৪০তম বিসিএস এর ভাইভা অভিজ্ঞতা
৪০তম বিসিএস এর ভাইভা অভিজ্ঞতা
প্রার্থী: Raihanul Islam Raihan
তারিখ: ১২ অক্টোবর, ২০২১
বোর্ড: অপ্রকাশিত থাক
সিরিয়াল : ৯/১০ হবে
সময়: ১৫-১৬ মিনিট।
সাদা শার্ট, কমপ্লিট, অক্সফোর্ড সু আর কালো-খয়েরী টাই আর বাধ্যতামূলক ডাবল মাস্ক পরে চেয়ারম্যান স্যারের রুমের গেট হাল্কা খুলে বললাম “আসতে পারি স্যার?”
স্যার অনুমতি দিলেন, আমি সালাম দিলাম, স্যার বসতে বললেন।
চেয়ারম্যান : তুমি মো:…. ;৷ … য়েট থেকে সিএসই নিয়ে পড়েছ, এপিয়ার্ড দিয়ে এপ্লিকেশন করেছ?
আমি: জি স্যার জি স্যার বলতে বলতে মাথা ঝাকাচ্ছিলাম।
চেয়ারম্যান : বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করা হয়েছে কিছুদিন আগে। বল, এর ফলে আমরা কি কি সুফল পাব।
আমি: প্রথমত এটি বাংলাদেশের একটি অনেক বড় অর্জন৷ বিশ্বে ৫৭ তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ…..
চেয়ারম্যান : সুবিধাগুলো বলুন শুধু।
আমি: স্যার, আমরা এর ব্যান্ডউইথ ইউজ করে স্যাটেলাইট টিভি সম্প্রচার করতে পারব। ইন্টারনেট কল করতে পারব। ভিস্যাটের মাধ্যমে রেডিও…
চেয়ারম্যান : তাহলে আমরা এতদিন ব্যান্ডউইথ কীভাবে পেতাম?
আমি: স্যার বাইরের দেশ থেকে ধার করা ব্যান্ডউইথ…
চেয়ারম্যান : কোন দেশ থেকে?
আমি: সরি স্যার।
চেয়ারম্যান : আচ্ছা বল রেডিও কীভাবে আমাদের উপকারে আসে?
আমি: স্যার, কমিউনিটি রেডিওর মাধ্যমে কমিউনিটি পর্যায়ে যোগাযোগ করা যায়। এফ এম এর মাধ্যমে তরঙ্গ পাঠানো হয়।
চেয়ারম্যান : এফ এম কি?
আমি: ফ্রিকুয়েন্সি মডুলেশন।
চেয়ারম্যান : তরঙ্গ কোথায় আসে?
আমি: গ্রাউন্ড স্টেশনে।
চেয়ারম্যান : গ্রাউন্ড স্টেশন কোথায় রেডিওর?
আমি: দুঃখিত স্যার। বলতে পারছি না।
চেয়ারম্যান : আচ্ছা বঙ্গবন্ধু কে নিয়ে কি কি বই পড়েছেন?
আমি: কারাগারের রোজনামচা, অসমাপ্ত আত্মজীবনী।
চেয়ারম্যান : আর কি কি বই আছে উনার?
আমি: আমার দেখা নয়াচীন ভ্রমন।
চেয়ারম্যান : এটা পড়েননি? পড়ার সময় পান নি নাকি?
আমি : ( নির্বাক হয়ে তাকিয়ে থাকলাম)
চেয়ারম্যান : আচ্ছা বলুন ৬৯ এর গন অভ্যুত্থান এ বঙ্গবন্ধুকে কোথা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল?
আমি: দুঃখিত স্যার, মনে করতে পারছিনা।
চেয়ারম্যান : ১৯৫৪ সালে তাকে কোথা থেকে গ্রেফতার করা হয়?
আমি: দুঃখিত স্যার, মনে আসছে না।
চেয়ারম্যান : আচ্ছা বলুন তাকে প্রথম কবে গ্রেফতার করা হয়?
আমি: (একটু ভেবে) ব্রিটিশ শাসনামলে ১৯৩৭ সালে।
চেয়ারম্যান : একবছর আগে বলে ফেললেন না, ৩৭ হবে?
আমি : সরি স্যার, ১৯৩৮ হবে।
চেয়ারম্যান : আচ্ছা বঙ্গবন্ধু কে নিয়ে যখন পারছেন না, তাহলে সাহিত্য থেকে প্রশ্ন করা যাক, নাকি।
আমি: ( অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলাম)
চেয়ারম্যান : জীবনানন্দ দাশ এর বাড়ি কোথায়?
আমি : সরি স্যার এই মুহূর্তে মনে আসছে না।
চেয়ারম্যান : তার মায়ের নাম কি?
