শিক্ষা খবরশিক্ষা নিউজ

প্রায় পৌনে আট লাখ শিক্ষককে ডিসেম্বরে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে

শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন ব্যবস্থায় বড় রকমের পরিবর্তন এনে চালু হতে যাওয়া নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে সবচেয়ে বড় নিয়ামক শক্তি হবেন শিক্ষকেরা। তাই শিক্ষকদের দক্ষ না করে এটি চালু করলে বুমেরাং হওয়ার আশঙ্কা আছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) শীর্ষ কর্মকর্তাও বলছেন, এই বাস্তবতা মাথায় রেখে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের প্রায় পৌনে আট লাখ শিক্ষককে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে পাঁচ দিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে প্রশিক্ষণের প্রাথমিক পথরেখাও ঠিক করা হয়েছে।

 

গত ৩০ মে প্রাক্-প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তরের নতুন শিক্ষাক্রমের রূপরেখার আনুষ্ঠানিক অনুমোদন দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটি (এনসিসিসি)। এর মাধ্যমে নতুন শিক্ষাক্রমের আইনি ভিত্তি তৈরি হলো।

 

অবশ্য ৬২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরীক্ষামূলকভাবে ষষ্ঠ শ্রেণির নির্দিষ্টসংখ্যক শিক্ষার্থীর জন্য নতুন শিক্ষাক্রম চালু করা হয়েছে।

Read more old news: দেশের বিভিন্ন স্তরের শিক্ষায় পাঠদানরত শিক্ষকদের মানের বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে রয়েছে অনেক বছর ধরেই। এ নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে খোদ শিক্ষার্থীদের মধ্যেও, যার ব্যতিক্রম নয় কারিগরি শিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষকরাও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চের এক সাম্প্রতিক গবেষণায়ও দেখা গিয়েছে এর প্রতিফলন।

গবেষণায় উঠে আসে, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কোর্স পাস করে বের হওয়া শিক্ষার্থীদের ৯২ শতাংশই তাদের শিক্ষকদের মান নিয়ে অসন্তুষ্ট। বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বণিক বার্তা পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, সম্প্রতি কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের পক্ষ থেকে এইচএসসি (বিজনেস ম্যানেজমেন্ট) কোর্সের মান যাচাই ও বাজার উপযোগী করার লক্ষ্যে একটি গবেষণা প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। গবেষণাটি পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয় ঢাবির ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চকে।

গবেষণার অংশ হিসেবে দেশের ২৮টি জেলার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জরিপ চালায় গবেষক দল। জরিপে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও চাকরিদাতাদের কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা হয়। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ‘আ ট্রেসার স্টাডি ফর মেকিং এইচএসসি (বিজনেস ম্যানেজমেন্ট) কোর্স মোর মার্কেট রেসপনসিভ অ্যান্ড প্র্যাকটিক্যাল ওরিয়েন্টেড’ শীর্ষক ওই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কোর্স জরিপে পাস করে বের হওয়া ৫৮৪ জনের কাছে শিক্ষকদের মান নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তাদের মধ্যে ৯২ দশমিক ৫ শতাংশই শিক্ষকের মান নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এর মধ্যে ৫৩ দশমিক ৫ শতাংশ বলেছেন, শিক্ষকের মান খুব খারাপ। ৩৯ শতাংশ বলেছেন শিক্ষকদের মান খারাপ।

এছাড়া শিক্ষকের মান মোটামুটি বলে মত দিয়েছেন ৬ দশমিক ৯ শতাংশ। আর শিক্ষকদের মান ভালো বলে মত দিয়েছেন মাত্র শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। খুব ভালো বলে মত দিয়েছেন শূন্য দশমিক ২ শতাংশ শিক্ষার্থী।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিক্ষার গুণগত মান অনেকাংশেই নির্ভর করে শিক্ষকের যোগ্যতার ওপর। যদিও শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে নিয়োগে অনিয়ম ও নিয়মিত প্রশিক্ষণের অভাবে তাদের সে যোগ্যতা ও দক্ষতা হয়ে পড়ছে প্রশ্নবিদ্ধ। কারিগরি শিক্ষাসংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের মান নিয়ে পরিচালিত গবেষণাটিতে এরই প্রতিফলন ঘটেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

