জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ মানববন্ধনে বাঁধা
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান পরীক্ষাসহ সকল পরীক্ষা স্বাস্থ্যবিধি মেনে বহাল রাখার দাবিতে আজ (২৩ জানুয়ারি) সকাল ১১ টায় মানববন্ধনের ডাক দেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি আজিজুল হক কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। উক্ত মানববন্ধন কর্মসূচিতে বাঁধা দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। রোববার বেলা ১১টার দিকে কলেজ ক্যাম্পাসে আয়োজিত কর্মসূচিতে এ ঘটনা ঘটে।
মানববন্ধনে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তাদের অধ্যক্ষ শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন করার বিরোধিতা করে এবং তাদের স্মারকলিপি দেয়ার পরামর্শ দেন। এসময় কলেজ অধ্যক্ষের উপস্থিতিতে তাদের ব্যানার ছিনিয়ে নেয়া হয়। পরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও তাদের কর্মসূচিতে বাঁধা প্রদান করে। এসময় উভয় পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডার ঘটনা ঘটে।
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমানসহ সকল স্থগিত পরীক্ষা দ্রুত সম্পন্নের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা মানববন্ধনে দাঁড়ান। এসময় কলেজ অধ্যক্ষ মানববন্ধন না করে আলোচনায় অংশগ্রহণের কথা জানান। তারপরেও কিছু শিক্ষার্থী তাদের কর্মসূচি চালিয়ে নেয়ার কথা বললে অধ্যক্ষের উপস্থিতিতে তাদের ব্যানার কেড়ে নেয়া হয়। এরপরেই সাধারণ শিক্ষার্থীরা ব্যানার ছিনিয়ে নেয়াসহ কর্মসূচিতে বাঁধা দেয়ার প্রতিবাদ জানান।
এসময় বক্তারা বলেন, ‘আমরা সাধারণ শিক্ষার্থী শান্তিপূর্ণভাবে মানববন্ধন করতে এসেছি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা নিয়ে আসছিল। ইতিমধ্যে অনার্স চতুর্থ বর্ষের ছয়টি পরীক্ষা শেষ হয়েছে। মাত্র তিনটি পরীক্ষা বাকি আছে। এরই মধ্যে চলমান পরীক্ষা স্থগিত করেছে কর্তৃপক্ষ।’
শিক্ষার্থীদের দাবি, দেশে এখন সব ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক কার্যক্রম চলমান। শুধু পরীক্ষা স্থগিত কেন? শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ কেন? তাদের স্বপ্ন দ্রুত পরীক্ষা শেষ করে কর্মস্থলে গিয়ে পরিবারের হাল ধরবেন।
কর্মসূচিতে অংশ নেয়া এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করার জন্য এসেছিলাম। কিন্তু আমাদের অধ্যক্ষ স্যার মানববন্ধন করতে না দিয়ে কর্মসূচির ব্যানার কেড়ে নেন। এমনকি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমাদের কর্মসূচিতে বাঁধা প্রদান করে। সারাদেশে যদি সব কিছু চলতে পারে তাহলে আমরাও স্বাস্থ্যবিধি মেনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় অংশ নিতে চাই।’
উপস্থিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা শিক্ষার্থীদের অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, সাধারণ শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন কর্মসূচীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্ররোচনায় এবং অপশক্তি একাত্মতা প্রকাশ করেছিল। যখন সাধারণ শিক্ষার্থীরা দেখল তাদেরকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করছে তখন তারা তাদের কর্মসূচি স্থগিত করে নেয়। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ তাদের এ কর্মসূচিতে একাত্মতা প্রকাশ করেছে এবং ভবিষ্যতেও তাদের পাশে থাকার ব্যাপারে জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে সরকারি আজিজুল হক কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর শাহজাহান আলী জানান, করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সরকার সারাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছেন। এর মধ্যেই কিছু শিক্ষার্থী পরীক্ষা নেয়ার দাবিতে ক্যাম্পাসে জড়ো হয়েছিল। পরে তাদের ডেকে নিয়ে আন্দোলন না করে স্মারকলিপি দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। ‘তাদের কর্মসূচিতে কোন প্রকার বাঁধা প্রদান এবং ব্যানার কেড়ে নেয়া হয়নি।
ছাত্রলীগ ডেকে এনে শিক্ষার্থীদের হুমকি-ধমকি দিয়েছেন’ এমন অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ বলেন, ‘না, না, কোনোক্রমেই না। বিষয়টি ভিত্তিহীন।
প্রসঙ্গত, করােনার সংক্রমণরােধে আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। সরকারের সিদ্ধান্ত মােতাবেক জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল পরীক্ষা পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত স্থগিত ঘােষণা করা হয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান পরীক্ষাগুলো নেওয়ার দাবিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন করেছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২০২০ সালের অনার্স ৪র্থ বর্ষ পরীক্ষা চলমান রয়েছে। গত ২৯ ডিসেম্বর ২০২১ থেকে শুরু হয়ে আগামী ০৬ ফেব্রুয়ারি এ পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা ছিল। এদিকে ডিগ্রি ১ম বর্ষের পরীক্ষা ৩০ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে উক্ত পরীক্ষা ১ ফেব্রুয়ারিতে শেষ হওয়ার কথা ছিল। এছাড়াও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনার্স ১ম বর্ষের ব্যবহারিক পরীক্ষা ও বিভিন্ন অনার্স মাস্টার্স প্রফেশনাল কোর্সের পরীক্ষা চলমান রয়েছে।