তিন পদ্ধতিতে এসএসসি পরীক্ষা নেয়ার প্রস্তাব
করোনা পরিস্থিতির কারণে ভিন্ন পদ্ধতিতে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা নিতে চায় শিক্ষা বোর্ডগুলো। এ জন্য তিনটি পদ্ধতি নির্বাচন করা হয়েছে। একটি অনলাইনের মাধ্যমে পরীক্ষা নেয়া, অপরটি সমমান দুই বিষয়কে একত্রিত করে বিষয় কমিয়ে সশরীরে পরীক্ষা নেয়া, আর শুধু বিভাগভিত্তিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের পরীক্ষা নেয়া।
তবে প্রথমে অনলাইনে প্রতিটি বিদ্যালয়ে নিজস্ব পদ্ধতিতে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস শেষ করে একটি টেস্ট পরীক্ষা আয়োজন করতে বলা হবে। তাতে সফল হলে উল্লেখিত তিন প্রস্তাবের যেকোনো একটি পদ্ধতিতে এসএসসি পরীক্ষা আয়োজন করা হতে পারে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এসব প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। প্রস্তাবগুলো চূড়ান্ত করবে মন্ত্রণালয়।
আন্তঃশিক্ষা সমন্বয়ক বোর্ড থেকে জানা যায়, চলমান করোনা পরিস্থিতির মধ্যে ২০২১ শিক্ষাবর্ষের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা ঝুঁকিমুক্তভাবে কীভাবে আয়োজন করা যায়, সে সংক্রান্ত প্রস্তাবনা তৈরিতে আন্তঃশিক্ষা সমন্বয় বোর্ডের সভাপতি অধ্যাপক নেহাল আহমেদকে সমন্বয়ক করে ১১ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটিতে রয়েছেন-ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, বুয়েট শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের একজন সদস্য, একাধিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, টেলি কমিউনিকেশনের প্রতিনিধি, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড এবং মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, এসএসসি পরীক্ষা নেয়ার বিষয়ে তারা একাধিক বাস্তবসম্মত প্রস্তাব তৈরি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন। মন্ত্রণালয় থেকে যে প্রস্তাব চূড়ান্ত করবে সেটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষা আয়োজন করা হবে। মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) এ কমিটি ভার্চুয়ালি একটি বৈঠক করে।
কমিটির একাধিক সদস্যের কাছ থেকে জানা যায়, সভায় অনলাইনসহ তিনটি পদ্ধতিতে চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষা নেয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন কমিটির সদস্যরা। সে জন্য সকল বিদ্যালয় অনলাইনে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস শেষ করবে। সিলেবাস শেষ হলে শিক্ষার্থীদের একটি টেস্ট পরীক্ষা নেয়া হবে। তাতে সফল হলে অনলাইনের মাধ্যম এ পরীক্ষার আয়োজন করা, পরীক্ষার্থীর সমমান দুই বিষয়কে একত্রিত করে বিষয় কমিয়ে সশরীরে পরীক্ষা নেয়া এবং বিজ্ঞান, বাণিজ্য ও মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের শুধু বিভাগভিত্তিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের পরীক্ষা আয়োজন করতে বলা হবে। যে কয়টি বিষয়ের উপর পরীক্ষা নেয়া হবে তার ভিত্তিতে জিপিএ-৫ নির্ধারণ করে সার্টিফিকেট দেয়ার প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
তবে সকল কিছু চূড়ান্ত করার আগে পরীক্ষামূলক কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাইলটিং করা হবে। তাতে সফলতা আসলে সেটি সকল বোর্ডের আওতাভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে কার্যকর করা হবে।
জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা আয়োজনে একাধিক প্রস্তাব তৈরি করা হচ্ছে। তার মধ্যে অনলাইনে পরীক্ষা নেয়াকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এ জন্য দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইন্টারনেট স্থাপন, শিক্ষার্থীদের হাতে ডিভাইস পৌঁছে দেয়া, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে সুপারিশ করা হবে।
সেটি সম্ভব না হলে দ্বিতীয় প্রস্তাব হিসেবে বিষয় কমিয়ে পরীক্ষা আয়োজন করার প্রস্তাব দেয়া হবে। তাতে সংযুক্ত বিষয় কমিয়ে একটি করা হবে। যেমন বাংলা প্রথমপত্র ও দ্বিতীয় পত্রের দু’টি পরীক্ষা না নিয়ে একটি পরীক্ষা নেয়া হবে। এভাবে ৫ থেকে ৭টি পরীক্ষা নেয়া হতে পারে। তবে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে কেন্দ্র বাড়িয়ে এ পরীক্ষা নেয়া হবে।
তৃতীয় প্রস্তাবে দেখা গেছে, বিজ্ঞান, বাণিজ্য ও মানবিক বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নির্বাচন করে শুধু সেগুলোর পরীক্ষা নিতে বলা হবে। যেমন বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীর জন্য রসায়ন, পদার্থ বিজ্ঞান ও জীব বিজ্ঞান পরীক্ষা নিয়ে জিপিএ নির্ধারণ করে এসএসসির সার্টিফিকেট দেয়ার প্রস্তাব করা হবে। এভাবে কমন বিষয়গুলো বাদ দিয়ে মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগের বিষয়ভিত্তিক পরীক্ষা নিতে প্রস্তাব করা হবে।