শিক্ষা নিউজসাধারন এবং অন্যান্য

মন ভালো রাখতে হলে পড়তে হবে বই

মন ভালো রাখতে হলে পড়তে হবে বই। দেশের ৮৩ শতাংশ মানুষ সৃজনশীল বই এবং ৮৫ শতাংশ মানুষ সংবাদপত্র পড়েন না। শিক্ষিতদের মধ্যে এ হার অর্ধেকের বেশি। আর অতি ধনীদের মধ্যে বই ও সংবাদপত্র না পড়ার হার প্রায় ৭৫ শতাংশ। ২০১৬ সালে গণসাক্ষরতা অভিযানের এক সমীক্ষায় এ তথ্য প্রকাশিত হয়। গত ৫ বছরে অবস্থার উন্নতি হয়েছে কিনা, এ তথ্য জানা নেই। তবে ওপরের তথ্য দেখে বলার অপেক্ষা রাখে না, আজকাল মানুষের মাঝে বই পড়ার প্রবণতা কমে এসেছে।

 

এর নানাবিধ কারণ রয়েছে। সবচেয়ে প্রণিধানযোগ্য, নতুন নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন, উন্নয়ন ও প্রসার।উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রতিবারের মতো, এবারও এসেছে ‘জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস’। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘সুবর্ণজয়ন্তীর অঙ্গীকার ডিজিটাল গ্রন্থাগার’। এটি খুবই সময়োপযোগী স্লোগান। বাংলাদেশে ২০১৮ সালে প্রথম দিবসটি উদযাপন শুরু হয়। জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিটি দিবসই গুরুত্বপূর্ণ। তারপরও কোনো কাজের অধিকতর গুরুত্ব বোঝাতে আমরা সুনির্দিষ্ট তারিখকে ‘বিশেষ দিবস’ ঘোষণা করি, আড়ম্বরের সঙ্গে উদযাপন করি। ৫ ফেব্রুয়ারি গ্রন্থাগারের জন্য তেমনই একটি দিবস।

 

একে একে আবিষ্কার হলো বেতার যন্ত্র (রেডিও), ফটোগ্রাফি, নির্বাক-সবাক চলচ্চিত্র, টেলিভিশন, টেপ রেকর্ডার, ভিসিপি-ভিসিআর। ল্যান্ডফোনের যুগের অবসান, এলো বাটন, টাচ ও স্মার্টমোবাইল ফোন। ডিশ কালচার, নেট কালচারে ভাসছে দুনিয়া। খুলেছে ‘ভার্চুয়াল বিশ্ব’ নামে নতুন জগৎ। ১৬-১৭ কোটি লোকের দেশে নেটের গ্রাহক ১২ কোটির বেশি। আমি আশাবাদী মানুষ। ভার্চুয়াল রিডার হিসাবে ধরলে পাঠক সংখ্যা বেড়েছে।

 

বর্তমানে ভার্চুয়াল বিশ্বে যুক্ত হয়ে নিজের ঘর, অফিস কিংবা পৃথিবীর যে কোনো স্থানে বসে বই পড়া যায়। তাই পাঠক লাইব্রেরিতে গিয়ে ‘প্রিন্ট’ কপি বই পড়তে তত আগ্রহী হন না। তাই আমি বলব, বই পড়ার অভ্যাস কমেনি, বেড়েছে, বদলেছে পড়ার ধরন। প্রিন্ট বই ছেড়ে ঝুঁকছে ভার্চুয়াল বিশ্বে (ফেসবুক-ইন্টারনেট)।বর্তমানে দেশে পাবলিক লাইব্রেরি বা সরকারি গণগ্রন্থাগারের সংখ্যা ৭১। এটি সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। সরকার এ গ্রন্থাগারগুলো পর্যায়ক্রমে ‘ডিজিটালাইজড’ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। বেসরকারি গ্রন্থাগার আছে ১ হাজার ৯৫৬টি।

 

‘বই পড়া’র গুরুত্ব সম্পর্কে ইতিহাসের খ্যাতিমান লেখক, সাহিত্যিক, পণ্ডিত, গবেষক, বুদ্ধিজীবীরা সব সময় সোচ্চার ছিলেন। যার প্রতিফলন দেখতে পাই তাদের প্রবন্ধ-নিবন্ধে। যদিও তাদের সময়ে আজকের মতো প্রযুক্তির এতটা উন্নতি হয়নি। তবে তাদের লেখার গুরুত্ব এতটুকুন কমেনি।

 

