এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে সমন্বয়ক বোর্ডের সভায় যে সিদ্ধান্ত হল
আন্তঃশিক্ষা সমন্বয়ক বোর্ডের সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক গণমাধ্যমকে বলেছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার ১৫ দিন পর এইচএসসি পরীক্ষা নিতে আমরা প্রস্তুত আছি। পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) আন্তঃশিক্ষা সমন্বয়ক বোর্ডের সভায় উপস্থিত হয়ে বোর্ড চেয়ারম্যানরা এমন সিদ্ধান্ত নেন বলে তিনি জানান।
তবে, সংবাদ সম্মেলনে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার বিষয়ে কোনো কথাই বলেননি তিনি। বৈঠকে এইচএসসি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হবে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে যে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব কমিটির চেয়ারম্যান ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জিয়াউল হক।
আরো পড়ুন- অক্টোবর-নভেম্বরে হচ্ছে ‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেলের পরীক্ষা
বৈঠক শেষে তিনি বলেন, এটা আমাদের নর্মাল মিটিং ছিল। কে বলেছে এ সভায় পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করবো? আমরা এখানে পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করবো না। তিনি আরও বলেন, ‘এ ধরনের সংবাদে আমরা বিব্রতকর অবস্থায় পড়ি। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীরাও বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়ে যায়। আমরা সিদ্ধান্ত নিলে সবার আগেই মিডিয়াকেই জানাই।’
জিয়াউল হক আরো বলেন, স্কুল খোলার মতো পরিবেশ সৃষ্টি হলে সামনাসামনি মূল্যায়নের মাধ্যমে অন্য ক্লাসে উত্তীর্ণ করা হবে। এক্ষেত্রে অটো প্রমোশন বলতে কিছু নেই। শিক্ষার্থীদের সব শিক্ষকই চেনেন। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর মেধা মূল্যায়ন করেই অন্য ক্লাসে উত্তীর্ণ করবেন। মূল্যায়নের ক্ষেত্রে ক্লাস, সংসদ টিভির ক্লাস ও অনলাইনের ক্লাসকে প্রাধান্য দেয়া হবে।
অষ্টম থেকে নবমে অটো প্রমোশন হবে না, যে কোনো পদ্ধতিতেই মূল্যায়ন হবে। এছাড়া পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণীর বিষয়ে মাউশি থেকে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। ইলেভেন থেকে টুয়েলভ ক্লাসের বিষয়ে তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নিজস্ব মূল্যায়ন পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে তুলে দেবে।
বৈঠক সূত্র জানায়, জেএসসি পরীক্ষা নেয়া সম্ভব না হলে নিজস্ব পদ্ধতিতে মূল্যায়নের ক্ষেত্রে বছরের প্রথম আড়াই মাসের ক্লাস কার্যক্রম, সংসদ টেলিভিশন ও অনলাইনে ক্লাস কার্যক্রমের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হবে। যে প্রতিষ্ঠান যতটুকু পড়াতে পেরেছে, ততটুকুর ভিত্তিতে মূল্যায়ন হবে। এ ব্যাপারে শিক্ষা বোর্ড শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে গাইডলাইন দেবে।
আরো পড়ুন- অটো প্রোমোশন বলতে কিছু নেই, মূল্যায়ন হবেই: বোর্ড চেয়ারম্যান
সিলেবাসের কতটুকু বা কোন অংশ পড়ানো হবে সেটি নির্ধারণে বাংলাদেশ পরীক্ষা উন্নয়ন ইউনিটকে (বেডু) দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। গাইডলাইন তৈরির ক্ষেত্রে অষ্টম শ্রেণিতে সিলেবাসের যে অংশটুকু পড়ানো সম্ভব হবে না তার প্রয়োজনীয় অংশটুকু নবম শ্রেণিতে পড়ানোর নির্দেশনা থাকবে। এ নির্দেশনা পাঠানো হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে।
যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধাপক মো. আব্দুল আলীম বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে কী কী পদ্ধতিতে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে সেসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। পরীক্ষা নেওয়ার জন্য প্রশ্ন ও উত্তরপত্র প্রস্তুত রয়েছে। কবে পরীক্ষা নেওয়া হবে সরকার সিদ্ধান্ত ঘোষণা দিলে আমরা পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে সব প্রস্তুতি শেষ করতে পারব।
তিনি আরো বলেন, এখন পাবলিক পরীক্ষা আগের মতো নেয়া সম্ভব নয়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে এক বেঞ্চে একজন বা দুজন করে পরীক্ষার্থী বসানো হবে। পরীক্ষা কেন্দ্র স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে এ পরীক্ষা আয়োজন করা হবে। সব শিক্ষা বোর্ডগুলোকে পরীক্ষা সংক্রান্ত প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।
আরো পড়ুন- স্বাস্থ্যবিধি মেনে এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তুতি সম্পন্ন
বৈঠকের বিষয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ উপপরিদর্শক রবিউল আলম বলেন, ‘চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষা কীভাবে আয়োজন করা যায় সেই বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বৈঠকে। এখানে সব বোর্ডের চেয়ারম্যানরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ১ এপ্রিল থেকে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরুর কথা ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে তা স্থগিত করা রয়েছে। তবে কওমি মাদরাসা খুলে দেয়া হলেও অন্যসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আগামী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করা আছে। এবছর ১৩ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে।