হেবা বা দান দলিল বাতিলের নিয়ম
মুসলিম আইন । হেবা বা দান দলিল বাতিলের নিয়ম
হেবা দলিল বাতিল করার নিয়ম জানার আগে জেনে নেই হেবা বা দান কি? হেবা বা দাঁন দলিল বাতিলের নিয়ম
হেবা বা দান কাকে বলে?
এটি মূলত এমন এক ধরনের হস্তান্তর পদ্ধতি যার মাধ্যমে মালিকানার পরিবর্তন ঘটে এবং অন্য ব্যক্তির বরাবরে মালিকানার স্বত্ব সৃষ্টি করে তাকে মূলত হেবা বা দান বলা হয়।
হেবা বা দান সম্পাদনের ক্ষেত্রে উপাদান সমূহ-
(১) দাতাকে জীবিত থাকার মধ্যে দান কার্য সম্পন্ন করতে হবে; কারণ হেবা বা দান গ্রহণের আগেই দাতা মৃত্যুবরন করলে দানটি বাতিল বলে গণ্য হবে।
(২) সম্পত্তি হেবা বা দান করার সময় উক্ত সম্পত্তিতে দাতার মালিকানা ও দখল থাকতে হবে।
(৩) সম্পত্তিটির দাতাকে সুস্থ মস্তিস্কসম্পন্ন ও সাবালক হতে হবে এবং উক্ত দানটি দাতা কর্তৃক স্বেচ্ছায় হতে হবে।
(৪) দান গ্রহীতা মানসিক ভারসাম্যহীন বা নাবালক হলে তার পক্ষে গ্রহীতার অভিভাবক দানটি গ্রহন করতে পারবেন।
হেবা বা দান দলিল বৈধ হওয়ার শর্তবলী-
ক. দাতা কর্তৃক দানের (ইজাব) ঘোষণা প্রদান করতে হবে।
খ. হেবা গ্রহীতা বা তার পক্ষ হতে দান গ্রহন /(কবুল) করতে হবে।
গ. গ্রহীতাকে দানকৃত সম্পত্তির দখল হস্তান্তর প্রদান করতে হবে।
দখল হস্তান্তরের পূর্বে হেবা দলিল বাতিল করা যায় এবং হেবা/দান গ্রহণের পূর্বে গ্রহীতা মারা গেলে দানটি বাতিল হয়ে যায়।
হেবা দলিল বাতিল করা যাবে না কখন ?
(১) হেবা বা দানকৃত সম্পত্তিটির হস্তান্তর দাতা ও গ্রহীতা স্বামী বা স্ত্রী হলে।
(২) হেবা গ্রহীতা মৃত্যূবরণ করলে।
(৩) হেবার দাতা ও গ্রহীতার মধ্যে বিবাহের অযোগ্য কোন সম্পর্ক থাকলে।
(৪) হেবা বা দানকৃত সম্পত্তি গ্রতীতা কর্তৃক বিক্রি বা হস্তান্তর করা হল।
(৫) হেবা বা দানকৃত সম্পত্তিটি ধ্বংস হয়ে গেলে।
(৬) হেবাকৃত সম্পত্তির মূল্য আকস্মিক বেড়ে গেলে।
হেবা বা দানকৃত দলিলের মাধ্যমে প্রাপ্ত সম্পত্তি কি বিক্রয়যোগ্য ?
হেবা অথবা দানকৃত জমি বা সম্পত্তি তার গ্রহীতা তা প্রাপ্ত হবার পর যে কোন সময় যেকোন ভাবেই হস্তান্তর করতে পারবে অথবা বিক্রি করতে পারবে।
কানাডায় জব না ইমিগ্রেশন কোনটি আগে দরকার?
কেউ কি তার পুরো সম্পত্তি হেবা বা দান করতে পারবে?
একটি উদাহরন দেয়া যাক ধরুন, জনাব আশরাফ সাহেব এর একটি মাত্র মেয়ে আছে। তাছাড়া তাঁর আর কোনো সন্তান নেই । তাঁর মেয়ে একটি কলেজে লেখাপড়া করেন। আশরাফ সাহেব তাঁর সকল সম্পত্তি মেয়েকে দিয়ে যেতে মনস্থ করলেন।
আশরাফ সাহেবের দুই ভাই এবং তার দুই ভাইয়ের ছেলেরা ও জীবিত রয়েছে কিন্তু আশরাফ সাহেব এর ভাই কিংবা ভাইয়ের ছেলেরা আশরাফ সাহেবের সম্পত্তির অংশীদার হোক, এটি আশরাফ সাহেব মোটেও চান না, এখন তিনি কী করবেন?
‘‘তবে কি আশরাফ সাহেব জীবিতাবস্থায় তাঁর একমাত্র মেয়েকে তার পুরো সম্পত্তি দান করে দিতে পারবেন কি?’’
মুসলিম আইনে দানকে হেবা বলা হয়ে থাকে। এই আইন অনুযায়ী, আশরাফ সাহেব জীবিত অবস্থায় তাঁর পুরো সম্পত্তি মেয়েকে দান করে যেতে পারবেন।
হেবা বা দান কীভাবে করতে হয়?
সম্পত্তি বিক্রয়ের ক্ষেত্রে টাকার বিনিময় হবে, কিন্তু সম্পত্তি দানের ক্ষেত্রে এই ধরনের বিনিময় হবে না। হেবা বা দান করতে হলে দাতা ও গ্রহীতা উভয়ের সম্পূর্ণ ইচ্ছাশক্তি এবং সম্মতি থাকতে হয়।
হেবা বা দান এর নুন্যতম শর্তসমূহ-
হেবা বা দানকারীকে অবশ্যই দানের ঘোষণা দিতে হবে; যে ব্যক্তিকে সম্পত্তি হেবা বা দান করা হচ্ছে অর্থাৎ হেবা গ্রহীতাকে অবশ্যই উক্ত সম্পত্তিটি গ্রহণ করতে হবে। পরবর্তীতে যে শর্ত তা হলো হেবাকৃত সম্পত্তিটির দখল তার গ্রহীতাকে সঙ্গে সঙ্গে অথবা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই হস্তান্তর করতে হবে।
সম্পত্তি অপ্রাপ্তবয়স্ক বা নাবালক ব্যক্তিকেও দান করা যায় কিন্তু সম্পত্তি হস্তান্তর করা যাবে না, যত দিন পর্যন্ত না উক্ত সম্পত্তি গ্রহীতা প্রাপ্তবয়স্ক হয়।হেবা/দানের ক্ষেত্রে বৈধ অভিভাবককে উক্ত সম্পত্তি হস্তান্তর করতে হবে এবং পরবর্তী সময়ে নাবালক ব্যক্তি প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর উক্ত সম্পত্তি হস্তান্তর করতে পারবে বা করতে হবে।
মোঃ শরিফুল ইসলাম
লেকচারার, গাজীপুর সেন্ট্রাল ল’ কলেজ