আমি : দুঃখিত স্যার, মনে আসছে না।
চেয়ারম্যান : আপনি কি নার্ভাস? এত দুঃখিত বলছেন যে। এক্সটার্নাল স্যারেরাও চেয়ারম্যান স্যারের সাথে একাত্বতা পোষণ করছিল এ ব্যাপারে ( স্যারকে কীভাবে বুঝাই আমার ভুলে যাওয়া স্বভাব)
আমি: না স্যার নার্ভাস না, বলে মাথা ঝাকালাম।
চেয়ারম্যান : দেখুন আমার ভাইভায় যদি কেউ নার্ভাস থাকে তার আসলে ভাইভা দেয়াই উচিৎ না। আমার খারাপ ভাইভার কোন প্রচারণা আছে কি?
আমি: না স্যার নেই। স্যার জীবনানন্দের মায়ের নাম মনে পরেছে। তার মায়ের নাম কুসুমকুমারী দাশ।
চেয়ারম্যান : তার রচিত একটি কবিতা বলুনতো।
আমি : আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে
চেয়ারম্যান : আমাদের দেশে কি সেই ছেলে হয়েছে?
আমি: জি স্যার, তার নিজের ছেলে জীবনানন্দ দাশ ই তো সেই ছেলে।
চেয়ারম্যান : কীভাবে?
আমি: জীবনানন্দ দাশ এর অবদান বাংলাদেশ তথা ভারতীয় উপমহাদেশে অপরিসীম।
চেয়ারম্যান : (ভুল শুধরিয়ে) বাংলা সাহিত্যে তার অবদান আরকি। বলুন, দক্ষিনের বিভাগ কোনটি?
আমি: খুলনা।
চেয়ারম্যান : শুধুই খুলনা।
আমি : চট্টগ্রামও হবে স্যার। পরে ভেবে বললাম দুঃখিত স্যার, চট্টগ্রাম হবে না, বরিশাল হবে।
চট্টগ্রাম পূর্বাঞ্চলের বিভাগ (সেকেন্ড এক্সটার্নাল হেসে বলল যাক অবশেষে বরিশালকে পাওয়া গেল)
চেয়ারম্যান : আচ্ছা বলুন জীবনানন্দের কবিতায় নাটোরের বনলতা সেন কেন?
বরিশালের কি কেউ ছিলনা? এর ব্যাখ্যা কি? শানে নুযূল কি?
আমি : সরি স্যার এর ব্যাখ্যা জানা নেই।
চেয়ারম্যান : শানে নুযূল বোঝেন?
আমি: জি স্যার, অন্তর্নিহিত অর্থ ( আসলে শানে নুযূল অর্থ নাযিল বা অবতীর্ণ হওয়ার প্রেক্ষাপট)
চেয়ারম্যান : এটাকে বিজ্ঞানের ভাষায় কি বলে?
আমি : inner meaning.
চেয়ারম্যান : বিজ্ঞানের ভাষায় একে(কি যে বল্লেন বুঝলাম না)বলে। বলুন বাংলাদেশের বিভাগ কতটি, কি কি ?
আমি: স্যার আটটি, ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রাজশাহী, ময়মনসিংহ একটু থেমে বললাম স্যার রংপুর।
চেয়ারম্যান : নিজের বিভাগকেই বাদ দিচ্ছিলেন! আপনার জেলার একজন বিখ্যাত রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্বের নাম বলুন।
আমি: সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী জনাব আসাদুজ্জামান নূর।
চেয়ারম্যান : তার এই পরিচয় ছাড়াও মানুষ তাকে আরেক নামে চেনে, বলতে পারবেন?
আমি: স্যার তিনি বাকের ভাই নামেও খ্যাত।
চেয়ারম্যান : বাকের ভাই এর স্রষ্টা কে?
আমি: হুমায়ুন আহমেদ স্যার।
চেয়ারম্যান : নাটক টির নাম কি?
আমি: কোথাও কেউ নেই।
(চেয়ারম্যান স্যার ফার্স্ট এক্সটার্নাল এর দিকে ইশারা করলেন)
এক্স-১: আপনার ফার্স্ট চয়েস কি?
আমি : স্যার বিসিএস নিরীক্ষা ও হিসাব।
এক্স-১: সেকেন্ড চয়েস?
আমি: বিসিএস পুলিশ।
এক্স-১: থার্ড চয়েস?
আমি: বিসিএস অ্যাডমিন।
এক্স-১: সাভারের রাণী বর্তমানে একটি আলোচিত ঘটনা। তার সম্পর্কে জানেন? সাভারের রাণী কে?
আমি: দুঃখিত স্যার বলতে পারছি না।
এক্স-১: এটির তো গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস এ নাম এসেছে, আর এটা বলতে পারছেন না।
আমি: স্যার মনে পরেছে, এটি একটি গবাদিপশু অর্থাৎ গরু।
এক্স-১: এ সম্পর্কে আর কি জানেন ডিটেইলস এ বলুন।
আমি : স্যার এটি অত্যন্ত ক্ষুদ্রাকৃতির, এর উচ্চতা মাত্র ১৭ ইঞ্চি। ( আসল হাইট যে কত?)