এ রকম কিছু লেখার সারবস্তু নিচে তুলে ধরছি-বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার ‘লাইব্রেরি’ প্রবন্ধে লিখেছেন, ‘মহাসমুদ্রের শত বছরের কল্লোল কেহ যদি এমন করিয়া বাঁধিয়া রাখিতে পারিত যে, সে ঘুমাইয়া পড়া শিশুটির মতো নিশ্চুপ করিয়া থাকিত, তবে সেই নীরব মহাশব্দের সহিত এই লাইব্রেরির তুলনা হইত। এখানে ভাষা চুপ করিয়া আছে, প্রবাহ স্থির হইয়া আছে, মানবাত্মার অমর আলোক কালো অক্ষরের শৃঙ্খলে কাগজের কারাগারে বাঁধা পড়িয়া আছে। ইহারা সহসা যদি বিদ্রোহী হইয়া ওঠে, নিস্তব্ধতা ভাঙিয়া ফেলে, অক্ষরের বেড়া দগ্ধ করিয়া একেবারে বাহির হইয়া আসে! হিমালয়ের মাথার উপরে কঠিন বরফের মধ্যে যেমন কত কত বন্যা বাধা আছে, তেমনি এই লাইব্রেরির মধ্যে মানব হৃদয়ের বন্যাকে বাঁধিয়া রাখিয়াছে!

 

জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে অর্থ প্রয়োজন, তেমনি মনের দৈন্য ঘোচাতে পড়তে হবে বই, এর বিকল্প নেই। যে জাতি যত বেশি বই পড়ে, তারা জ্ঞান-গরীমায় তত উন্নত। বিশ্বে নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতা তারাই রাখে।ড. হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ‘লাইব্রেরি’ প্রবন্ধে লিখেছেন, ‘সকলেই জানেন যত রকমের দান আছে, তার মধ্যে বিদ্যাদান সবার চেয়ে বড়। সেজন্য এখন অনেকে স্কুল করিয়া বিদ্যাদান করিতেছেন। সুসভ্য জাতি ভিন্ন এই দানের মাহাত্ম্য লোকে বুঝিতে পারে না। যাহারা সুসভ্য নয়, তাহারা অন্নদান, ভূমিদান, জলদান প্রভৃতিতেই খুশি থাকে। তাহারা বুঝে না যে এক বিদ্যাদান হইলে, তাহা হইতেই আর সব-দান আপনা আসিয়া জুটে। বিদ্যাদান অপেক্ষাও লাইব্রেরিয়ান আরও বড়। কেননা লাইব্রেরি বিদ্যার মূল।

 

‘বই পড়া’ প্রবন্ধে প্রমথ চৌধুরী লিখেছেন, ‘আমরা যত বেশি লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করব ততবেশি উপকার হবে। আমার মনে হয়, এদেশে লাইব্রেরির সার্থকতা হাসপাতালের চাইতে কিছু কম নয় এবং স্কুল-কলেজের চাইতে একটু বেশি।’ তিনি আরও লিখেছেন, ‘স্কুল-কলেজের শিক্ষা যে অনেকাংশে ব্যর্থ, সে বিষয়ে প্রায় অধিকাংশ লোকই একমত। আমি বলি, শুধু ব্যর্থ নয়, অনেক স্থলে মারাত্মক; কেননা আমাদের স্কুল-কলেজ ছেলেদের স্বশিক্ষিত হওয়ার সে সুযোগ দেয় না, শুধু তাই নয়, স্বশিক্ষিত হওয়ার সুযোগ পর্যন্ত নষ্ট করে।

 

বিদ্যাকে যদি গাছের সঙ্গে তুলনা করো, লাইব্রেরি তাহার জড় (মূল)। বিদ্যাকে যদি নদীর সঙ্গে তুলনা করো, লাইব্রেরি তাহার ফোয়ারা, অনন্ত জলরাশির আধার। সুতরাং যাহারা লাইব্রেরি দান করেন, তাহারা, শ্রেষ্ঠ দানের ওপরও যদি কিছু শ্রেষ্ঠ দান থাকে তাই করিয়া থাকেন। স্কুলে যে বিদ্যাদান হয়, সেটা ছেলেদের। লাইব্রেরিতে যে বিদ্যাদান হইয়া থাকে, সেটা ছেলে-বুড়া সবারই। স্কুলে যে বিদ্যাদান হয়, তাহা ছেলেরা কয়েক বছর মাত্র গ্রহণ করিতে পারে। কিন্তু লাইব্রেরিতে যে বিদ্যাদান হয়, তাহা বারো মাস তিরিশ দিন, মানুষ যতদিন বাঁচে ততদিনই মানুষ লইতে পারে।

 

