংকটের কারণে এই সক্ষমতা কাজে লাগানো যাচ্ছে না। বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে সবধরনের জ্বালানির দাম বাড়তি। গ্যাস না পেয়ে চালানো হচ্ছে চড়া দামের তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র। এতে করে শহরের অংশে পুরোপুরি বিদ্যুৎ পেলেও গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।
দেশে মোট ছয়টি বিদ্যুৎ কোম্পানি বিদ্যুৎ সরবরাহ করে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে-বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি), ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো), নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (নেসকো), পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি), ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) এবং ঢাকা ইলেক্ট্রিসিটি পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো)। এর মধ্যে সবচেয়ে গ্রাহক সংখ্যা বেশি আরইবি’র। মোট ৪ কোটি ২২ লাখ গ্রাহকের মধ্যে ৩ কোটি ৩০ লাখ গ্রাহকই পল্লী বিদ্যুতের। দিনে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় তার অর্ধেকের বেশি ব্যবহার করেন এই গ্রাহকেরা।
বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রতিবেদন অনুযায়ী, যেসব এলাকায় স্থানীয়ভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হচ্ছে, এমন এলাকাগুলোতে লোডশেডিং বেশি হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে-নেত্রকোনা, জামালপুর, কিশোরগঞ্জ, শেরপুর ও টাঙ্গাইল। এছাড়াও লোডশেডিং হচ্ছে-রাজশাহী, রংপুর ও সিলেটের প্রায় সব এলাকায়। এসব এলাকায় স্থানীয়ভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন কম। আবার জাতীয় গ্রিড থেকেও প্রয়োজনীয় সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না। তবে চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগে তুলনামূলক লোডশেডিং কম হচ্ছে।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ আজকে ফেসবুকে জানিয়েছেন কেন লোডশেডিং বেড়েছে, তিনি পোষ্টে লিখেছেন, গ্যাস স্বল্পতার কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এতে অনেক জায়গাতেই বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হলে বিদ্যুৎ উৎপাদন পুনরায় স্বাভাবিক হবে।
যুদ্ধের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির উচ্চমূল্য ও সরবরাহ অন্যান্য সব দেশের মতো আমাদেরকেও সমস্যায় ফেলেছে। এ পরিস্থিতিতে আপনাদের সাময়িক অসুবিধার জন্য আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করছি।
প্রতিদিন যে পরিমাণ বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় তার মধ্য থেকে ৫০০ থেকে ৮৫০ মেগাওয়াট পর্যন্ত ঘাটতি থাকছে। যে কারণে দিনে তিন থেকে পাঁচ ঘণ্টা লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে আরইবির চেয়ারম্যান মো. সেলিম উদ্দিন গণমাধ্যমকে জানান, মূলত যেসব স্থানে বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হচ্ছে, সেসব জায়গায় কিছু সময় লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি বিষয়টি সহনীয় পর্যায়ে রাখতে।
পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে ইতোমধ্যে সবধরনের জ্বালানির দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো তেল, গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল। আর মূল সমস্যা ওখানেই। সরকার চাচ্ছে গ্রাহকরা যাতে কোনো ধরনের ভোগান্তিতে না পড়ে। সে অনুযায়ীই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব