জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়

নবীন শিক্ষার্থীদের বিশ্বনাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠার আহ্বান উপাচার্যের

নবীন শিক্ষার্থীদের বিশ্বনাগরিক হিসেবে নিজেকে তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান। তিনি বলেন, আগামী বিশ্বে প্রযুক্তি, বিজ্ঞানে ও আত্মত্মমর্যাদায় তোমাদের নেতৃত্ব দিতে হবে। বুক ফুলিয়ে মনে ধারণ করে বলবে- তুমি বাঙালির আদর্শ সন্তান।’

শনিবার (২৫ নভেম্বর) ঢাকা সিটি কলেজের একাদশ শ্রেণির ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন উপাচার্য ড. মশিউর রহমান। দেশের প্রথিতযশা এই সমাজবিজ্ঞানী বলেন, ‘এই দেশের অতন্ত্র প্রহরী আমাদের সন্তানেরা। তোমরা নিজেদের অসাম্প্রদায়িক, আধুনিক, গণতান্ত্রিক, উদার এবং দেশমাতৃকাকে ভালোবাসার বিশ্বনাগরিকে পরিণত কর। তুমি জানো না তোমার স্বপ্নের সীমানা কী? কিন্তু তুমি ঠিকই জানো- তোমার হাতে যে মোবাইলটি রয়েছে তাতে ই- বুক, ই-জার্নাল, ই-লাইব্রেরির একসেস পাওয়া যায়। সমস্ত তথ্য তোমার হাতের মুঠোয়। যখনই তোমার ডিভাইসটি হাতে থাকবে জ্ঞানের অনুসন্ধান করবে। তোমার পাঠ্যসূচির আপডেট তথ্য খুঁজবে।

শিক্ষকের নির্দেশনা মেনে বাসায় নিয়মিত অধ্যয়ন করবে।’ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে উপাচার্য ড. মশিউর রহমান বলেন, ‘তোমরা এই তারুণ্যে উচ্ছ্বাস করবে, ইউটিউব দেখবে, গান শুনবে-সবকিছু করবে। কিন্তু নিয়মিত ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা প্রতিদিন পড়াশোনা করবে। এতে কোনো আপস করবে না। জ্ঞানের অন্বেষণ তোমাকে করতেই হবে। জীবনে আগামী দুইবছর আর কোনোদিন ফিরে পাবে না। জীবন তোমার আরো সুন্দর হবে, মহিমাময় হবে। কিন্তু আগামী দু’বছরে তুমি জ্ঞানের সাগরে অবগাহন করার যে সুযোগ পাবে এই সুযোগ আর কোনোদিন ফিরে আসবে না।

উচ্ছ্বাসের যে অবগাহন তা এই তারুণ্যে থাকবে। কিন্তু বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের যুক্তিতে চলতে হবে। অনুসন্ধানে চলতে হবে। আমাদের বিজ্ঞানীরা অনেক কিছু আবিষ্কার করেছে। কিন্তু প্রকৃতি সুরক্ষা করতে পারেনি। বরং প্রকৃতি বিনষ্ট করেছি আমরা। বিজ্ঞান এবং প্রকৃতি এই দুইয়ের সমন্বয় ঘটাতে হবে। তোমাদের হাতে যেন প্রকৃতির সর্বোচ্চ সুরক্ষা হয়, বিজ্ঞানের সেই শিক্ষাও তুমি গ্রহণ করবে।’ নবীন শিক্ষার্থীদের দেশপ্রেমিক নাগরিক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য বলেন, ‘প্রযুক্তি ভাবনায় আগামীর বাংলাদেশ তোমার হাতে গড়ে দেবে বলেই পূর্বসূরীরা রক্তস্নাত এক বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে অপূর্ব সুন্দর এক দেশ দিয়ে গেছেন। এ এক ভিন্ন চরিত্রের বাংলাদেশ। এ এক অনন্য সুন্দর ভূমি।

১৯৭১ সালে মাত্র ৯ মাসের সশস্ত্র সংগ্রাম করেছেন আমাদের পূর্বসূরীরা। আজ যে বাংলাদেশে বসে নবীনবরণের উচ্ছ্বাসে তুমি মেতেছ- এইটুকুন সুন্দর সময়ের জন্য আমাদের পিতা-মাতা, ভাই-বোনসহ এই বাংলাদেশের ত্রিশলক্ষ মানুষ লুঙ্গী, গেঞ্জি পরে বুকে-পিঠে গেরিলা যুদ্ধ করে পাকিস্তানী সশস্ত্র বাহিনীকে পরাস্ত করে একটি মানচিত্র এঁকেছেন। দু’লক্ষ মা-বোন নির্যাতন সয়ে সয়ে লাল-সবুজের পতাকা ছিনিয়ে এনেছেন। নবীন বন্ধুরা, তোমাদের হাতে মোবাইল থাকবে, তুমি ছবি তুলবে, গান শুনবে। কিন্তু মোবাইলের স্ক্রিনে সব সময় খুশিমনে বাবা-মায়ের ছবিটি রেখ। মোবাইলের স্ক্রিনে বাংলাদেশের মানচিত্র রেখ। হৃদয়ে জাতীয় সংগীত ধারণ কর। প্রিয় দেশমাতৃকাকে আগলে রেখ সযত্নে।’

