আমরা আর সনদধারী বেকার তৈরি করতে চাই না: শিক্ষামন্ত্রী
বেসরকারি অনার্স মাস্টার্স থাকবে কিনা জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘আমরা আর সনদধারী বেকার তৈরি করতে চাই না সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমনটাই আভাস দিয়েছেন। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, নতুন করে বেসরকারি কলেজে অনার্স কোর্স খোলার বিষয়ে সরকারের নিষেধ আছে। তবে, বেসরকারি কলেজগুলোর অনার্স-মাস্টার্সের শিক্ষকদের এমপিওর বিষয়ে কথাবার্তা হচ্ছে।
শনিবার (২০ নভেম্বর) সকালে রংপুর সার্কিট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের সিংহভাগ শিক্ষার্থী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের। কাজেই তাদের কী করে অনেক বেশি কর্মমুখী শিক্ষা দিয়ে তৈরি করা যায়, সেই লক্ষ্যে কাজ হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা সনদধারী বেকার তৈরি করতে চাই না। লেখাপড়া শেষ করে বেকার থাকবে- এমন ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা চাই না।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আশা করছি, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোতে শিক্ষার মান আরও উন্নত হবে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যেসব চ্যালেঞ্জ আছে, সেগুলো মোকাবিলা করার জন্য শিক্ষার্থীদের কীভাবে প্রস্তুত করা যায়, সে বিষয়ে ভাবছি।’
করোনা মহামারির কারণে শিক্ষার্থী উপস্থিতি এখনো ৭০ শতাংশ জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, অভিভাবকেরা এখনো তাদের ছেলেমেয়েকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠাতে চান না।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত রংপুর অঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের নিয়ে শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষার মানোন্নয়ন বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, রংপুর অডিটোরিয়ামে এক কর্মশালায় অংশ নিয়েছেন। তাঁর সঙ্গে আছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. মশিউর রহমান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন আনোয়ার হোসেনসহ অনেকে।
বেসরকারি কলেজের অনার্স-মাস্টার্স কোর্স ভবিষ্যতে উঠিয়ে দেবে সরকার। এসব কলেজের ডিগ্রি পাস কোর্সের পাশাপাশি কারিগরিসহ বিভিন্ন কোর্স খোলা হবে। এই প্রক্রিয়ায় যেতে কাজ করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
আরো পড়ুন- ফেব্রুয়ারিতে খুলবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান: শিক্ষামন্ত্রী
এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় করে দিচ্ছেন। কাজেই যারা অনার্স-মাস্টার্স করবেন তারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই করবেন। আমরা আর সনদধারী বেকার তৈরি করতে চাই না। তবে ডিগ্রি পাস কোর্সের পাশাপাশি বিভিন্ন শর্টকোর্স করতে করার চিন্তা রয়েছে সরকারের।
শিক্ষামন্ত্রী আরো বলেন, বেসরকারি অনার্স কলেজে লেখাপড়া করে চাকরি পান না অনেকে। প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মধ্যে বিরাট একটা ব্যবধান তৈরি হয়, যারা এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যান তাদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়। অভিভাবকদের জন্যও এটি সুখকর নয়। সন্তানকে পড়ালেন, তাদের একটি চাকরির প্রত্যাশা থাকে, চাকরি হয় না। কোনও কিছু করবে সেটির প্রয়োজনীয় যোগ্যতা তারা অর্জন করতে পারে না। সেসব নানা সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ আমরা নিচ্ছ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশে ৩১৫টি বেসরকারি কলেজে অনার্স-মাস্টার্স কোর্স চালু রয়েছে। এসব কলেজের ডিগ্রি স্তরের শিক্ষকরা বেতন-ভাতার অন্তর্ভূক্ত হলেও অনার্স-মাস্টার্স পর্যায়ে কোন সুযোগ সুবিধা পান না।
আরো পড়ুন- নতুন শিক্ষাবর্ষে মেধার ভিত্তিতে শ্রেণি রোল নম্বর থাকছে না
১৯৯৩ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রি স্তর পর্যন্ত পরিচালিত এমপিওভুক্ত কলেজগুলোতে অনার্স-মাস্টার্স চালুর অনুমোদন দেয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট কলেজের টিউশন ফি থেকে এসব শিক্ষকদের বেতন-ভাতা দেয়ার নির্দেশনা দেয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে। এ কারণেই অনার্স-মাস্টার্স স্তরের শিক্ষকের পদ কলেজগুলোর জনবল কাঠামোয় স্থান পায়নি। ফলে খুব বেশি বাড়তি সুবিথধা পায়নি এ স্তরের শিক্ষকরা।
এমপিওভুক্ত হওয়ার সুযোগ থেকেও বিঞ্চিত হয়েছেন তারা। এ সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন সময় দাবি-দাওয়া জানিয়ে আসলেও তার সুরাহা হয়নি। এসকল শিক্ষকদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানেও নানা বিচার-বিশ্লেষণ চলছে বলে মন্ত্রী জানান।