আমাদের শিক্ষাযন্ত্রের মধ্যে যে যুবক নিষ্পেষিত হয়ে বেরিয়ে আসে, তার আপনার বলতে বেশি কিছু থাকে না, যদি না তার প্রাণ অত্যন্ত কড়া হয়। সৌভাগ্যের বিষয়, এই ক্ষীণপ্রাণ জাতির মধ্যেও জনকতক এমন কঠিন প্রাণের লোক আছে, এহেন শিক্ষা পদ্ধতি যাদের মনকে জখম করলেও একেবারে বধ করতে পারে না।’

 

‘আমি লাইব্রেরিকে স্কুল-কলেজের ওপরে স্থান দিই এই কারণে যে, এ স্থলে লোকে স্বেচ্ছায় স্বচ্ছন্দচিত্তে স্বশিক্ষিত হওয়ার সুযোগ পায়; প্রতি লোক তার স্বীয় শক্তি ও রুচি অনুসারে নিজের মনকে নিজের চেষ্টায় আত্মর রাজ্যে জ্ঞানের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। স্কুল-কলেজ বর্তমানে আমাদের যে অপকার করছে, সে অপকারের প্রতিকারের জন্য শুধু নগরে নগরে নয়, গ্রামে গ্রামে লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করা কর্তব্য। আমি পূর্বে বলেছি, লাইব্রেরি হাসপাতালের চাইতে কম উপকারী নয়; তার কারণ আমাদের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় লাইব্রেরি হচ্ছে একরকম মনের হাসপাতাল।

 

রম্যলেখক সৈয়দ মুজতবা আলী মনীষী ওমর খৈয়ামের উদ্ধৃতি দিয়ে তার ‘বই কেনা’ প্রবন্ধে লিখেছেন, ‘Here with a loaf of bread/Beneath the bough,/A flask of wine, a book of/Verse and thou,/Beside me singing in the wilderness/An wilderness is paradise enow.’ অর্থাৎ রুটি পানীয় ফুরিয়ে যাবে, প্রিয়ার কালো চোখ ঘোলাটে হয়ে আসবে, কিন্তু বইখানা অনন্ত যৌবনা-যদি তেমন বই হয়। তাই বোধকরি খৈয়াম তার বেহেশতের সরঞ্জামের ফিরিস্তি বানাতে গিয়ে কেতাবের কথা ভোলেননি।

 

মোতাহের হোসেন চৌধুরী তার ‘লাইব্রেরি’ প্রবন্ধে লিখেছেন, ‘লাইব্রেরি সম্বন্ধে আমার শেষ বক্তব্য এই যে, তা জাতির সভ্যতা ও উন্নতির মানদণ্ড। লাইব্রেরির সংখ্যার দিকে নজর রেখে, জাতীয় উন্নতি ও সভ্যতার পরিমাপ করলে অন্যায় হবে না। কারণ উন্নতি মানে মনের উন্নতি, পুস্তক মনের উন্নতির সহায়, আর লাইব্রেরি পুস্তকের সমাহার ছাড়া আর কিছুই নয়।

 

অতএব বলা যেতে পারে, লাইব্রেরি সৃষ্টির ব্যাপারে যে জাতি যত অগ্রসর, জাতীয় কল্যাণ সৃষ্টির কাজে সে জাতি তত অগ্রগামী। জাতীয় আন্দোলনের সঙ্গে লাইব্রেরি আন্দোলন সমান তালে না চললে জাতীয় আন্দোলনের উপকারিতা সম্বন্ধে সন্দিহান হতে হয়। কারণ বুদ্ধি জাগরণ ভিন্ন জাতীয় আন্দোলন হুজুগপ্রিয়তা ও ভাব বিলাসিতার নামান্তর, আর পুস্তক অধ্যয়ন ব্যতীত বুদ্ধির জাগরণ অসম্ভব।

To keep a good mind, you have to read a book. 83 percent of the people in the country do not read creative books and 85 percent of people do not read newspapers. That’s more than half of the educated. And among the super-rich, the rate of not reading books and newspapers is about 75 percent. This information was published in a 2016 survey of the Mass Literacy Campaign. It is not known if the situation has improved in the last five years. However, looking at the above information, it is needless to say that nowadays the tendency of people to read books has decreased.

শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে EducationsinBD.com এর ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন YouTube Channel জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল নোটিশ দেখুন এখানে একসাথে National University Notice Board অনার্স /মার্স্টাস/ ডিগ্রি পরীক্ষার প্রিমিয়াম সাজেশন পেতে ফেসবুক পেজে মেসেজ দিন। https://www.facebook.com/PremiumSuggestion আমাদের ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করুন Facebook Group

Leave a Reply