দেশের ইতিহাসে এবারই প্রথম জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ম বর্ষে শিক্ষার্থী নেই
দেশের ইতিহাসে এবারই প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নতুন প্রথম বর্ষে (নিউ ফার্স্ট ইয়ার) কোনো শিক্ষার্থী নেই। কারণ, ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারেনি কোনো বিশ্ববিদ্যালয়। গত বছর অটোপাসের মাধ্যমে যারা এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন, সেসব শিক্ষার্থীরই প্রথমবর্ষে ভর্তি হওয়ার কথা। কিন্তু করোনার কারণে এখনও ভর্তি পরীক্ষা নিতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। সঠিক সময়ে ভর্তি কার্যক্রম শেষ হলে গত বছরের অক্টোবর-নভেম্বর থেকে এসব শিক্ষার্থীর ক্লাস শুরু হয়ে যেত।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. বদরুজ্জামান গত বৃহস্পতিবার জানান, মোটা দাগে তাদের ১০টি পরীক্ষা স্থগিত হয়ে আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা মাস্টার্স ফাইনাল ও ডিগ্রি তৃতীয় বর্ষ। মাস্টার্স ফাইনালে এক লাখ ৩০ হাজার ও ডিগ্রি তৃতীয় বর্ষে এক লাখ ৯০ হাজার পরীক্ষার্থী রয়েছে। তিনি বলেন, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়েরই প্রথম বর্ষে শিক্ষার্থী নেই, আমাদেরও নেই। করোনা পরিস্থিতি ভালো হলে ভর্তি পরীক্ষা হবে। উল্লেখ্য, দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, ট্রেজারার সব পদই শূন্য। অনেকটাই অভিভাবকহীন অবস্থায় চলছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।
করোনায় শিক্ষা ব্যবস্থার ক্ষয়ক্ষতির এটি সামান্য একটি চিত্রমাত্র। করোনার ছোবলে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা। টানা ১৭ মাস ধরে বন্ধ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। চরম ক্ষতির শিকার প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যায়ের প্রায় সাড়ে চার কোটি শিক্ষার্থী ও ৫০ লাখ শিক্ষক। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতিও কম নয়।
বেসরকারি শিক্ষকদের আয়ের ওপর পড়েছে করোনার ভয়াবহ নেতিবাচক প্রভাব। ব্যাপক শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, বেড়েছে বাল্যবিয়ে। শহুরে শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীরা ঘরে বন্দি হয়ে থাকতে থাকতে নানা মানসিক সংকটের মুখোমুখি। এসব নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকরাও।
প্রাথমিকের ১৯ শতাংশ ও মাধ্যমিকের ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী করোনার এই সময়ে নিয়মিত পড়াশোনার একদম বাইরে রয়েছে। এ গবেষণায় এমন প্রেক্ষাপটে মা-বাবাদের চিন্তাভাবনার চারটি মৌলিক দিক উঠে এসেছে। এগুলো হলো- শিক্ষার প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ কমে যাওয়া, শিক্ষার খরচ তুলনামূলকভাবে বেড়ে যাওয়া, স্কুল খোলার সময় নিয়ে চিন্তা এবং পড়াশোনার পাশাপাশি কর্মসংস্থানজনিত উদ্বেগ।
করোনায় দেশের মাধ্যমিক শিক্ষার ক্ষতিও ভয়াবহ। গত বছর কোনো বার্ষিক পরীক্ষা ছাড়াই উপরের শ্রেণিতে উঠেছে মাধ্যমিক শিক্ষার্থীরা। ফলে গত বছরের ক্লাসের দক্ষতা ঘাটতি তাদের রয়েই গেছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে নতুন বছরে নতুন ক্লাসের পড়াশোনা। অথচ স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় আনুষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগ নেই। সামর্থ্যবান অভিভাবকরা গৃহশিক্ষক দিয়ে পড়াচ্ছেন। তবে শিক্ষকের কাছে দিনে এক ঘণ্টা পড়ে বিদ্যালয়ের ৬-৭ ঘণ্টা ঘাটতি পূরণ হওয়ার নয়। অন্যদিকে করোনায় নিম্নবিত্ত ও দরিদ্র অসংখ্য অভিভাবকের আয়ে ধস নেমেছে। তাই তারা সন্তানের জন্য গৃহশিক্ষক রাখতে পারছেন না।
উচ্চশিক্ষা স্তরেও করোনার থাবায় বিপর্যস্ত শিক্ষার্থীরা। সেশনজট জেঁকে বসেছে। শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষাজীবন নিয়ে চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়। বয়স পেরিয়ে যাচ্ছে, আছে চাকরির চিন্তা। সেশনজট কাটাতে এক বছর অপেক্ষা করার পর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন চলতি মাসে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার অনুমতি দিয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এ অনুমতি গত বছরই দেওয়া হয়েছিল।