জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শ । বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শ । বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার নিভৃত পল্লিতে এক সম্ভান্ত পরিবারে ১৭ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
বঙ্গবন্ধু জীবনব্যাপী একটিই সাধনা করেছেন, বাঙালির মুক্তির জন্য নিজকে উৎসর্গ করা। ধাপে ধাপে প্রতিটি সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ’৪৮ থেকে ’৫২ রাষ্ট্রভাষা বাংলার জন্য আন্দোলন, ’৫০ থেকে ’৫৪ জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ, ’৫৪ থেকে ’৫৬ সাংবিধানিক স্বায়ত্তশাসন, ’৬৪তে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে অসাম্প্রদায়িকতা, ’৬৬তে জাতীয় আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার, অর্থাৎ স্বাধিকার তথা ৬ দফা, ’৬৯-এর গণ-আন্দোলনের মধ্য দিয়ে মৃত্যুকূপ থেকে মুক্তমানব হয়ে বেরিয়ে এসে সর্বজনীন ভোটাধিকারের দাবি আদায় ও সংখ্যাগুরুর অধিকার আদায় এবং ’৭০-এর ঐতিহাসিক নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে ভূমিধ্বস বিজয় অর্জন ও পরিশেষে ’৭১-এ স্বাধীনতার ডাক দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের ঐতিহাসিক এই পর্বগুলো সংঘটনে তাকে জীবনের প্রায় ১৩টি বছর কারান্তরালে কাটাতে হয়েছে।
’৭১-এর রক্তঝরা মার্চের ১৭ তারিখে ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে আলোচনা শেষে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাসভবনে ফিরে এলেন, তখন বিদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে ঘরোয়া আলোচনাকালে একজন সাংবাদিক বঙ্গবন্ধুকে প্রশ্ন করেন, ‘৫২তম জন্মদিনে আপনার সবচাইতে বড় ও পবিত্র কামনা কী?’
উত্তরে তিনি বলেছিলেন ‘আমি জন্মদিন পালন করি না, আমার জন্মদিনে মোমের বাতি জ্বালি না, কেকও কাটি না। এ দেশে মানুষের নিরাপত্তা নাই। আপনারা আমাদের জনগণের অবস্থা জানেন। অন্যের খেয়ালে যে কোনো মুহূর্তে তাদের মৃত্যু হতে পারে। আমি জনগণেরই একজন, আমার জন্মদিনই কি আর মৃত্যুদিনই কি? আমার জনগণের জন্য আমার জীবন ও মৃত্যু। আমি তো আমার জীবন জনগণের জন্য উৎসর্গ করেছি।’
দুটি মহান লক্ষ্য সামনে নিয়ে জাতির পিতা রাজনীতি করেছেন—একটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা, অপরটি অর্থনৈতিক মুক্তি। প্রথম লক্ষ্য পূরণ করে যখন দ্বিতীয় লক্ষ্য পূরণের দ্বারপ্রান্তে, ঠিক তখনই ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট স্বাধীনতাবিরোধী দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা তাকে সপরিবারে হত্যা করে। জাতির পিতার দুই কন্যা তখন বিদেশে অবস্থান করায় রক্ষা পান।