প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পাল্টে যাচ্ছে শিক্ষাক্রম। বিষয় ও পরীক্ষা কমিয়ে বইয়ে আনা হচ্ছে পরিবর্তন। প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা এক বছরের পরিবর্তে দুই বছর হবে। দশম শ্রেণির আগে কোনো পাবলিক পরীক্ষা থাকবে না। একজন শিক্ষার্থী বিজ্ঞান, মানবিক নাকি ব্যবসায় শিক্ষায় পড়বে, সেটি ঠিক হবে উচ্চমাধ্যমিকে গিয়ে, যা এখন নবম শ্রেণিতে হয়।
এভাবে দেশের প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষাক্রমে বড় পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ জন্য বিদ্যমান শিক্ষাক্রম পরিমার্জন করে নতুন শিক্ষাক্রম তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে বলেছেন, নতুন শিক্ষাক্রম ২০২২ সাল থেকে বাস্তবায়ন শুরু হবে।
বর্তমানে এসএসসি ও এইচএসসি ছাড়াও পঞ্চম শ্রেণি শেষে প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী এবং অষ্টম শ্রেণি শেষে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা হয়। নতুন শিক্ষাক্রমে এসব পরীক্ষার বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। এনসিটিবির একজন কর্মকর্তা বলেন, তাঁরা দশম শ্রেণির আগে কোনো পাবলিক পরীক্ষা না নেওয়ার কথা বলেছেন। আগের শিক্ষাক্রমেও এমনটি ছিল। কিন্তু সরকার নির্বাহী আদেশে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী এবং জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা নিচ্ছে।
এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় শিক্ষানীতি, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টসহ (এসডিজি) বিভিন্ন বিষয় বিবেচনায় নিয়ে নতুন শিক্ষাক্রম করা হচ্ছে। আগামী জানুয়ারি থেকে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের কথা থাকলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে এক বছর পেছানো হয়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বলেন, নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী আগামী জুনের মধ্যে নতুন বই প্রণয়নের কাজ শেষ করা হবে। এরপর ২০২২ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে নতুন বই দেওয়া শুরু হবে।
অবশ্য শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর আগে ২০১০ সালে করা জাতীয় শিক্ষানীতির অনেক বিষয় এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামর্থ্য, শিক্ষকদের যোগ্যতাসহ সবকিছু বিবেচনা করে শিক্ষাক্রমে পরিবর্তন আনতে হবে।
নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জও আছে বলে মনে করেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কেউ কেউ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উচ্চপর্যায়ের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমান সময়ের বাস্তবতা এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয় মাথায় নিয়ে এ শিক্ষাক্রম করা হচ্ছে। এটি বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ আছে। তবে সবার সহযোগিতায় এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করতে চান তাঁরা।
সর্বশেষ ২০১২ সালে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিকের শিক্ষাক্রম পরিমার্জন করা হয়েছিল, যা এখন চলছে। সাধারণত পাঁচ বছর পরপর শিক্ষাক্রম পরিমার্জন করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে শিক্ষাক্রম প্রণয়নের কাজটি করছে এনসিটিবি।
সূত্রঃ প্রথম আলো