জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে শিক্ষা ও গবেষণায় সম্পর্ক গড়তে আগ্রহী ইরানের আল মুস্তাফা বিশ্ববিদ্যালয়।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে শিক্ষা, সংস্কৃতি ও গবেষণা ক্ষেত্রে সম্পর্ক গড়তে আগ্রহী ইরানের আল-মুস্তাফা মুস্তাফা বিশ্ববিদ্যালয়।। এ উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়টির ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. আলী আব্বাসীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।
প্রফেসর ড. আলী আব্বাসী বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কাজ করছে আল মুস্তাফা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে শিল্প, সাহিত্য, কলা, ভাষা, কারিগরি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে আমরা কাজ করতে চাই। দুই বিশ্ববিদ্যালয় যৌথভাবে এসব বিষয়ে গবেষণা এবং উচ্চতর শিক্ষা বিনিময়ে কাজ করলে দুই দেশের মধ্যকার আন্তঃযোগাযোগ ও বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় শিক্ষার্থীরা দক্ষতা অর্জন করতে পারবে বলেও উল্লেখ করেন ড. আব্বাসী।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বমানের শিক্ষা নিশ্চিতে সবসময়ই আগ্রহী। আল-মুস্তাফা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি চাইলে আমরা শিক্ষা, সংস্কৃতি ও গবেষণা বিনিময়ে কাজে সম্পৃক্ত হব। এরফলে আমাদের শিক্ষার্থীরাও সমৃদ্ধ হবে। তবে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট গাইডলাইন থাকতে হবে, যাতে কাজের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকে।
Read more-জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজের সকল শিক্ষার্থীর ই-বুক, ই-জার্নাল ও ই-লাইব্রেরি একসেস নিশ্চিত করা হবে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান। তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল সকল সুবিধা আমরা শিক্ষার্থীদের দৌরগোড়ায় পৌঁছে দিতে চাই। যাতে তারা সহজেই লার্নিং ম্যাটেরিয়ালস এর সুবিধা ভোগ করতে পারে। একারণে আমরা গোটা লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের (এলএমএস) ডিপিপি নিয়ে কাজ করছি। এটি চূড়ান্ত হয়ে গেলে শিক্ষায় বড় পরিবর্তন আসবে। ইতোমধ্যে আমরা গুগল ওয়ার্কস্পেইস ফর এডুকেশনের আওতায় ৪ লক্ষ শিক্ষার্থীকে নতুন অফিসিয়াল ই-মেইল আইডি দিয়েছি। পর্যায়ক্রমে সকলকে এই নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হবে।’
আজ বুধবার (৫ এপ্রিল) বিকেলে অনলাইন প্লাটফর্ম জুম অ্যাপের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত কলেজ এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (সিইডিপি) এর অধীন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক প্রশিক্ষণের ৩০তম ব্যাচের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন উপাচার্য ড. মশিউর রহমান। উপাচার্য প্রশিক্ষণে সমাপনী বক্তব্যের শুরুতেই বঙ্গবাজারে সংঘটিত ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের প্রতি সমবেদনা জানান এবং তাদের পাশে থাকার জন্য বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘গুলিস্তানের বঙ্গবাজারে যে ঘটনা ঘটেছে তাতে আমরা বিষণ্ন, শোকাহত। তবে এ বিষয়ে যেন আমরা আরও বেশি সচেতন ও সতর্ক থাকতে পারি সে দিকে নজর দিতে হবে।
