পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে পরীক্ষা ছাড়াই পরবর্তী ক্লাসে উত্তীর্ণ হবে শিক্ষার্থীরা?
করোনার মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব না হলে শেষ পর্যন্ত পরীক্ষা ছাড়াই পরের ক্লাসে উত্তীর্ণ হবে শিক্ষার্থীরা। এক্ষেত্রে সীমিত আকারে হলেও চলতি শিক্ষাবর্ষের মৌলিক বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হবে পরের শিক্ষাবর্ষে। এ বিষয়ে নিজেদের সুপারিশ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে বাংলাদেশ পরীক্ষা উন্নয়ন ইউনিট-বেডু। মন্ত্রণালয় বলছে, আগামী মাসে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। Students will pass the next class without examination
করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে চলতি বছর জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা বাতিলসহ ছয়টি বিকল্প প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে বাংলাদেশ পরীক্ষা উন্নয়ন ইউনিট (বেডু)। প্রস্তাবে শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি সংকোচন এবং বিষয় কমিয়ে আগামী ডিসেম্বরে পরীক্ষা নেয়ার কথা বলা হয়েছে।
আরো পড়ুন- পরীক্ষা ছাড়াই পরবর্তী ক্লাসে উত্তীর্ণসহ ৬ প্রস্তাব
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। নেয়া সম্ভব হচ্ছে না এইচএসসি পরীক্ষাও। অফিস আদালত খুলে দেয়া হলেও এখনো অনিশ্চিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিষয়টি। এ অবস্থায় সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ পরীক্ষা উন্নয়ন ইউনিট-বেডু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ৩৯ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। যেখানে গুরুত্বপূর্ণ সুপরিশগুলোর মধ্যে রয়েছে।
• বেডু প্রথম প্রস্তাবে বলা হয়েছে- শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি সংকোচন করে পরীক্ষা নেয়া যেতে পারে। তারা বলছে, সংকুচিত পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে আগের মতোই ১০০ নম্বরের পরীক্ষা নেয়া সম্ভব।
• সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্তও করোনা সংক্রমণের বাস্তবতা ধরে নিয়ে। এ ক্ষেত্রে পাঠ্যসূচি সংকোচন করে ডিসেম্বরে শুধু বহু নির্বাচনী প্রশ্নের মাধ্যমে পরীক্ষা নেয়া যেতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় এক ঘণ্টার পরীক্ষায় প্রতিটি বিষয়ে ৫০ নম্বরের পরীক্ষা নেয়া হবে।
• পরীক্ষার মোট বিষয়ের সংখ্যা কমানোর কথা বলা হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে তারা বলছে, জেএসসি পরীক্ষা চালুর আগে অষ্টম শ্রেণিতে যে বৃত্তি পরীক্ষা হতো তাতে কেবল বাংলা, ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ে পরীক্ষা হতো।
• সব বোর্ডে অভিন্ন প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেয়ার কথা বলা হয়েছে। এতে প্রশ্নপত্র ছাপার ক্ষেত্রে যে দীর্ঘ সময় লাগে, সেটা কমবে। এ ছাড়া সব বোর্ডের ফলাফলেও সাম্যতা আসবে।
• সংকুচিত শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচির আলোকে নিজ নিজ বিদ্যালয়ে পরীক্ষা নেয়ার কথা বলা হয়েছে। যদি নভেম্বর থেকে এক মাসের জন্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকে তাহলে এটি করা যাবে। বিদ্যালয় কেন্দ্রিক এই পরীক্ষার ক্ষেত্রে শুধু অষ্টম শ্রেণির পরীক্ষার ফল শিক্ষা বোর্ডগুলোতে পাঠাতে হবে। এখানেও আসন বিন্যাসে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ভিন্ন সেটে প্রতিদিন দুই পালায় পরীক্ষায় নেয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে নিজ নিজ বিদ্যালয়ে সর্বোচ্চ নম্বরধারী ১০ শতাংশ শিক্ষার্থীদের বৃত্তি পরীক্ষার জন্য মনোনয়ন দেয়া যেতে পারে।
• চলতি বছর বিদ্যালয়ে যদি শ্রেণি কার্যক্রম আদৌ চালু করা সম্ভব না হয় তাহলে কোনো ধরনের পরীক্ষা ছাড়াই শিক্ষার্থীরা পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হবে। এ জন্য একটি শিক্ষাবর্ষকে বাতিল না করে শিক্ষাক্রমের অবশিষ্ট অংশকে পরবর্তী শ্রেণিতে সমন্বয় করা যেতে পারে।
আরো পড়ুন- কারিগরি শিক্ষায় ভর্তির হার ৫০ শতাংশে উন্নীত করা হবে
বাংলাদেশ পরীক্ষা উন্নয়ন ইউনিটের উর্ধ্বতন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী বলেন, ‘আমরা বলেছি যে পরবর্তী ক্লাসে শিফট করে দেয়া। যদি প্রমোশন দেয়া হয় কোনো পরীক্ষা ছাড়া আগের ক্লাসের কিছু অধ্যায় পরবর্তী ক্লাসে পড়ানো হবে।’
মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, শিক্ষাবর্ষ প্রায় শেষের দিকে। এ অবস্থায় খুব দ্রুত নিতে হবে সিদ্ধান্ত। সুপারিশগুলোকে শেষ মুহুর্তের যাচাই বাছাই করে শিগগিরই সিদ্ধান্ত জানাবে সরকার।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, ‘কোন সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুললে কি হবে তার একটা ড্রাফট আমাদের দিয়েছে। সেই মতামতগুলোকে আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি।’ জেএসসি এবং জেডিসি পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও নিয়ম প্রযোজ্য হবে। আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুললেও এইচএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতিতে কমপক্ষে ১ মাস সময় নেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
প্রসঙ্গত, করোনার কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। কয়েক দফায় ছুটি বাড়িয়ে এখন তা ৩১ আগস্ট পর্যন্ত করা হয়েছে। ছুটির কারণে এইচএসসি পরীক্ষাও নেয়া যায়নি। গত এপ্রিলে এই পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললেও অন্তত ১৫ থেকে ২০ দিন সময় লাগবে এই পরীক্ষা শুরু হবে।