শিক্ষা খবর

হিজাব পরে স্কুলে আসায় ছাত্রীদের পেটালেন শিক্ষিকা

হিজাব পরে স্কুলে আসায় ছাত্রীদের পেটালেন শিক্ষিকা। নওগাঁর মহাদেবপুরে হিজাব পরে স্কুলে আসায় মাধ্যমিক স্কুল ছাত্রীদের পেটানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে এক শিক্ষিকার বিরুদ্ধে। গতকাল বুধবার দুপুরে উপজেলার সদর ইউনিয়নের দাউল বারবারপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। পিটুনি খেয়ে ছাত্রীরা স্কুল ছেড়ে বাড়িতে চলে যায়। বিষয়টি অভিভাবকদের জানালে তারা বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই স্কুলে গিয়ে এর প্রতিবাদ জানান। অভিযুক্ত শিক্ষিকাকে না পেয়ে তারা স্কুলের আসবাবপত্র ভাঙচুর করেন। খবর পেয়ে থানা পুলিশের দুটি ভ্যান ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

 

মহাদেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজম উদ্দিন মাহমুদ জানান, বিষয়টি খুবই সেনসিটিভ। তবে এ বিষয়ে থানায় কোনো মামলা হয়নি বলেও জানান ওসি।

 

নির্যাতনের শিকার ওই স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সাদিয়া আফরিন অভিযোগ করে, বুধবার দুপুরে জাতীয় সঙ্গীতের পর লাইনে দাঁড়ানো অবস্থায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা আমোদিনী পাল কেন হিজাব পরে স্কুলে এসেছে, এ কথা জিজ্ঞেস করে ইউক্যালিপটাস গাছের ডাল দিয়ে তাদের প্রহার করেন। তিনি ছাত্রীদের হিজাব খুলে ফেলার জন্য টানাটানি করেন। তিনি হুমকি দেন, ‘কাল থেকে যদি হিজাব ও মাস্ক পরে আসো তাহলে পিটিয়ে তোমাদের পিঠের চামড়া তুলে নেওয়া হবে। ’

হিজাব পরে স্কুলে আসায় ছাত্রীদের পেটালেন শিক্ষিকা

সাদিয়া জানায়, লাইনের কয়েকজন ছাত্রীকে মারতে মারতে তার কাছে এসে তাকে মারতে থাকলে লাঠি ভেঙে যায়। অন্যদের মধ্যে দশম শ্রেণির ছাত্রী ঐশী, সুমাইয়া, তিথি, লাকি, নবম শ্রেণির মোনাসহ কয়েকজন ছাত্রীকে পেটানো হয়।

সাদিয়া আরোও বলেন, লাইনের কয়েকজন ছাত্রীকে মারতে মারতে তার কাছে এসে তাকে মারতে থাকলে লাঠি ভেঙ্গে যায়। অন্যদের মধ্যে দশম শ্রেণির ছাত্রী ঐশি, সুমাইয়া, তিথি, লাকি, নবম শ্রেণির মোনাসহ কমপক্ষে ২০ জন ছাত্রীকে পেটানো হয়।

 

সাদিয়ার মা সাবেরা বেগম বলেন, তার মেয়ে স্কুল থেকে এসে কান্নাকাটি করে হিজাব পড়ার জন্য ম্যাডাম মেরেছে বলে জানায়। তিনি বলেন, আমাদের মেয়েরা বড় হয়েছে। তারাতো পর্দা করবেই। স্কুলে গিয়েই ভদ্রতা শিখবে। তা না শিখিয়ে যদি এরকম মারপিট করে তাহলে আমাদের সন্তানদের নিরাপত্তা কোথায়? তিনি তাদের সন্তানদের নিরাপত্তার স্বার্থে অভিযুক্ত শিক্ষিকার অপসারণ দাবি করেন।

 

দশম শ্রেণির ছাত্রী উম্মে সুমাইয়া আকতারের মা মরিয়ম নেছাও জানালেন একই কথা। তার মেয়ে সুমাইয়া ও তার ক্লাসমেট তিথি জাতীয় সঙ্গীতের পর স্কুলে গেলে তারা কেন হিজাব পড়ে স্কুলে গেছে সেই অপরাধে শিক্ষিকা আমোদিনি পাল তাদেরকে পেটানোর জন্য শিক্ষক বদিউল আলমকে নির্দেশ দেন। নির্দেশ পেয়ে বাদিউল মাস্টার সুমাইয়া ও তিথিকে গাছের ডাল দিয়ে পিটায়। এই ঘটনার পর তার মেয়ে ক্লাস না করে বাড়ি এসে কাঁদতে থাকে।

 

এক পর্যায়ে আমোদিনী পাল ছাত্রীদের মারধরের জন্য স্কুলের অপর শিক্ষক বদিউল আলমকে নির্দেশ দেন। তার নির্দেশে বদিউল আলমও তাদের প্রহার করেন বলে অভিযোগ ছাত্রীদের। তবে এর আগে কখনো ছাত্রীদের সঙ্গে এমন আচরণ করা হয়নি বলেও জানায় তারা।

 

অভিভাবকরা জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে তারা স্কুল ঘেরাও করেন। কিন্তু অভিযুক্ত শিক্ষিকা এদিন স্কুলে আসেননি। এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষিকা আমোদিনী পালের বিচার দাবি করেন অভিভাবকরা।

অভিযুক্ত শিক্ষিকা আমোদিনী পালের মোবাইলে কল দিলে তিনি ফোনটি ধরেন। পরে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

 

অভিযুক্ত অপর শিক্ষক বদিউল আলম জানান, হিজাব না পরায় ছাত্রীদের শিক্ষিকা আমোদিনী পাল মারধর করেছেন। তিনি নিজে কাউকে মারেননি বলেও দাবি করেন।

 

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ধরণী কান্ত বর্ম্মণ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, স্কুলে হিজাব পরে আসায় শিক্ষিকা আমোদিনী পাল পাঁচ-ছয়জন ছাত্রীকে মারধর করেছেন। ঘটনার দিন তিনি স্কুলের কাজে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে গিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার সকালে স্কুলে এসে বিষয়টি জেনেছেন। ওই শিক্ষিকা শোকজ করা হয়েছে।

 

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হাবিবুর রহমান হিজাব না পরায় স্কুলছাত্রীদের পেটানোর কথা স্বীকার করে বলেন, আগে তাকে শোকজ করি। তারপর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান মিলন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ওই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে EducationsinBD.com এর ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন YouTube Channel জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল নোটিশ দেখুন এখানে একসাথে National University Notice Board অনার্স /মার্স্টাস/ ডিগ্রি পরীক্ষার প্রিমিয়াম সাজেশন পেতে ফেসবুক পেজে মেসেজ দিন। https://www.facebook.com/PremiumSuggestion আমাদের ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করুন Facebook Group

Leave a Reply