পরীক্ষা ছাড়াই ফল প্রকাশের বিল সংসদে উত্থাপিত
পরীক্ষা ছাড়া মাধ্যমিক (এসএসসি), উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসএসি) ও সমমানের ফল প্রকাশে পৃথক তিনটি আইন সংশোধনের প্রস্তাব উঠেছে সংসদে। এসব বিল দ্রুত পাস করে ফলাফল প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। দ্রুত ফলাফলের জন্য বিলগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট সংসদীয় কমিটিতে অল্প সময় দিয়ে পাঠানো হয়েছে।
শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, ফল প্রস্তুত রয়েছে। আইন পাশ হলেই তা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হবে। পরীক্ষা না নিয়ে বিকল্প মূল্যায়নের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ এই পাবলিক পরীক্ষার ফল প্রকাশে আইনি জটিলতা দেখা দেয়ায় গেল ১১ জানুয়ারি মন্ত্রিসভায় শিক্ষা বোর্ড সংক্রান্ত তিনটি আইনে সংশোধনীর খসড়া চূড়ান্ত করে সরকার।
মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি) সংসদে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ইন্টারমিডিয়েট অ্যান্ড সেকেন্ডারি এডুকেশন (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল-২০২১, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড (সংশোধন) বিল-২০২১, বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড (সংশোধন) বিল- ২০২১ সংসদে উত্থাপন করেন। পরে ইন্টারমিডিয়েট অ্যান্ড সেকেন্ডারি এডুকেশন বিলটি একদিনের মধ্যে এবং বাকি দুটি দুইদিনের মধ্যে পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।
ইন্টারমিডিয়েট অ্যান্ড সেকেন্ডারি এডুকেশন (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল-২০২১ উত্থাপন নিয়ে সংসদে আপত্তি জানান জাতীয় পার্টির জ্যেষ্ঠ সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম। নিয়ম অনুযায়ী সংসদে উত্থাপনের আগে নোটিশ না পাওয়ায় তিনি আপত্তি জানান। একইসঙ্গে মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিবের বক্তব্য নিয়েও আপত্তি জানান তিনি।
এর জবাবে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, আমার অনুমতি সাপেক্ষেই বিলটি এসেছে। কেননা এর কিছু গুরুত্ব আছে। এই তিনটি বিল আমাদের পাস করে দিতে হবে। সেই বিবেচনায় এই বিলগুলোকে আসার সম্মতি দিয়েছি।
এরপর শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, এই বিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এইচএসসি ফলাফলের জন্য শিক্ষার্থী-অভিভাবক সবাই অপেক্ষা করছেন এবং আমাদের ফলাফল সব প্রস্তুতও আছে। কিন্তু যেহেতু আইনে পরীক্ষা গ্রহণপূর্বক ফলাফল দেবার বিষয়টি ছিল। এবার যেহেতু বৈশ্বিক সঙ্কটের কারণে পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হয়নি। আমরা বিকল্প একটি পদ্ধতিতে আগের দুটি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে এই ফলাফল দিতে যাচ্ছি। সে কারণে বর্তমান আইনটি সংশোধন করার প্রয়োজন দেখা দেয়। সে কারণে এটি আনা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিলটি মন্ত্রিপরিষদে আনার পর বলেছিলাম যেহেতু ১৮ তারিখ সংসদ শুরু হবে, তারপর দ্রুততার সঙ্গে উত্থাপনের চেষ্টা করবো। যেদিন সংসদ পাস করবে, যদি সংসদ পাস করে তারপর আমরা দ্রুততার সঙ্গে ফলাফল দেব। এটি অবশ্যই সংসদের এখতিয়ার। সংসদ কবে পাস করবে তার ওপর নিশ্চয়ই কথা বলবার এখতিয়ার নেই। সংসদের এখতিয়ারের ওপর কারো হাত দেবার সুযোগ নেই। অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় তাই দ্রুততার কথা এসেছে। এটি অত্যন্ত জরুরি। আমাদের বোর্ডের সমস্ত পরীক্ষা এই আইনের অধীনেই হয়। পরে বিলটি পরীক্ষার জন্য সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে প্রেরণ করা হয় এবং একদিনের মধ্যে বিলের রিপোর্ট প্রদান করতে বলা হয়েছে।
পরে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী তার অনুমোদন নিয়ে বিলটি তোলা হয়েছে জানান।
বিল তিনটির উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে মন্ত্রী দীপু মনি বলেন, ‘প্রস্তাবিত আইনে বিশেষ পরিস্থিতিতে অতিমারি, মহামারি, দৈব দুর্বিপাকের কারণে বা সরকার কর্তৃক সময় নির্ধারিত কোনো অনিবার্য পরিস্থিতিতে কোনো পরীক্ষা গ্রহণ, ফল প্রকাশ এবং সনদ করা সম্ভব না হলে সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপিত আদেশ দ্বারা কোনো বিশেষ বছরে শিক্ষার্থীদের জন্য পরীক্ষা ছাড়াই বা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা গ্রহণ করে উক্ত প্রজ্ঞাপনে উল্লিখিত পদ্ধতিতে মূল্যায়ন এবং সনদ প্রদানের জন্য নির্দেশনা জারি করার বিষয় উল্লেখ রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত বছরের অক্টোবরের শুরুর দিকে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি জানান, পঞ্চম ও অষ্টমের সমাপনীর মতো এইচএসসি-সমমানের পরীক্ষাও নেওয়া যাচ্ছে না। এসব শিক্ষার্থীর জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে এইচএসসির মূল্যায়ন করা হবে।
২০২০ সালে ১১টি শিক্ষা বোর্ডের ১৩ লাখ ৬৫ হাজার ৭৮৯ জন শিক্ষার্থীর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। ২০২০ সালের ১ এপ্রিল থেকে এই পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনাভাইসের সংক্রমণের কারণে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়।