জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত বিভিন্ন কলেজে পরীক্ষার ফরম পূরণে অতিরিক্ত ফি আদায় করার অভিযোগ
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত বিভিন্ন কলেজে স্নাতক প্রথম বর্ষ পরীক্ষার ফরম পূরণে অতিরিক্ত ফি আদায় করার অভিযোগ উঠেছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নির্ধারণ করে দেওয়া ফির দ্বিগুণ, তিনগুণ এমনকি চারগুণও ফি দিতে হচ্ছে অনেক শিক্ষার্থীদের। তবে এই অতিরিক্ত ফি আদায়ে এগিয়ে আছে এমপিওভুক্ত ও বেসরকারি কলেজগুলো।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা বলছেন, করোনার কারণে তাদের পরিবার এখন আর্থিক সংকটে পড়েছেন। এজন্য ফি অর্ধেক নেওয়ার প্রত্যাশা করেছিলাম। কিন্তু তার উল্টাটা ঘটছে। কলেজ কর্তৃপক্ষ অন্যায়ভাবে অতিরিক্ত ফি ধার্য করছে, যা তাদের উল্টো ‘গলার কাঁটা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ নিয়ে বৃহস্পতিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বরিশাল ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের সামনের সড়কে মানববন্ধন করেছেন প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা। ফরম পূরণে টাকা মওকুফসহ তিন দফা দাবি জানায় তারা।
সংশ্লিষ্ট কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছে, করোনা সংকটের কারণে কলেজের শিক্ষক-কর্মচারী এবং অন্যান্য খরচের জন্য এসব ফি নেওয়া হচ্ছে। এসব ফি আদায় না করলে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন দেওয়া যাবে না। আর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, নির্ধারিত ফিটা শুধুমাত্র জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফান্ডে জমা হবে। এর বাইরে অতিরিক্ত কোন ফি তাদের জমা হবেনা।
গত ৮ তারিখে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বদরুজ্জামান স্বাক্ষতির এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে স্নাতক প্রথম বর্ষ পরীক্ষার ফরমপূরণ শুরু হয়ে চলবে আগামী ২ মার্চ পর্যন্ত। আর ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার শেষ সময় আগামী ৪ মার্চ পর্যন্ত। ফি বাবদ মোট ১ হাজার ৮৭০ টাকা দেওয়া কথা ওই বিজ্ঞপ্তিতে করা হয়েছে।
এদিকে, বিভিন্ন কলেজে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নির্ধারণ করে দেওয়া ফির দ্বিগুণ, তিনগুণ এমনকি চারগুণও ফি আদায়ের তথ্য পাওয়া গেছে। দেশের বিভিন্ন সরকারি, এমপিওভুক্ত এবং বেসরকারি কলেজে খোঁজ নিয়ে এ তথ্য জানা যায়।
কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলাধীন কোড়েরপাড় আদর্শ ডিগ্রী কলেজে স্নাতক প্রথম বর্ষ পরীক্ষার ফরম পূরণে ৮ হাজার টাকা, রাজধানীর তেজগাঁও কলেজ ৭ হাজার টাকা, ইছামতী কলেজে ৬ হাজার টাকা এবং উত্তরা আনোয়ার মডার্ণ কলেজ ৫ হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছে। লক্ষীপুর রামগঞ্জ মডেল কলেজে ফরম পূরণে ৪ হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছে।
কোড়েরপাড় আদর্শ কলেজের অধ্যক্ষ মো. মনিরুল ইসলাম অতিরিক্ত ফি আদায়ের অভিযোগ স্বীকার করে জানায়, আমাদের কলেজে ৭টি বিভাগ রয়েছে প্রতিটি বিভাগের ৫ থেকে ৬ জন শিক্ষককে কলেজ নিজস্ব তহবিল থেকে বেতন দেয়, সরকার প্রতিটি বিভাগের মাত্র ২ জন শিক্ষকের বেতন দেয়। বাকি শিক্ষক এবং কলেজের অন্যান্য খরচের জন্যই এই ফি নেওয়া হচ্ছে।
এই কলেজের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, স্নাতকে ভর্তির সময় ৫ হাজার টাকা দিয়ে ভর্তি হতে হয়েছে তখন কলেজ অগ্রিম বেতন নিয়েছে। এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে ভর্তি ফি এর সাথে অগ্রিম কোন বেতন নেওয়া হয়নি বলেও জানান তিনি।
অতিরিক্ত ফি আদায়ের তালিকায় সরকারি কলেজেরও নাম রয়েছে। তার মধ্যে গাইবান্ধা সরকারি কলেজ ৪ হাজার ৫০০ বি.বাড়িয়া সরকারি কলেজ ৪ হাজার ৫০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে।
অতিরিক্ত ফি আদায়ের বিষয়ে না প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারি কলেজের এক অধ্যক্ষ বলেন, সব খরচ মিলিয়ে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৫০০ টাকা সরকারি কলেজে নিতে পারে। তাছাড়া খাতগুলোও উল্লেখ করে নিতে হবে, শুধুমাত্র ফরম পূরণের কথা বলে এতো টাকা নেওয়া যাবে না। আর বেসরকারি কলেজের ক্ষেত্রেও সমান নীতিমালা যে যে খাতে নেবে তা উল্লেখ করতে হবে।
এ বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বদরুজ্জামান বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, নির্ধারিত ফিটা শুধুমাত্র জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফান্ডে জমা হবে। এর বাইরে অতিরিক্ত কোন ফি তাদের জমা হবেনা। অতিরিক্ত ফি কেন নিচ্ছে সেটি সংশ্লিষ্ট কলেজ কর্তৃপক্ষ বলতে পারবে। তবে করোনার কারণে কলেজ বন্ধ থাকাতে শিক্ষার্থীদের কোন বেতন নিতে পারেনি, সেক্ষেত্রে এসব বেতনও এরসঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করতে পারে বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, করোনার কারণে অনেক বেসরকারি কলেজে শিক্ষকরা ১০ মাস বেতন পয়নি। আবার শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের অবস্থাও একই। আসলেই সবাই সংকটের মধ্যে আছেন।
তিনি আরও বলেন, বেসরকারি কলেজে সাধারণত পরীক্ষার সময় শিক্ষার্থীদের বেতন আদায় করে থাকে। সাধারণত অন্য সময় তারা নেয়না। তাই হয়তো ফরম পূরণের সময় এটাসহ নিচ্ছে তারা। তারা যদি ৭ হাজারের মতো শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নিয়ে থাকেন তাহলে তার মধ্যে আমাদের (জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের) ২ হাজারের মতো বাকি টাকাটা শিক্ষার্থীদের বেতন হিসেবে নিয়ে থাকতে পারে।
পীরগাছা কলেজ রংপুর….১০৭০০ টাকা ফি ধরছে….