এক্স-১: এর ট্রাজেডি টা কি?
আমি: (ভ্যাপাচ্যাকা খেয়ে) স্যার এর মাত্র দুটো পা ছিলো। (কারণ ভাইবার দুদিন আগে একটা দুই পা ওয়ালা বাছুর ফেসবুক পেজগুলোতে ট্রাজিক ভিডিও হিসেবে ঘুরে বেড়াচ্ছিল)
এক্স-১: কি বলেন! কিছুদিন আগে এটি মারা গিয়েছে। আচ্ছা বলুন স্বাধীনতার ইশতেহার আর ঘোষণাপত্রের মধ্যে পার্থক্য কি? একটি ১০ এপ্রিল ৭১ আর একটি ৩রা মার্চ একাত্তর। এ দুটির মধ্যে পার্থক্য কি? What is the difference between ploclamation of independence and declaration of independence?
আমি : স্যার, স্বাধীনতার ইশতেহার বলতে আমি যেভাবে বুঝি “ইশতেহার হল স্বাধীনতার বৈশিষ্ট্যসমূহ অর্থাৎ স্বাধীনতাটা কেমন হবে। বিষয়টা অনেকটা নির্বাচনী ইশতেহার এর মত। প্রতিনিধিরা নির্বাচনের আগে যে রকম ইশতেহার ঘোষণা করে, প্রতিশ্রুতি দেয় তারা কি কি কাজ করবে, সেরকম।
এক্স-১: আর ঘোষণাপত্র?
আমি: ঘোষনাপত্র হচ্ছে স্বাধীনতাটাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া, সাংবিধানিক রূপ দেয়া।
এক্স-১:কিছুদিন আগে নোবেল পুরষ্কার ঘোষণা করা হলো, এ বছর শান্তিতে নোবেল কে পেয়েছে?
আমি : ফিলিপাইনের মারিয়া রেসা আর রাশিয়ার দিমিত্রি (দিমিত্রির পুরো নাম মনে ছিল না)
এক্স-১: এরা কিসের জন্য নোবেল পুরষ্কার পেয়েছে?
আমি : স্যার, মারিয়া রেসা মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করেছেন।
এক্স-১: আরেকজন?
আমি : দুঃখিত স্যার, বলতে পারছি না।(তিনিও একি বিষয়ে কাজ করেছেন)
এক্সটারনাল-২: সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের উদ্দেশ্যে অনেকগুলো হাইটেক পার্ক স্থাপন করছে। এগুলো হলে কি উপকার হবে?
আমি: স্যার বাংলাদেশের অনেক মানুষ আইসিটি নির্ভর এবং সরকারের আইসিটি সেক্টরে আয়ের পরিমান ধীরে ধীরে বাড়ছে…
এক্স-২:( থামিয়ে দিয়ে) বাংলাদেশ ফোর জি থেকে ফাইভ জি তে পদার্পণ করলে কি কি সুবিধা আর কি কি অসুবিধা হবে? আচ্ছা তিনটা সুবিধা আর তিনটা অসুবিধা বলুন।
আমি: স্যার, প্রথমত 5g তে প্রবেশ করলে ইন্টারনেট স্পিড অনেক বাড়বে। মানুষের কাছে ইন্টারনেট এক্সেস সহজলভ্য হবে। আর এর ফলে সাইবার ক্রাইম বেড়ে যাবে।
এক্স-২: বাংলাদেশের হাইটেক পার্ক ককতগুলো? কোথায় কোথায়?
আমি: স্যার স্পেসিফিক সংখ্যা টা বলতে পারছি না, তবে ৫০ টিরও বেশি হবে। গাজীপুর এর কালিয়াকৈরে আছে একটা।
এক্স-২: আর কোথায় আছে? রাজশাহীতে নেই?
আমি: আছে স্যার, প্রত্যেক বিভাগীয় শহরেই আছে।
এক্স-২:( স্যারের হাতেই কাগজপত্র গুলো ছিলো) কাগজগুলো নিয়ে যান।
আমি : নিতে নিতে ধন্যবাদ স্যার বললাম, আর চেয়ারম্যান স্যার কে জিজ্ঞেস করলাম আমার কি হয়ে গেছে?
চেয়ারম্যান : হ্যা, তুমি যেতে পার।
আমি সালাম দিয়ে বের হয়ে আসলাম।
আলহামদুলিল্লাহ এত উত্তর না পারার পরও খুব একটা বিচলিত হই নি, স্যারেরা হেল্পফুল ছিল, বাংলায় ভাইভা হওয়ায় ভালো লাগছিল। ভুলে যাব জেনে অভিজ্ঞতা টা খাতায় সেদিনই লিখে রেখেছিলাম।