এসএসসি এইচএসসি পরীক্ষা বিকল্প পদ্ধতিতে মূল্যায়নে কমিটি গঠন
এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে নেয়ার সিদ্ধান্ত থাকলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে সেখান থেকে পিছিয়ে আসছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষার্থীদের বিকল্প পদ্ধতিতে মূল্যায়নের চিন্তাভাবনা করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বিকল্প কোনো পদ্ধতিতে মূল্যায়ন করা হবে সেটি নির্ধারণে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আরো পড়ুন- এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষা না হলে যেভাবে হতে পারে রেজাল্ট
মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগামী ৩১ জুলাই পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। এই অবস্থায় এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ৬০ দিন ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ৮৪ দিন ক্লাস করিয়ে পরীক্ষা নেয়ার যে সিদ্ধান্ত হয়েছিল সেটি বাস্তবায়ন করা প্রায় অসম্ভব। এই অবস্থায় শিক্ষার্থীদের বিকল্প পদ্ধতিতে মূল্যায়ন করতেই এই কমিটি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন জানান, যেহেতু এখনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব হয়নি সেহেতু কী কী বিকল্প পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা যায় আমরা সেটি নিয়ে চিন্তা করছি। বিষয়টি দেখতে শিক্ষা বোর্ড ও বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি কমিটি করা হয়েছে।
এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, এবার কোনো ভাবেই অটোপাস দেয়া হবে। এসএসসি এইচএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট ও অ্যাসাইনমেন্ট সমন্বয় করে মূল্যায়ন করা হতে পারে। এছাড়া আরও কিছু বিকল্প চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। কমিটির সুপারিশ পাওয়ার পর এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত জানাবে মন্ত্রণালয়।
সূত্র আরও জানায়, ইতোমধ্যে পরীক্ষার বেশকিছু বিকল্প নিয়ে আলোচনা চলছে। এবার শিক্ষার্থী একাডেমিক রেজাল্টও মূল্যায়ন করা হতে পারে। শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ মূল্যায়ন করে সনদ দেয়া হবে।
এদিকে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এস এম আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘এখন পর্যন্ত এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা আয়োজন করার সিদ্ধান্ত বহাল রয়েছে। এসএসসির সংক্ষিপ্ত সিলেবাস থেকে প্রশ্নপত্র তৈরি করে তা চূড়ান্ত করে বিজি প্রেসে পাঠানো হয়েছে। এইচএসসির প্রশ্নপত্র প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’ ‘পরীক্ষা নেয়া সম্ভব না হলে পরীক্ষা মূল্যায়ন সংক্রান্ত পরামর্শক কমিটি গঠন করার কথা রয়েছে। সেই কমিটির গাইডলাইন শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত করে পাঠালে সেটি অনুসরণ করে ফলাফল প্রকাশ করা হবে।’
জানা যায়, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের মূল্যায়ন সংক্রান্ত গাইডলাইন তৈরিতে ১১ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আন্তঃশিক্ষা সমন্বয় বোর্ডের সভাপতি অধ্যাপক নেহাল আহমেদকে আহ্বায়ক করে এতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের প্রতিনিধি, বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি রয়েছে। পরীক্ষা ছাড়া বিকল্প কোন পদ্ধতিতে দুই স্তরের শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা যায় তারা সে সংক্রান্ত গাইডলাইন তৈরি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন। সেটি যাচাই-বাছাই শেষে মন্ত্রণালয় থেকে ঘোষণা দেয়া হবে। সেটি অনুসরণ করে বোর্ডগুলো এসএসসি-এইচএসসির পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, করোনা পরিস্থিতির কারণে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করা সম্ভব না হওয়ায় ২০২০ সালে এইচএসসি পাস করা শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন। চলতি বছরের মধ্যে ২০২১ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা অথবা বিকল্প পদ্ধতিতে পাস না করালে বড় ধরনের জটিলতা তৈরি হবে। এ কারণে বর্তমানে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের বিকল্প পদ্ধতিতে পাস করানোর চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। বিকল্প পদ্ধতিতে পাস করাতে শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট দেয়ার পরিকল্পনা চলছে।
জানা গেছে, ২০২১ শিক্ষাবর্ষের এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা ছাড়াই পাস করানো হতে পারে। এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জেএসসি ২৫ শতাংশ ও এসএসসি পরীক্ষার ৫০ শতাংশ এবং ২৫ শতাংশ নম্বর অ্যাসাইনমেন্টের ওপর মূল্যায়নের ভিত্তিতে ফলাফল দেয়া হতে পারে। এসএসসির ক্ষেত্রে জেএসসি পরীক্ষার ফলে ৫০ শতাংশ আর বাকি ৫০ শতাংশ নম্বর স্কুল পারফরম্যান্স বা অ্যাসাইনমেন্টের ওপর মূল্যায়ন করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, করোনা ভাইরাসের কারণে গত বছরের মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। গত বছর এসএসসি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হলেও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের অটোপাস দেয়া হয়। এবছরও করোনার প্রকোপ না কমায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব হয়নি। যার ফলে এবছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা অনিশ্চয়তার মাঝে রয়েছে।