দেশের বিশিষ্ট এই সমাজচিন্তক বলেন, ‘নবীনবরণে অনুষ্ঠানে নিজের, অন্যের, উচ্ছ্বাসের, আনন্দের ছবি তুলছেন শিক্ষার্থীরা। কণ্ঠে জাতীয় সংগীত। হাতের মুঠোয় প্রযুক্তি। এই দুটো মিলে নবীনবরণে মূলত স্বপ্নকে জয় করার অনন্য মুহুর্ত মনে হয়েছে। আমি আশা করব, তোমাদের হাতের মুঠোয় যে প্রযুক্তি এবং হৃদয়ে জাতীয় সংগীত এর সূচনা দিয়ে নবীনবরণ হল। যে ফুল দিয়ে কলেজ তোমাদের বরণ করে নিল। আগামী পৃথিবীর প্রতিটি পথ চলায় তোমাদের জীবনে এই ফুলেল শুভেচ্ছা, জাতীয় সংগীতের স্পন্দন এবং প্রযুক্তি তোমার নিয়ন্ত্রণে হাতের মুঠোয় থাকবে- এই তিনের সমন্বয়ে কলেজের নবীনবরণের মধ্য দিয়ে যে শুভ বার্তার উন্মেষ ঘটেছে সারাজীবন জুড়ে তোমরা সেটিকে ধারণ করতে পারবে।’

‘আমাদের এই বৈচিত্র্যপূর্ণ সমাজে পার্বত্য চট্টগ্রামে এক সময় সংঘাত ছিল। তারা আমাদের ভাই, আমাদের পাহাড়ি বন্ধু। আমরা নিজেরা বসে সেই সংঘাত নিরসন করেছি। আমরা শান্তি চুক্তি করেছি। কারো মধ্যস্থতা গ্রহণ করিনি। অতিসম্প্রতি আমরা একটি পদ্মাসেতু করতে চেয়েছিলাম। বিশ্বব্যাংক বলল আমরা নাকি দুর্নীতি করেছি অর্থ দেবে না। আমরা বিনয়ের সাথে বলেছি অর্থ না দেন তাতে সমস্যা নেই। আমাদের রেমিটেন্স যোদ্ধারা পৃথিবীর নানা জায়গা থেকে অর্থ পাঠায়। আমাদের পোশাক শ্রমিকরা দিন-রাত পরিশ্রম করে অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছে। আমাদের মজুর, কৃষক, শ্রমিক ভাইয়েরা দেশের ভালোর জন্য দিনরাত পরিশ্রম করেন। তাদের টাকায় আমরা আত্মমর্যাদার সেতু নির্মাণ করেছি। বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে চ্যালেঞ্জ নিয়েছি। কিন্তু যুদ্ধে নামিনি। সমুদ্রসীমা বিজয় করে আরেকটি বাংলাদেশ পেয়েছি। ছিটমহল সমস্যা সমাধান করেছি। কারো সঙ্গে সংঘাতে জড়াইনি। বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে মিয়ানমারের লাখো শরণার্থীকে নিজেদের পেটের অর্ধেক খাবার দিয়ে আশ্রয় দিয়েছি। এতে বিশ্বে মানবিক রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ।’

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য বলেন, ‘আগামীর পথ চলায় সিটি কলেজ তোমাকে যে অভিভাবকত্ব করবে সেটি যেমন তোমাকে ধারণ করতে হবে। একইসঙ্গে আগামীতে বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অভিভাবকত্বে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় নিজেদের সর্বোচ্চ শিখরে নিয়ে যেতে সক্ষম হবে। নিজেদের প্রস্তুত রেখ। তোমার সামনে অবারিত সুযোগ আসবেই আসবে। এই তারুণ্যে বিজয়ের স্বপ্ন গেঁথে রেখ। মনে রেখ, তোমার সামনে একমাত্র পথ হচ্ছে ভালো মানুষ, সুন্দর মানুষ আর বিজয়ী হওয়া। তোমার বিজয়ের পথে পথে আমাদের সুরক্ষা, শুভকামনা ও ভালোবাসা থাকবে।’ সিটি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর বেদার উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে নবীনবরণ অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপাধ্যক্ষ প্রফেসর মো. মোশাররফ হোসেন চৌধুরী, কলেজ গভর্নিং বডির সদস্য অ্যাডভোকেট কাজী মোর্শেদ হোসেন কামাল, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক প্রফেসর মো. শাহেদুল খবির চৌধুরীসহ কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দ।

শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে EducationsinBD.com এর ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন YouTube Channel জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল নোটিশ দেখুন এখানে একসাথে National University Notice Board অনার্স /মার্স্টাস/ ডিগ্রি পরীক্ষার প্রিমিয়াম সাজেশন পেতে ফেসবুক পেজে মেসেজ দিন। https://www.facebook.com/PremiumSuggestion আমাদের ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করুন Facebook Group

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *