স্কুল-কলেজ খুলছে কাল, দেশে উৎসবের আমেজ
করোনা পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘ ১৮ মাস বন্ধ থাকার পর কাল রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) থেকে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শুরু হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের বরণ করে নিতে নানা আয়োজন শুরু করেছেন শিক্ষকরা।
আরো পড়ুন- করোনা সংক্রমণ বাড়লে ফের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হবে: শিক্ষামন্ত্রী
দীর্ঘদিন পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান কার্যক্রম শুরু হওয়ায় নানা ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে রাজধানীর স্কুল-কলেজগুলো। বড় বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা তাদের শিক্ষার্থীদের বরণ করতে নানা আয়োজন শুরু করেছেন। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে রীতিমতো উৎসবের আয়োজন করে শিক্ষার্থীদের বরণ করে নেওয়া হবে।
নিজ প্রতিষ্ঠানের ছাত্রীদের বরণ করে এ দিন পাঠদান শুরু করবেন ভিকারুননিসা নূন স্কুলের শিক্ষকরা। প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকরা জানান, ক্লাসের প্রথম দিন আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষার্থীদের বরণ করে নেবেন তারা। বেইলি রোড, আজিমপুর, ধানমন্ডি ও বসুন্ধরায় ভিকারুননিসার চারটি শাখার প্রবেশপথের সব ফটক বেলুন ও কাগজ দিয়ে সাজানো হবে। তিন ফুট দূরত্ব রেখে শিক্ষকরা গেটের সামনে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়াবেন। ছাত্রীরা যখন প্রবেশ করবে, শিক্ষকরা করতালি ও ড্রাম বাজিয়ে সংবর্ধনা ও শুভেচ্ছা জানিয়ে তাদের ভেতরে প্রবেশ করানো হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার রাজধানীর উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি ক্লাসরুম সাজানো হয়েছে বেলুন ও রঙিন কাগজ দিয়ে। নিজেদের চেনা ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের অভ্যর্থনা জানানো হবে চকলেট ও ফুল দিয়ে। এর পাশাপাশি রাখা হয়েছে আইসোলেশন রুম সুবিধাসহ স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নানান পদক্ষেপ।
এদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার খবরে শিক্ষা সরঞ্জাম কেনার পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক পোশাক (স্কুল ড্রেস) বানাতে ব্যস্ত সময় যাচ্ছে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের। বিশেষ করে খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানগুলোর ড্রেস বানিয়ে থাকে, এমন দর্জি দোকান বা টেইলার্সে দেখা যাচ্ছে বেশি ব্যস্ততা।
তবে দীর্ঘ সময় পরে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে যেতে নির্দিষ্ট পোশাক নিয়ে স্কুলগুলোতে তেমন কড়াকড়ি থাকবে না। রাজধানীর নেভি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, স্যার জন উইলসন স্কুল, সেন্ট যোসেফ হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান সাধারণ শোভন পোশাকে শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে পারবে বলে নোটিশ দিয়েছে।
এদিকে দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষাব্যবস্থায় বড় ধরনের সংকট দেখা দিয়েছে। বছরের শুরুতে এসএসসি ও এইচএসসি এবং সমমানের পরীক্ষা আয়োজনের কথা থাকলেও এখনও তা সম্ভব হয়নি। এছাড়া অন্যান্য পাবলিক পরীক্ষার আয়োজন করলেও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এসব বিষয় বিবেচনা করে আগামীকাল থেকে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
গত ৫ সেপ্টেম্বর উচ্চপর্যায়ের সভা শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে শিক্ষামন্ত্রী গণমাধ্যমকে বলেন, আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শুরু হবে। প্রথম দিন চার-পাঁচ ঘণ্টা ক্লাস হবে। পর্যায়ক্রমে এই ক্লাসের সংখ্যা বাড়বে। শ্রেণিকক্ষে পাঠদানকালে শিক্ষার্থী-শিক্ষকসহ সবাইকে মাস্ক পরিধান করতে হবে।
পরে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই) থেকে আলাদাভাবে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনাসহ বেশ কিছু সতর্কতা ও সচেতনতামূলক নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
এদিকে আজ ১১ সেপ্টেম্বর (শনিবার) সকালে জামালপুর সার্কিট হাউজে সাংবাদিকদের শিক্ষামন্ত্রী ডা দীপু মনি বলেন, দীর্ঘ ১৭ মাস পর রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) থেকে খোলা হচ্ছে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। স্বাস্থ্যবিধি মেনে পাঠদান করলে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ার সম্ভাবনা কম। তারপরও সংক্রমণ বেড়ে যাবার আশঙ্কা দেখা দিলে প্রয়োজনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ফের বন্ধ করে দেওয়া হবে।
শিক্ষামন্ত্রী জানান, দীর্ঘদিন শ্রেণিকক্ষে পাঠদান বন্ধ থাকলেও পড়াশুনা বন্ধ ছিল না। টেলিভিশন ও অনলাইনের মাধ্যমে পড়াশুনা চালানো হয়েছে। কোন শিক্ষার্থী বা তার পরিবারের কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে বা উপসর্গ থাকলে তাদেরকে বিদ্যালয়ে না পাঠানোর অনুরোধও জানান তিনি। বছরের শেষভাগে এসএসসি ও এইচএসসির পাশাপাশি পঞ্চমের প্রাথমিক সমাপনী, অষ্টমের জেএসসি-জেডিসি এবং প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের বার্ষিক পরীক্ষা নেয়ারও পরিকল্পনার কথা জানান তিনি।
উল্লেখ্য, মহামারীর শুরুতে গত বছরের ১৭ মার্চ দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। প্রায় দেড় বছর পর আগামী রোববার থেকে আবার সব স্কুল কলেজ খুলে দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে এখন। বছরের শেষভাগে এসএসসি ও এইচএসসির পাশাপাশি জেএসসি-জেডিসি, পঞ্চমের প্রাথমিক সমাপনী, প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়ারও পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।