জরিপে শিক্ষার্থীর কাছ থেকে শিক্ষকদের কারিগরি দক্ষতা বিষয়ে জানতে চাইলেও উঠে এসেছে বেশ হতাশাব্যঞ্জক চিত্র। স্কিল লেভেল নিয়ে করা প্রশ্নের জবাবে ৪১ দশমিক ৩ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, শিক্ষকদের দক্ষতার মান খুবই খারাপ। ৪২ দশমিক ১ শতাংশের মতে শিক্ষকদের দক্ষতার মান খারাপ। এ দক্ষতার মান মোটামুটি বলে অভিমত দিয়েছেন ১৫ দশমিক ৭ শতাংশ। ভালো বলে মত দিয়েছেন মাত্র শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ। শিক্ষকদের কারিগরি দক্ষতা খুব ভালো বলে মনে করছেন শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ শিক্ষার্থী।

শিক্ষকের আচরণেরও নেতিবাচক মূল্যায়ন করেছেন পাস করা শিক্ষার্থীদের অধিকাংশ। এক্ষেত্রে ৪৭ দশমিক ৩ শতাংশ শিক্ষার্থীর মতে, শিক্ষকদের আচরণ খুব খারাপ। শুধু খারাপ বলে মনে করছেন ৩৯ শতাংশ। শিক্ষকদের আচরণ মোটামুটি বলে মত দিয়েছেন ১২ দশমিক ৯ শতাংশ। এছাড়া শিক্ষকদের আচরণ ভালো বলেছেন মাত্র শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ। খুব ভালো বলে মত দিয়েছেন শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ।

গবেষণাসংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষকের মান ও আচরণ নিয়ে জরিপের ফল খুবই ভয়াবহ। গবেষক দলের নেতৃত্ব দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির শিক্ষক ড. মোহাম্মাদ শাহাদাত হোসেন সিদ্দিকী। তিনি বলেন, সাধারণ কোর্সের বাইরে কারিগরি কোর্সের মূল উদ্দেশ্য ছিল দক্ষ জনবল তৈরি। তবে সময়ের আবর্তনে দেখা গেছে, সাধারণ কোর্স করা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কারিগরি কোর্স করা শিক্ষার্থীদের দক্ষতার মাত্রাই আলাদা করা যাচ্ছে না।

অর্থাৎ লক্ষ্য ভালো থাকলেও কারিগরি কোর্স করা শিক্ষার্থীদের সে লক্ষ্য অনুযায়ী গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। এর মূলত দুটি কারণ। একটি হচ্ছে, মানসম্মত শিক্ষকের অনুপস্থিতি ও পর্যাপ্ত অবকাঠামোর অভাব। শিক্ষকের মানের বিষয়ে শিক্ষার্থীরা যা বলেছেন, তা সত্যিই ভয়াবহ। আর গবেষণার কাজে পরিদর্শনে গিয়ে অবকাঠামোর যে চিত্র দেখেছি, সেটি আরো ভয়াবহ। এমন ল্যাব রয়েছে, যেখানে একটি কম্পিউটারও সচল নেই। অভিযোগ রয়েছে, শুধু অবকাঠামো সাজানোর জন্যই নষ্ট কম্পিউটার এনে সাজিয়ে রাখা হয়েছে।

শিক্ষকের জ্ঞানগত দুর্বলতার কারণে শিক্ষার্থীরাও দক্ষ হয়ে গড়ে উঠতে পারছেন না। চাকরির বাজারে গিয়ে তাদের বেশকিছু সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এসব সমস্যার মধ্যে রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানের দূরত্ব, কম্পিউটার জ্ঞানের অভাব, গণিত ও ইংরেজিতে অদক্ষতা, উপস্থাপনায় দুর্বলতা, কারিগরি দক্ষতায় ঘাটতি ও অভিজ্ঞতা না থাকা ইত্যাদি।

চাকরির বাজার উপযোগী করে গড়ে তুলতে না পারায় কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কোর্স করেও শিক্ষার্থীদের সিংহভাগই বেকার থাকছেন। জরিপে ২০১৪ সালে কোর্স সম্পন্ন করে বের হওয়া পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বললে জানা যায়, তাদের ৮৪ শতাংশই এখনো বেকার।

শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে EducationsinBD.com এর ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন YouTube Channel জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল নোটিশ দেখুন এখানে একসাথে National University Notice Board অনার্স /মার্স্টাস/ ডিগ্রি পরীক্ষার প্রিমিয়াম সাজেশন পেতে ফেসবুক পেজে মেসেজ দিন। https://www.facebook.com/PremiumSuggestion আমাদের ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করুন Facebook Group

Leave a Reply