সাধারণ ছুটি আর নয়, এবার জোন ভিত্তিক লকডাউন!
সাধারণ ছুটি আর নয়, এবার হবে জোন ভিত্তিক লকডাউন! সংক্রমণের মাত্রা বাড়লেও আর সাধারণ ছুটির সিদ্ধান্তে ফিরছে না সরকার। জোন ভাগ করে এলাকাভিত্তিক লকডাউন করার কথা জানালেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। রোববার থেকেই রাজধানীতে জোন ভাগের কাজ শুরু হবে বলে জানান তিনি। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জোনভিত্তিক লকডাউনে দেরির চড়া মাশুল গুনতে হবে।
দেশে গেল দু’ সপ্তাহে আশঙ্কাজনকহারে বেড়েছে করোনা আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফেরার চেষ্টাকে ম্লান করে দিচ্ছে কোভিড সংক্রমণের মাত্রা।
এ পরিস্থিতিতে শনিবারও দফায় দফায় বৈঠক করেছে স্বাস্থ্য, স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন ও আইসিটি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতর। বৈঠক শেষে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী জানান, আর পুরো দেশে ছুটি ঘোষণার চিন্তা নেই সরকারের। ঝুঁকি বিবেচনায় রেড, ইয়েলো ও গ্রিন জোনে ভাগ করার দিকেই এগুচ্ছেন তারা। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আইইডিসিআর, স্বাস্থ্য অধিদফতর ও আইসিটি মন্ত্রণালয়ের সহায়তা নিয়ে রোববার থেকেই ঢাকায় জোন ভাগের কাজ শুরু হবে।
অতিরিক্ত স্বাস্থ্য সচিব হাবিবুর রহমান বলেন, ঢাকার একাধিক জায়গায় কালকেই (রোববার) ভাগ করার একটি প্রচেষ্টা হাতে নিয়েছে। রেড জোনগুলোতে সব কিছুই বন্ধ করা হবে।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, সারাদেশে লকডাউন আর হবে না। তবে জোনগুলো আলাদা করে ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা করছি।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আরো দু’মাস আগেই শুরু করা উচিৎ ছিলো জোন ভাগের কাজ।
ডা. রিদওয়ান বলেন, আজকে করলে এটা কতটুকু সুফল পাওয়া যাবে তা নিশ্চিত নই। এটা দুমাস আগে করলে অনেক ভাল ফল পাওয়া যেত।
বর্তমানে গড়ে মোট নমুনা পরীক্ষার ২০ শতাংশের বেশি মানুষের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হচ্ছে।
দেশে করোনা সংক্রমণের ৯০ দিন আজ। মৃত-আক্রান্ত বিবেচনায় চলমান পরিস্থিতিকে পিক টাইম বলছেন বিশেষজ্ঞরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে দিচ্ছেন সরকারের সিদ্ধান্ত পুনর্মূল্যানের পরামর্শ। তবে নতুন করে ছুটি বাড়ানোর পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। তবে পুরো দেশকে ৩ জোনে ভাগ করে কঠোর বিধিনিষেধ আসছে শিগগিরই। পাশাপাশি পরিস্থিতি মোকাবিলায় তুলে ধরছেন নানা উদ্যোগের কথা।
এছাড়া আগামী সপ্তাহেই সারা দেশকে রেড, গ্রিন ও ইয়োলো জোনে ভাগ করে সংক্রমণ প্রতিরোধে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার।
করোনা সংক্রমণ এড়াতে ৩০শে মের পর বাড়েনি সাধারণ ছুটি। সাধারণের আয়-রোজগারের কথা বিবেচনায় জুন থেকে সীমিত আকারে খুলে দেয়া হয় অফিস-আদালত, শিল্পকারখানা ও গণপরিবহন। বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয় স্বাস্থবিধির ওপরে। ৩০ জুন পর্যন্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
দুয়েকদিনের মধ্যে ঢাকার কিছু এলাকায় ‘পাইলট ভিত্তিতে’ লকডাউন শুরু করা হবে বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও কোভিড-১৯ বিষয়ক মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান খান জানিয়েছেন।
শনিবার দুপুরে তিনি বলেন, “হটস্পট বা ক্লাস্টার এরিয়া বিবেচনায় শুরুতে আমরা পাড়া, মহল্লা বা ওয়ার্ড এলাকা লকডাউন করবো।
“শুরুতে সীমিত পরিসরে ঢাকার মধ্যেই লকডাউন করব। কারণ ঢাকাতেই কোভিড-১৯ এর রোগী বেশি। পরে আমরা পরিস্থিতি বিবেচনা করে অন্যান্য জেলা শহরেও লকডাউনের পথে হাঁটব।”
“আমরা আইসিটি বিভাগের সহায়তায় কোন কোন এলাকা লকডাউন করবো, তার ম্যাপিং শুরু করেছি। এতে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা যোগ দিয়েছেন। পুরো কাজটি শেষ হয়নি। শেষ হলেই আগামী দুয়েকদিনের মধ্যে আমরা কাজ শুরু করছি।”
করোনাভাইরাসে সংক্রমন বিবেচনায় দেশের বিভিন্ন এলাকা লাল বা হলুদ জোনে ভাগ করার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বড় এলাকা না ধরে ক্ষুদ্র পরিসরে লকডাউন করতে চায়।
হাবিবুর বলেন, “যেসব এলাকায় রোগী বেশি সেসব এলাকাকে ‘রেড জোন’ বলে ঘোষণা দিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ওই এলাকা পুরোপুরি লকডাউন করে দেওয়া হবে।
“একই পদ্ধতিতে ইয়েলো ও গ্রিন জোন চিহ্নিত করা হবে। এ ক্ষেত্রে ইয়েলো জোনে কেউ খুব জরুরি প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হতে চাইলে সেই সুযোগ দেওয়া হবে।”