শিক্ষা খবরশিক্ষা নিউজ

এসএসসি-এইচএসসির জিপিএ নম্বর ছাড়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা

এসএসসি-এইচএসসির জিপিএ নম্বর ছাড়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা! প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রাপ্ত জিপিএর ভিত্তিতে একটি নির্দিষ্ট নম্বর যোগ করা হলেও এবার তা না করার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।

মহামারির করোনাভাইরাসের কারণে সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকির কারণে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ না থাকায় গত সপ্তাহেই শতভাগ শিক্ষার্থীকে পাশ করিয়ে দেয় সরকার। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মণি জানান, জেএসএসি এবং এসএসসি পরীক্ষার গড় ফলাফলের ভিত্তিতেই এবার এইচএসসির ফলাফল মূল্যায়ন হবে।

ফলে নতুন পদ্ধতিতে এসএসসি এবং এইচএসসি’র নম্বর ছাড়াই স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা নিতে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।

সূত্র অনুযায়ী, চলতি বছর দেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ই ইউজিসি’র অধীনে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেবে। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় আলাদাভাবে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরীক্ষা নেবে।

সমন্বিত বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার আহ্বায়ক এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মিজানুর রহমান জানান, এবার লিখিত পরীক্ষার ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে।

তিনি বলেন, “এ বছরের ভর্তি পরীক্ষায় আমরা এসএসসি এবং এইচএসসি’র ফলাফলের নম্বর বিবেচনা করবো না। ভর্তি পরীক্ষার ক্ষেত্রে পূর্বের দুই পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল মূল্যায়ন না করার এটা সবচেয়ে ভালো সুযোগ।”

তিনি বলেন, “এই বিষয়টি নিয়ে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সঙ্গে আমি আলোচনা করবো।”

অধ্যাপক মিজানের সঙ্গে একমত পোষণ করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগম বলেন, শিক্ষার্থীদের ভালোর স্বার্থে ভর্তি পরীক্ষায় এসএসসি এবং এইচএসসি’র নম্বর বাদ দেওয়ার কোনো বিকল্প নেই।

তিনি বলেন, “আগামী ১৫ অক্টোবর আমরা উপাচার্যদের একটি বৈঠক ডেকেছি। সেখানে এ বিষয়ে আমরা বিস্তারিত আলাপ করবো। আমাদের অবস্থান হলো, ভর্তিচ্ছুদের বিগত দুটি পাবলিক পরীক্ষার নম্বর বাদ দিয়ে লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে মেধাবীদের বের করে নিয়ে আসা।”

চলতি বছর সরকারের সিদ্ধান্তের কারণে ১৩ লাখ এইচএসসি পরীক্ষার্থী পাশ করেছে। পরীক্ষা ছাড়াই শতভাগ পাশের এমন ঘটনা দেশের ইতিহাসে প্রথম। সরকারের এ সিদ্ধান্তের কারণে শিক্ষার্থীদের প্রায় শতভাগই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার জন্য আবেদন করতে পারবে।

তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশের হার ৭০ শতাংশ। এই সময়ে গড়ে ১২ লাখ ১৭ হাজার শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৮ লাখ ৫৭ হাজার পাশ করলেও প্রতিবছর ফেল করেছে প্রায় ৩ লাখ ৬০ হাজার শিক্ষার্থী।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির আবেদনের জন্য নুন্যতম জিপিএ ২.৫০ হওয়ায় প্রতিবছরই অন্তন্ত ১ থেকে ২ লাখ শিক্ষার্থী খারাপ ফলাফল করায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য আবেদনই করতে পারেন না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় মাধ্যমিকের ফলাফলের ভিত্তিতে ৩০ নম্বর এবং উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফলের ভিত্তিতে ৫০ নম্বর যোগ হয় জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, “বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা অবশ্যই এই নম্বর বাদ দেওয়ার বিষয়ে কথা বলবো।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবগুলো ইউনিটে ২০০ নম্বরের ভর্তি পরীক্ষা হয় যেখানে ১২০ নম্বরের লিখিত এবং এমসিকিউ পরীক্ষা হলেও ৮০ নম্বর বরাদ্দ থাকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফলের ভিত্তিতে।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন, আসন্ন ভর্তি পরীক্ষায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফলের ভিত্তিয়ে দেওয়া নম্বর যোগ করা কোনো ভালো সিদ্ধান্ত হবে না।

তিনি বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যরা আমাকে ফোন দিয়েছেন এবং পরামর্শ চেয়েছেন। তারা প্রত্যেকেই এসএসসি এবং এইচএসসির মার্কস বাদ দেওয়ার পক্ষে।”

অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের মতো শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদও জানিয়েছেন, ভর্তি পরীক্ষার নতুন এই পদ্ধতি নিয়ে তারা বর্তমানে ভাবছেন এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করতে সিদ্ধান্ত নেবেন।

তথ্য অনুযায়ী, দেশের শীর্ষ চারটি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের পূর্বশর্ত হিসেবে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন বিজ্ঞান, গণিত এবং ইংরেজির ফলাফল বিবেচনা করে। তবে তারা আলাদাভাবে ভর্তি পরীক্ষার নেয়। এ চারটি বিশ্ববিদ্যালয় হল- বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), রাজশাহী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট), খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েত) এবং চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)।

এবার চার ধাপে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম তিন ধাপে প্রকৌশল, কৃষি ও সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তিপরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিপরীক্ষা আলাদাভাবে অনুষ্ঠিত হবে।”

দেশের ৩৯টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষে শিক্ষার্থীদের ভর্তির জন্য প্রায় ৬০ হাজার আসন রয়েছে।

দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড

শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে EducationsinBD.com এর ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন YouTube Channel জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল নোটিশ দেখুন এখানে একসাথে National University Notice Board অনার্স /মার্স্টাস/ ডিগ্রি পরীক্ষার প্রিমিয়াম সাজেশন পেতে ফেসবুক পেজে মেসেজ দিন। https://www.facebook.com/PremiumSuggestion আমাদের ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করুন Facebook Group

Leave a Reply