দেশের প্রথিতযশা সমাজবিজ্ঞানী ড. মশিউর রহমান বলেন, ‘আমরা ব্লেন্ডেড এডুকেশনের দিকে যাচ্ছি। আগামী ২0 /50 বছরের পরে শিক্ষা ব্যবস্থা কোন দিকে যাবে আমরা কেউ জানি না। ফিজিক্যাল স্ট্রাকচার আদৌ প্রয়োজন হবে কিনা সেটি ভাবনার বিষয়। সবকিছু মিলিয়ে আমাদের মাস্টার প্ল্যান করতে হবে। সেই মাস্টার প্ল্যানও আগামী ৫০ বছরকে সামনে রেখে করলে হবে না। কারণ সময় খুব দ্রুত পাল্টে যায়। শিক্ষা এবং শিক্ষা উপকরণসহ যাবতীয় ব্যবস্থাপনা ঠিক ২০ বছর পরে কোথায় গিয়ে নতুন শেইফ নিবে তা আমার কেউ জানি না। সুতরাং টেকসই পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য বলেন, ‘বাঙালির আত্মশক্তি বা আত্মবিকাশের পিছনে প্রতিটি মানুষের অনুপ্রেরণা থাকে, সামর্থ্য থাকে, দক্ষতা থাকে। নতুনকে গ্রহণের সাহস থাকে, প্রত্যয় থাকে। এটি সত্যিকার অর্থেই বাঙালির বড় রকমের বৈশিষ্ট্য। যে কারণে স্বাধীনতার ৫০ বছরে নানা বাস্তবতা, অগণতান্ত্রিক পথ ও সামরিক শাসনের যাঁতাকল পেরিয়েছি। তদুপরি আমরা যতটুকু সময় মুক্তবুদ্ধি চর্চার জন্য পেয়েছি, তার মধ্যে আমরা সেটিকে অগ্রসর করতে পেরেছি। অনেকে হতাশার কথা বলেন, নেতিবাচক কথা বলেন। আমি সব সময় বাংলাদেশের সম্ভাবনার পক্ষে। বাংলাদেশের শক্তিমত্তার পক্ষে। বাঙালির বীরত্বের পক্ষে। মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামে আমাদের আত্মশক্তি, আত্মমর্যাদা, আত্মসম্মান বৃদ্ধি পেয়েছে। একটি জাতিরাষ্ট্র সৃষ্টিতে ৩০ লক্ষ মানুষ আত্মাহুতি দিয়েছে। দু’ লক্ষ মা-বোনের নির্যাতনের বদলে যখন পতাকা নির্মিত হয় সেই দেশ অসীম সাহসে এবং অসীম সম্ভাবনায় ভরে উঠবে- এ আমার দৃঢ় বিশ্বাস। বাংলাদেশ উন্নয়নের পথে যাচ্ছে। শিক্ষার বিকাশের পথে যাচ্ছে।’
শিক্ষকদের উদ্দেশে উপাচার্য ড. মশিউর রহমান আরও বলেন, আপনারা যারা প্রশিক্ষণ নিয়ে কলেজে ফিরে যাচ্ছেন অর্জিত জ্ঞান অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে দিন। নতুন নতুন প্রস্তাবনা তৈরি করুন। কলেজ কেন্দ্রিক সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, প্রশিক্ষণ আয়োজন করুন। বাজেট পেশ করুন। আপনাদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। আমরা চাই সারা দেশের কলেজ যেন প্রশিক্ষণের আওতায় চলে আসে। আঞ্চলিক পর্যায়ে কাজগুলো ছড়িয়ে পড়লে আমরা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌছাতে পারবো।
বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক প্রশিক্ষণের এই ব্যাচের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম গত ৯ মার্চ থেকে শুরু হয়। এই প্রশিক্ষণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজের মোট ১৬০ জন শিক্ষক অংশগ্রহণ করেন। ২৮দিনব্যাপী চলা প্রশিক্ষণের আজ ৫ এপ্রিল ছিল। সমাপনী দিন। এই সমাপনী অনুষ্ঠানে স্নাতকোত্তর শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের ডিন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ বিন কাশেমের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. নিজামউদ্দিন আহমেদ, ট্রেজারার প্রফেসর আবদুস সালাম হাওলাদার, সিইডিপির প্রজেক্ট ডাইরেক্টর (পিডি) মোহাম্মদ খালেদ রহিম।