জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়

কলেজগুলােতে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বদ্ধপরিকর: উপাচার্য 

সারাদেশে অধিভুক্ত কলেজগুলােতে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বদ্ধপরিকর বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মাে. মশিউর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমরা ছাত্র সংসদে বিশ্বাসী। ছাত্র নেতৃত্বে বিশ্বাস শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে নেতৃত্ব বের হয়ে আসুক সেটি আমরা চাই। কলেজ শিক্ষার মানােন্নয়নে তারা শিক্ষকদের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করবে সে ব্যাপারে আমরা আগ্রহী। কিন্তু কোনাে সংগঠনের নামে কেউ যদি শিক্ষকদের সঙ্গে অসদাচরণ করে, পরীক্ষার হলে আধিপত্য বিস্তার করে, অর্থনৈতিক বিষয়ে সংশ্লিষ্ট হয়; সেটি আমরা কোনােমতেই বরদান্ত করবাে না। সেটি যতাে বড় প্রভাবকই হােক, ক্ষমতাশালী হােক। এসব বিষয়ে অবহিত করলেই প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কারণ শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বদ্ধপরিকর।

আজ শুক্রবার (৮ এপ্রিল) ঝালকাঠি সরকারি কলেজ আয়ােজিত সিইডিপি-এর অধীন বাস্তবায়িত সাব-প্রজেক্ট অফিস কার্যক্রম পরিদর্শন ও মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন উপাচার্য।

শিক্ষকদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার বিষয়ে উপাচার্য ড. মশিউর রহমান আরও বলেন, ‘ছাত্র নেতৃত্ব বা ছাত্র সংসদ- যেটাই হােক। তারা যদি সৃজনশীল কিছু করে, শিক্ষার মানােন্নয়নে কোনাে পরিকল্পনা দেয় তাহলে সেটিকে গ্রহণ করতে যেন আমরা অভ্যন্ত থাকি। কিন্তু অর্থনৈতিক, পেশিশক্তি, নিয়মশৃঙ্খলা পরিপন্থী কোন বিষয় যদি তাদের কোনাে অবস্থান থাকে তাহলে সে বিষয়েজাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান অত্যন্ত শক্ত এবং দৃঢ়। পাশাপাশি উপাচার্য কলেজে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে স্থানীয় পর্যায়ের নেতৃবৃন্দকেও যথাযথ ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।

উপাচার্য আরও বলেন, ‘একজন শিক্ষক ক্লাসরুমে পড়ান। তাকে একসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রণালয়, বাের্ড এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়- এই তিনটির সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে হয়। আমরা একেক সময় একেক নিয়ম করি। এরমধ্যে ব্যাপকভাবে সমন্বয়হীনতা কাজ করে। আমরা সবার সঙ্গে কথা বলে অভিন্ন নীতিমালা করার বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করছি। এটি করতে পারলে যে সমন্বয়হীনতা রয়েছে তা কেটে যাবে। মন্ত্রণালয়, বাের্ড এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় মিলে একটা অভিন্ন নিয়ম করবে সেটা শিক্ষক নিয়ােগথেকে শুরু করে সব জায়গায় মানা হবে।

শিক্ষা ক্যাডারদের প্রশাসনে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালনের সক্ষমতার কথা উল্লেখ করে উপাচার্য বলেন, ‘ক্যাডার সার্ভিসেও বৈষম্য রয়েছে। বিপিএটিসিতে সব ক্যাডারদের প্রশিক্ষণ থাকলেও শিক্ষা ক্যাডারের তেমন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই। এটি বৈষম্যমূলক বিষয়। অথচ শিক্ষকদের প্রশিক্ষণটা আমাদের অপরিহার্য ছিল। তবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সিইডিপির আওতায় শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। এটির পরিসর সামনে আরাে বাড়বে। এটি খুবই ফলপ্রসূ একটি প্রজেক্ট।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা গ্রহণের কথা উল্লেখ করে উপাচার্য বলেন, ‘আমাদের সংসারটি অনেক বড়। আমাদের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। কেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে লাখ লাখ টাকা খরচ করে লেখা-পড়া করা হয়তাে তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। আমরা তাদেরকে সেদিকে ঠেলে দিতে চাই না। তাদেরকে আমাদের মধ্যে রেখে পরীক্ষা নেয়ার ব্যবস্থা করি। এসব কার্মযজ্ঞ পরিচালনায় আপনাদের কষ্ট হয় এটা সহজে অনুমেয়। তবে এটি একদিকে আমাদের গৌরব। কারণ পাশের দেশ শ্রীলংকার দিকে তাকান, দেখুন অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যন্ত হয়ে পড়েছে। নেপালের দিকে তাকান। পাকিস্তানের কথা, আফগানিস্তানের কথা ভাবুন। বার্মার কথা ভাবুন। এই অঞ্চলে আমরা কিন্তু ব্যতিক্রম। যারা স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভাসিত। আমাদের ৩০ লাখ মানুষ নিজের জীবন বিসর্জন দিয়েছেন। দু’ লক্ষ মা-বােন সন্ত্রম হারিয়েছেন। তাদের ত্যাগের বিনিময়ে আমরা এই দেশ পেয়েছি। এই দেশে যদি আমরা ৮ ঘণ্টার পরিবর্তে ১২ঘণ্টা কাজ করি, কিংবা যদি ছুটির দিন না পাই, তাহলে কী এমন ক্ষতি হবে! আমি আপনাদেরকে জাতিরাষ্ট্রের স্বার্থে, প্রজন্মের স্বার্থে

