চিন্তার মধ্যে দিন কাটছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের
করোনাকালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলবে কি খুলবেনা, খুললেও কবে খুলবে, এখন নাকি আগামী বছর এই কয়েকটা প্রশ্ন সারাক্ষণ ছাত্রছাত্রী দের মনকে অশান্ত করে রেখেছে।এমন ই চিন্তার মধ্যে দিন কাটছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের।যেখানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে অনলাইন ক্লাস নিয়ে দ্বিমত আছে সেখানে তারা নিজেদের চিন্তার কথা তোলার কোন অর্থ দেখছেনা।
চাকরির কথা মাথায় রেখে পাবলিক এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় গুলো চায় যত দ্রত সম্ভব অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে কোর্স শেষ করে দিতে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় গুলো তাদের এই চাওয়া পূরণ করতে পারলেও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলো নানা কারণে পেরে ওঠে নি। কিন্তু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে কেউ একবার ও এই কথা ভাবেই নি। কেউ ভাবেনি তাদের ও চাকরির পরীক্ষা দিতে হবে, তাদের ও অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থা করতে হবে।
যেহেতু আমাদের দেশে বিষয়ভিত্তিক চাকরি কম তাই সবাই ছুটে সরকারি চাকরি, বিসিএস এগুলোর দিকে। প্রতিযোগিতা করে চাকরি পেতে হয়না, বলতে পারেন চাকরি ছিনিয়ে আনতে হয়। কিন্তু করোনার জন্য যদি সব থেকে বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থীর এক বছর নষ্ট হয় তাহলে তাদের এই ক্ষতিপূরণ করার সাধ্য হয়ত কারোই থাকবেনা।
কথা হচ্ছিল কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের রসায়ন বিভাগের এক ছাত্রের সাথে। তিনি তৃতীয় বর্ষে পড়াশুনা করছেন। কুশলাদি বিনিময়ের পর পড়াশুনার কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, পড়াশুনা শুরু করেছি বুঝতে শিখার আগে, শেষ হবে মনেহয় হুশ জ্ঞান গেলে। উনার কথা শুনে কিছুটা হাসির সঞ্চার হলেও উনার কথার ভাবার্থ টা বিশাল।
সেখান থেকে গেলাম ঐ কলেজেরি এক মহিলা শিক্ষার্থীর কাছে। পড়াশুনা নিয়ে কি ভাবছেন জানতে চাইলে বলেন, “আমরা ভেবে কি লাভ? জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বলে আমাদের কথা কেউ ভাবেনা। ভাবে যে আমাদের দিয়ে দেশের কোন উন্নতি হবেনা, আমরা ভাল কিছু করতে পারব না, কিন্তু সবাই তো এক না। অনেকেই ছাত্র হিসেবে অনেক ভাল, অনেকেরি আছে অনেক ভাল কিছু করার সম্ভাবনা। কিন্তু আমাদেরকে নিয়ে কারো কোন মাথা ব্যাথাই নেই। সবাই যখন অনলাইন ক্লাস করছে তখন আমরা ঘরে বসে ঘরের কাজ করছি। কিন্তু চাইলে তো আমাদের জন্য কিছু করা যেত তাইনা?”
রংপুর সরকারি কলেজের এক শিক্ষার্থী কে অনলাইন ক্লাসের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন “যে কোন জায়গার সরকারি কলেজে যারা পড়েন তাদের বাড়ি সাধারণত ঐ কলেজের পাশে বা পাশের কোন অঞ্চলেই হয়। অনলাইন ক্লাসের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে শুনেছি। চাইলে আমাদের কে আলাদা আলাদা ভাবে পড়িয়ে আমাদের পড়া গুলো শেষ করে দিতে পারত স্যারেরা। দরকার হলে আমরা তাদেরকে মাসিক বেতন দিতাম। পড়া শেষ হলে কলেজ খুললেই পরীক্ষা গুলো দিয়ে দিতে পারতাম। কিন্তু এসব ভেবে লাভ নাই। একটা বছর নষ্ট হল আরকি।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন ক্লাসেই নাকি কত ঝামেলা, ক্লাস হচ্ছেনা, সেখানে আমাদের কথা সরকার শুনবে এমন আকাশ কুসুম চিন্তা করতে চাইনা।”
Written By – সুমাইয়া ফেরদৌসী লাজুকী