বেসরকারি কলেজে অনার্স-মাস্টার্স উঠিয়ে দিলে শিক্ষকদের কী হবে?
বেসরকারি কলেজে প্রয়োজনীয় শিক্ষক ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো না থাকায় প্রতিষ্ঠানগুলোতে ঠিকমতো লেখাপড়া হচ্ছে না। একাদশ বা ডিগ্রি শিক্ষা কার্যক্রম চালানোই দায়। এমন বাস্তবতায় এ ধরনের কলেজে অনার্স-মাস্টার্স কোর্স চালানোর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, নতুন করে ভাবছে মন্ত্রণালয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বলছে, বেসরকারি কলেজে আর কোনো অনার্স-মাস্টার্স কোর্স অনুমোদন দেওয়া হবে না।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বেসরকারি কলেজের অনার্স-মাস্টার্স কোর্সের বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। সম্প্রতি তিনি একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন, আমরা আর সনদধারী বেকার তৈরি করতে চাই না। প্রধানমন্ত্রী জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় করে দিচ্ছেন। কাজেই যারা অনার্স-মাস্টার্স করবেন তারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই করবেন। ডিগ্রি পাস কোর্সের পাশাপাশি বিভিন্ন শর্টকোর্স করতে পারি।
এদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মশিউর রহমান বলেন, বেসরকারি কলেজে নতুন করে আর অনার্স-মাস্টার্স কোর্স অনুমোদন দেওয়া হবে না। গত ৮-৯ মাস ধরেও এমন কোনো কোর্স অনুমোদন দেওয়া হয়নি। বেসরকারি কলেজে অনার্স-মাস্টার্স কোর্স চালু না করে সেখানে ডিগ্রি পাস কোর্সের পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে শর্টকোর্স চালুর চিন্তাও চলছে। এতে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত্ কর্মক্ষেত্রে সফলতা পাবে।
আরো পড়ুন- বেসরকারি কলেজে অনার্স-মাস্টার্স কোর্স অনুমোদন দেওয়া হবে না
৩১৫টি বেসরকারি কলেজে অনার্স-মাস্টার্স উঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তে প্রেক্ষিতে স্তরের নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকরা আমরণ অনশনের হুমকি এবং স্মারকলিপি দেওয়ার পর এবার মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করলো বাংলাদেশ নিগৃহীত অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষক পরিষদ। সোমবার (১১ জানুয়ারি) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়।
বেসরকারি কলেজে অনার্স-মাস্টার্স উঠিয়ে দিলে শিক্ষকদের কী হবে- জানতে চেয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি চলাকালে অনুষ্ঠিত সমাবেশে শিক্ষক নেতারা বলেন, অনার্স-মাস্টার্স স্তর উঠিয়ে দেওয়ার আগেই এমপিওভুক্ত করতে হবে এ স্তরের শিক্ষকদের। মানববন্ধন কর্মসূচি চলাকালে বাংলাদেশ নিগৃহীত অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষক পরিষদ ‘বঙ্গবন্ধু স্মারক বর্ষপঞ্জি’র মোড়ক উন্মোচন করে।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ১৯৯৩ সালে প্রান্তিক নারী শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সম্প্রসারণ ও দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা নিশ্চিতে ও স্থানীয়ভাবে পড়ালেখার স্বার্থ বিবেচনায় দেশের বিভিন্ন বেসরকারি ডিগ্রি কলেজে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদনক্রমে প্রথম অনার্স-মাস্টার্স কোর্স চালু করা হয়।
বক্তারা বলেন, বৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া প্রায় সাড়ে ৫ হাজার শিক্ষককে দীর্ঘ ২৮ বছরেও এমপিওভুক্ত করা হয়নি। এ সমস্যা সমাধান প্রত্যাশায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ হলে কোনও লাভ হয়নি। শিক্ষকদের পদ জনবল কাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত না থাকাকে দায়ী করে পাশ কাটানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা এ বিষয়টি নিয়ে কখনও ভেবেও দেখেননি।
এমনকি সর্বশেষ ২০১৮ জনবল সংশোধনীতে এ স্তরের শিক্ষকদের পদ জনবলে অন্তর্ভুক্তিতে জনবল কাঠামো ও নীতিমালা সংশোধন কমিটির প্রথম বৈঠকে সবাই ঐক্যমতে পৌঁছালেও পরবর্তীতে তা আর আলোর মুখ দেখেনি। শুধু তাই নয়, এ বিষয়ে সাম্প্রতিক সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বেসরকারি কলেজে আর অনার্স-মাস্টার্স কোর্স চালু না রেখে কারিগরি শর্ট কোর্স চালুর বিষয়ে মতামত ব্যক্ত করেছেন।
শিক্ষামন্ত্রীর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে সমাবেশে বলা হয়, অনার্স-মাস্টার্স স্তর উঠিয়ে দিলে বৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের কী হবে? এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী পরিষ্কার করে এখনও কিছু বলেননি। আর রাষ্ট্রের বৃহত্তর কল্যাণে যেকোনো সৃষ্টিকে হঠাৎ করে বাতিল না করে একটু চিন্তা-ভাবনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি।
আরো পড়ুন- বেসরকারি কলেজে অনার্স-মাস্টার্স কোর্স থাকবে না
বাংলাদেশ নিগৃহীত অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমরা চাই— বেসরকারি কলেজে অনার্স-মাস্টার্স স্তর উঠিয়ে দেওয়ার আগে আমাদের বিশেষ ব্যবস্থায় এমপিওভুক্ত করা হোক। অন্যথায় ৩১৫টি কলেজকে জাতীয়করণ করে নেওয়া হোক। আর যদি তা না করা হয় তাহলে কঠোর কর্মসূচিতে যাবেন শিক্ষকরা। মানববন্ধন ও সমাবেশে বিভিন্ন এলাকা থেকে অনার্স-মাস্টার্স স্তরের শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য সারা দেশে ৮ শতাধিক কলেজে অনার্স কোর্স চালু আছে। এর মধ্যে বেসরকারি কলেজ ৩ শতাধিক। আর মাস্টার্স রয়েছে এমন কলেজ অনেক কম। যেসব কলেজের পর্যাপ্ত শিক্ষক ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নেই সেসব কলেজের অনার্স-মাস্টার্স কোর্স বাতিলের বিষয় চিন্তা চলছে।