অনুরােধ করবাে এটি আপনারা মেনে নেবেন। কারণ আমাদের এতাে বেশি শিক্ষার্থী, যদি সময়মতাে পরীক্ষা না নেই তাহলে আবার তারা সেশনজটে পড়বে। আপনাদের ত্যাগের কারণে যদি একজন নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান সময় মতাে পড়াশােনা শেষ করে চাকরি পায়, সেটির যে তুপ্তি তা অপরিমেয়। অন্যরা কে কি করলাে সেটি বড় কথা নয়। কারণ শিক্ষক যখন রাস্তা দিয়ে হেঁটে যায় তাঁর হয়তাে পাজেরাে গাড়ি নেই, চাকচিক্য নেই, কিন্তু শিক্ষকের প্রতি যে শ্রদ্ধা সেটি সমাজের সবাই অবনতমস্তকে করে, সেটি ভেতর থেকে করে, মন থেকে করে। শিক্ষকের জন্য শিক্ষার্থীর যে শ্রদ্ধা সেটি আর কোনাে কিছুর সাথে তুলনা হয় না।

তরুণ প্রজন্মকে দক্ষ করে গড়ে তােলার আহ্বান জানিয়ে উপাচার্য বলেন, ‘তরুণ প্রজন্ম আমাদের সম্পদ। তাদেরকে এখনই তৈরি করতে হবে। কারণ ভবিষ্যতে বাংলাদেশে বয়ােঃবৃদ্ধ মানুষের সংখ্যা বেড়ে তরুণের সংখ্যা কমে আসবে। আগামি ৩০ বছর পরে আর এই সুযােগ থাকবে না। সে কারণেই এখন দিনরাত কাজ করার তাগিদটা আসে। স্বাধীনতার ৫০ বছরে আমরা এখন যেখানে দাঁড়িয়ে, সেই বাংলাদেশ বিশ্বে এখন ব্রান্ড। স্বাধীনতার শতবর্ষে হয়তো যেটুকু জরাজীর্ণতা রয়েছে তাও থাকবে না। শিক্ষার্থীদের বেকার হয়ে ওঠার প্রবণতা থাকবে না। আগামি শতবর্ষে আমাদের তরুণ প্রজন্ম যে মানবিক হবে, স্বাধীন চেতা থাকবে-এই বােধগুলাে আমাদের মধ্যে ঢুকে গেছে। ভাবুন এটি সেই দেশ, যেখানে একজন জঙ্গী সন্তান তৈরি হলে বাবা-মাও তার মরদেহ গ্রহণ করতে চায় না। এটা হচ্ছে বাংলাদেশের শক্তি। এটা বাঙালির মধ্যবিত্ত শ্রেণির চিত্র। এটা যখন তার সচেতনতা হয়, দেশপ্রেম হয়, এটা যখন অশুভ কিছুর প্রতিবাদের ভাষা হয়, তখন সেই দেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে না, এট আমি বিশ্বাস করি না। এটি অসম্ভব সুন্দর একটি দেশ। আমরা সমুদ্র জয় করেছি। সমুদ্র জলরাশিতে অনেক কিছু করার আছে।

আমাদের তরুণ প্রজন্ম সেটি করবে। আমাদের সাধারণ মানুষ রাজনীতি সচেতন। এটা আধুনিকতা। সুতরাং যতটুকু জরাজীর্ণতা আছে সেটি কাটিয়ে আমরা সবুজে-শ্যামলে ভরা পবিত্র মাতৃভূমিকে গড়ে তুলবাে, যেখানে সবাই হবে মর্যাদাবান বিশ্ব নাগরিক। ঝালকাঠি সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মাে. ইউনুস আলী সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বরিশাল আঞ্চলিক কেন্দ্রের পরিচালক ড. অলক কুমার সাহা প্রমুখ।

 

শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে EducationsinBD.com এর ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন YouTube Channel জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল নোটিশ দেখুন এখানে একসাথে National University Notice Board অনার্স /মার্স্টাস/ ডিগ্রি পরীক্ষার প্রিমিয়াম সাজেশন পেতে ফেসবুক পেজে মেসেজ দিন। https://www.facebook.com/PremiumSuggestion আমাদের ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করুন Facebook Group

Leave a Reply