প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের প্রশ্নফাঁসে প্রশ্নবিদ্ধ শিক্ষক নিয়োগ প্রথম ধাপের পরীক্ষা
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস হয়েছে। ১ম ধাপের এই শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় বিভিন্ন জেলায় প্রশ্নফাঁসের খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে প্রশ্ন ফাঁশ কারী সংগঠনের বেশ কয়েকজন কে আটক করা হয়েছে।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়ম ঠেকাতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক তৎপরতা সত্ত্বেও শেষ রক্ষা হয়নি। পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রশ্ন ফাঁস ও ব্যাপক অনিয়মের মধ্যে। গতকাল শুক্রবার পরীক্ষা শুরুর আগে এবং পরীক্ষা চলাকালীন প্রশ্ন ফাঁস ও অনিয়মের অভিযোগে চার জেলা থেকে আটক করা হয়েছে ৩৯ জনকে। উদ্ধার করা হয়েছে অনিয়মে ব্যবহূত ইলেকট্রনিক ডিভাইসসহ নানা সরঞ্জাম।
আরো পড়ুন-সরকারি প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ লিখিত পরীক্ষার সময়সূচি ২০২২
পরীক্ষার্থীসহ আটকদের মধ্যে রয়েছেন পুলিশের এএসআই, ব্যাংক ম্যানেজার এবং শিক্ষক। প্রশ্ন ফাঁস ও অনিয়মের এসব ঘটনায় নিয়োগ পরীক্ষা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বলে মনে করেন সংশ্নিষ্ট অনেকে। সাতক্ষীরা, পাবনা, লক্ষ্মীপুর ও পটুয়াখালী থেকে তাদের আটক করা হয়। তাদের মধ্যে ২১ জনকে দুই বছর করে এবং একজনকে এক মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে। সংশ্নিষ্ট অফিস ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
আরো পড়ুন-সরকারি প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রবেশপত্র ডাউনলোড
সাতক্ষীরা: পরীক্ষা শুরুর আগে শুক্রবার সকালে প্রশ্নফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে দুই উপজেলা থেকে ২৯ জনকে আটক করে র্যাব। র্যাব-৬-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল সৈয়দ নুর সালেহীন জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কলারোয়া থানার পাশে সোনালি সুপারমার্কেট এলাকায় অভিযান চালিয়ে সাত নারীসহ ২৮ জনকে আটক করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তালা উপজেলার ধানদিয়া এলাকা থেকে আব্দুল হালিম নামের ওই চক্রের আরেক হোতাকে আটক করা হয়। তাদের মধ্যে ২১ জনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দুই বছরের সাজা দেওয়া হয়। এ ছাড়া আটক আট অভিভাবককে ছেড়ে দেওয়া হয়। চক্রটির কাছ থেকে উদ্ধার করা প্রশ্নপত্রটির সঙ্গে মূল প্রশ্নের হুবহু মিল পাওয়া গেছে।
সংশ্নিষ্টরা জানান, র্যাবের অভিযানে কলারোয়া থেকে গ্রেফতার হওয়া ২৯ জনের মধ্যে পরীক্ষার্থীর পাশাপাশি রয়েছে প্রশ্ন ফাঁস চক্রের পাঁচ হোতা। তারা হলো কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা থানার পরানখালী গ্রামের আব্দুল হালিম, সাতক্ষীরার কলারোয়ার ঝাপাঘাটা গ্রামের আব্দুল আজিজের ছেলে জনতা ব্যাংকের ম্যানেজার আফতাবুজ্জামান ও আব্দুল আলিমের ছেলে শিক্ষক আমিরুল ইসলাম, আশাশুনি উপজেলার চেউটিয়া গ্রামের আব্দুল ওহাবের ছেলে কৃষি ব্যাংক ম্যানেজার মনিরুল ইসলাম ও কাকবাশিয়া গ্রামের রইছ উদ্দীনের ছেলে শিক্ষক তরিকুল ইসলাম।
পটুয়াখালী: স্ত্রীকে নকল সরবরাহ করতে গিয়ে আটক হয়েছেন পুলিশ সুপার কার্যালয়ে দায়িত্বরত এএসআই মাহবুবুর রহমান। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাকে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। সংশ্নিষ্টরা জানান, জেলা শহরের রশিদ কিশলয় বিদ্যায়তন কেন্দ্রে প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন এএসআই মাহবুবুর রহমানের স্ত্রী। পরীক্ষা শুরুর কিছুক্ষণ পর মাহবুব পুলিশের পোশাক পরে ওই কেন্দ্রে ঢুকে স্ত্রীকে উত্তরপত্র সরবরাহ করেন। বিষয়টি দায়িত্বরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উম্মে হাবিবার চোখে পড়লে এএসআই মাহবুবকে হাতেনাতে আটক করা হয়। খবর পেয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নুরুল হাফিজ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) জিয়াউর রহমান ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) জসিম উদ্দিন ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। পরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে দুপুর ১২টার দিকে নকল সরবরাহ করার দায়ে মাহবুবুর রহমানকে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উম্মে হাবিবা। এ ব্যাপারে পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
পাবনা: প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে অনিয়ম করতে গিয়ে পুলিশের হাতে আটক হয়েছে আটজন। পাবনার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস জানান, গতকাল পরীক্ষা শুরুর পর পাবনা শহরের শুভ ছাত্রাবাসে অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন সরঞ্জামসহ চার বহিরাগত যুবককে আটক করে পুলিশ। তারা হলো পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার শাকিব উদ্দিন, আব্দুস সোবাহান, চাটমোহরের আনোয়ার হোসেন ও সানাউল্লাহ সানি। এ ছাড়া পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের অভিযোগে সরকারি এডওয়ার্ড কলেজসহ বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে চার পরীক্ষার্থীকে আটক করা হয়।
লক্ষ্মীপুর: মোবাইল ফোনে প্রশ্নপত্রের ছবি থাকায় সোলায়মান নামে এক পরীক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে। লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক অঞ্জন চন্দ্র পাল জানান, ওই পরীক্ষার্থীকে তল্লাশি করে প্রশ্নপত্রের আলামত পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পুলিশ জানায়, গতকাল সকাল ১১টার দিকে লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজ কেন্দ্র থেকে সোলায়মানকে আটক করা হয়। তার মোবাইল ফোনে থাকা প্রশ্নপত্রটির সঙ্গে মূল প্রশ্নের পুরোপুরি মিল রয়েছে। সোলায়মান সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জের আব্দুল করিমের ছেলে। জিজ্ঞাসাবাদে সে জানিয়েছে, জাহিদ নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে সে প্রশ্নটি কিনেছে।