বঙ্গবন্ধু ছিলেন স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা মন্ত্রের এক শিল্পী ও বিজ্ঞানী
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মাে. মশিউর রহমান বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু একজন রাজনীতির কবি ছিলেন না, তিনি ছিলেন স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা মন্ত্রের এক শিল্পী ও বিজ্ঞানী। আজ সােমবার (৭মার্চ) রাজধানীর প্রেসক্লাবে বঙ্গবন্ধু পরিষদ আয়োজিত ৭ই মার্চ উপলক্ষে আলােচনা সভায় এসব কথা বলেন উপাচার্য।
তিনি বলেন, ‘৭ই মার্চের আলােচনা আমরা এরআগেও করেছি। এই জাতীয় আলােচনার মাধ্যমে আমরা আমাদের চেতনাকে শাণিত করতে পারি। এই সব আলােচনার আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে- আমরা যেন আমাদের আগামী প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানাতে পারি।
উপাচার্য আরও বলেন, “কতটা নির্লজ্জভাবে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর সামরিক বাহিনী ক্ষমতায় এসেছিল। অগণতান্ত্রিক সামরিক বাহিনী শাসনামলে ৭ই মার্চের ভাষণ বন্ধ ছিল। কারণ বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠ শুনলে সামরিক শাসন স্তদ্ধ হয়ে যাওয়ার কথা সেকারণে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ সেদিন বাজাতে দেয়া হয়নি। অথচ সেই ভাষণটিই আজ ইউনে্ধো ‘বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিল। কেন দিল? এই ভাষণ কি শুধু বাঙালির মুক্তির পথ নির্দেশনা? এটি কি শুধু বাঙালির জন্য অনুপ্রেরণা? এটি কি শুধু উপমহাদেশের অমােঘ বাণী। এটি কি শুধু জাতিরাষ্ট্র সৃষ্টির একটি নির্দেশনা? মােটেও তা নয়। এটি একটি জাতিরষ্ট্র সৃষ্টির চাইতেও বড় কিছু। ৭ই মার্চের ভাষণ সারাবিশ্বের মানুষের জন্য একটি নতুন শব্দ। যেটা গণতন্ত্র এবং রাষ্ট্র সৃষ্টির মন্ত্রণা দেয়।
যারা বলেন- ৭ই মার্চে বঙ্গবন্ধু কেন সরাসরি স্বাধীনতার ঘােষণা দিলেন না। যারা সমালােচনা করে তারা অজ্ঞতার জন্য করে। ২৬শে মার্চ যা বলেছেন বঙ্গবন্ধু, তা যদি ৭ই মার্চের ভাষণে বলতেন, তাহলে বাংলাদেশ জাতিরাষ্ট্র সৃষ্টি হতাে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। ৭ই মার্চের ভাষণে যে প্রস্তুতির নির্দেশ দেয়ার প্রয়ােজন ছিল সেটি তিনি দিয়েছেন। বলেছেন, ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তােলাে। ৭ই মার্চ কোটি কোটি মানুষের সামনে ক্রেডিট নেয়ার জন্য আবেগে অনেক কিছুই বলে দিতে পারতেন বঙ্গবন্ধু। কিন্তু তিনি তা করেননি। কেন তিনি কৌশলী হলেন? কারণ তিনি চেয়েছিলেন পাকিস্তানকে পরাস্ত করতে। তিনি বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা হননি। তিনি চেয়েছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানকে রাজনৈতিকভাবে নস্যাৎ করতে। আর তারা চেয়েছিল বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ সৃষ্টির সম্ভাবনাকে নস্যাৎ করতে।
৭ই মার্চের ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ তুলে ধরে উপাচার্য বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ইউনিলেটারেল ডিকলারেশন অব ইন্ডিপেনডেন্স এ যেতে চাননি। তিনি যদি ৭ই মার্চের ভাষণে স্বাধীনতার ঘােষণা দিতেন, তাহলে বিশ্ববাসীর সমর্থন পেতাম কিনা তা এক বড় প্রশ্ন ছিল। এটিই তাঁর রাজনৈতিক দূরদর্শিতা। এ কারণেই তিনি রাজনীতির কবি। তানাহলে কেমন করে একজন মানুষ নির্দেশ দিচ্ছেন অফিস-আদালত বন্ধ থাকবে। আর পরক্ষণেই তিনি বললেন রিক্সা চলবে। এটিই হচ্ছে রাজনীতির বিজ্ঞান। এখানেই তিনি স্বতন্ত্র। তিনি একদিকে বলেছেন সব কিছু বন্ধ থাকবে, অন্যদিকে গরিব মানুষের কথা চিন্তা করে বলেছেন রিক্সা চলবে। তিনি যে সারাজীবন গরীব, দুঃখী, মেহনতী মানুষের জন্য লড়াই সংগ্রাম করেছেন এটি তারই বহিঃপ্রকাশ।
বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি ডা. এস এ মালেকের সভাপতিত্বে আলােচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য ও প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শফিকুর রহমান, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. কামাল উদ্দিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এ জে শফিউল আলম ভূঁইয়া, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. আশফাক হােসেন, বঙ্গবন্ধু পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান লাল্টু প্রমুখ।