পরীক্ষা কিছুটা দেরি করে নেয়া হলেও সমস্যা হবে না: শিক্ষামন্ত্রী
করোনাভাইরাসের ঝুঁকি কমলে তবেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। সেক্ষেত্রে পরীক্ষা যদি কিছুটা দেরি করেও নেওয়া হয়, তাতে সমস্যা হবে না বলে মনে করেন তিনি।
স্কুল খুলে দিতে সরকারের পরিকল্পনাকে সফল করার উদ্দেশ্যে ১৫টি শীর্ষস্থানীয় জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার উদ্যোগে ‘নিরাপদে ইশকুলে ফিরি’ প্রচারাভিযানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেছেন।
বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে এই অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “পুরোপুরি অবস্থার ওপর নির্ভর করবে, আমরা কি ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি বা শেষ দিকে স্কুল খোলার একটা সুযোগ পাব, নাকি মার্চ মাসে খোলার চেষ্টা করব?
“মোটকথা একেবারে গোড়া থেকেই যেটি কথা, স্বাস্থ্য ঝুঁকি আমরা নেব না। যেখানে স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকবে, তখন আমরা খুলব না। যখন মনে করব, ঝুঁকিটা খুবই কম এবং এখন খোলা যায় নিরাপদভাবে, আমরা তখন খুলব।”
যখনই স্কুল-কলেজ খোলা হোক না কেন, তার কতদিন পরে এসএসসি বা এইচএসসি পরীক্ষা নিলে শিক্ষাবর্ষ নষ্ট হবে না- সে বিষয়টি মাথায় রেখে সিলেবাস প্রণয়নের কথা জানান তিনি।
“আমরা কতগুলো কার্যদিবস পাব, কতগুলো ক্লাস পাব- সেই হিসাব করে আমরা নতুন করে সিলেবাস প্রণয়ন করেছি এসএসসি ও এইচএসসির জন্য। এসএসসির জন্য একটি ৬০ কর্মদিবসের সিলেবাস তৈরি করেছি এবং মাথায় রেখেছি কোন কোন বিষয়গুলো তার ওই সাবজেক্টের জন্য জানা অত্যাবশ্যক।
“এইচএসসির বেলায় ৮৪ কার্যদিবস আমরা ঠিক করেছি। কাজেই আমাদের খুলতে যদি দেরি হয়, পরীক্ষা একটু পরে নেব, তাতে এমন কোনো মহাভারত অশুদ্ধ হবে না এবং তারপরে তাদের পরবর্তী পর্যায়ে যাওয়াটা খুব সমস্যা হবে বলে আমরা মনে করছি না।”
শিক্ষকদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়ার পরের ধাপেই আবাসিক হলের শিক্ষার্থীর টিকা পাবে বলে জানান তিনি।
দীপু মনি বলেন, “অতি সম্প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে কথা হচ্ছিল। প্রধানমন্ত্রীও মনে করেন, আমাদের যারা আবাসিক ছাত্র, তাদের টিকা আমরা দিয়ে দিতে পারলে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিতে পারতাম।
“মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সর্বপ্রথম সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে, সকল শিক্ষককে অগ্রাধিকারভিত্তিতে টিকা দেওয়া হবে। এটা আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক বেশি সহায়তা করবে। তারপরের ধাপেই আমরা আমাদের আবাসিক ছাত্রদের টিকা দিতে পারব বলে প্রত্যাশা করছি।”
বাংলাদেশে করেনাভাইরাসে রোগী শনাক্তের পর গত ১৭ মার্চ থেকে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। কওমি মাদ্রাসা বাদে অন্যসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করা আছে।
অনেক উন্নত দেশের তুলনায় বাংলাদেশ অসাধারণভাবে করোনাভাইরাস মোকাবেলা করেছে বলে মন্তব্য করেন শিক্ষামন্ত্রী।
“আমাদের সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার খুবই কমে এসেছে। কিন্তু তারপরও শঙ্কা তো থেকেই যায় যেহেতু একটি অতিমারি চলছে সারা বিশ্বেই। আমাদের দেশের শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সংখ্যা পৃথিবীর অন্যান্য দেশের আস্ত জনসংখ্যার চেয়েও বেশি। যখন আমরা আমাদের সমস্যা নিয়ে কথা বলি, তখন আমরা অনেক দেশের সাথে নিজেদের তুলনা করে ফেলি, এ দেশটার জনসংখ্যাটাকে হিসাব করি না।”
উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের অটোপাসের বিষয়ে বিভিন্ন মন্তব্যের বিষয়ে তিনি বলেন, “এইচএসসির ফল সাধারণত আগের চেয়ে একটু কম ভালো হয়। কিন্তু এবার আগের দুটো পাবলিক পরীক্ষার ভিত্তিতে হওয়ায় বরাবরের চেয়ে একটু ভালো হয়েছে। তারা যদি একটু বেশি খুশি থাকে, তাহলে তো আমাদের অখুশি হওয়ার কথা না।
“আর করোনার সময়ে সবাই মানসিক সমস্যায় পড়েছেন, এই ফলাফল শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য তো ক্ষতিকর না। কিন্তু অনেকেই অটোপাস…অটোপাস বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এর উত্তর দিয়েছেন। আমি আর কিছু বলতে চাই না।”
স্কুলে প্রথম হওয়া ও রোল নম্বর নিয়ে অসুস্থ ও অনভিপ্রেত প্রতিযোগিতা চলে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “জিপিএ-৫ পেলে কী উচ্ছ্বাস! আর জিপিএ- ৪ দশমিক ৯ পেলে কবরের নিস্তবদ্ধতা। এটা কি আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্য সুখকর কিছু? আমরা রোল নম্বর তুলে দিয়েছি? এটা অসুস্থ প্রতিযোগিতা। পরীক্ষা..পরীক্ষা…পরীক্ষা । পরীক্ষাটাকে মূল্যায়নের পরিবর্তে জুজুতে পরিণত করেছে। আমরা জিপিএ-৫ তুলে নেওয়ার চিন্তাভাবনা করছিলাম। সনদ সর্বস্ব পরীক্ষা পদ্ধতি হয়ে গেছে। এগুলো থেকে বের হয়ে আসতে হবে।”
সেক্ষেত্রে চিন্তাভাবনার পরিবর্তনের ওপর জোর দেন তিনি।
নামি-দামি স্কুলগুলো ভালো শিক্ষার্থী ছাড়া ভর্তি নিচ্ছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ভালো স্কুলগুলো ভালো শিক্ষার্থী ছাড়া ভর্তি নিচ্ছে না। তাহলে তাদের মাহাত্ম কী? এজন্যই লটারির খুব দরকার ছিল। হয়েছে, হতে থাকবে।”
আদর্শ শ্রেণিকক্ষে ৪০ থেকে ৫০ জন শিক্ষার্থী ক্লাস করতে পারলেও স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিটি শ্রেণিতে এর দ্বিগুণেরও বেশি শিক্ষার্থী ক্লাস করে বলে জানান তিনি। মহামারীর এই সময়কে কাজে লাগিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানের শ্রেণীকক্ষ বাড়ানোর তাগিদ দেন মন্ত্রী।
প্রতিটি স্কুল খোলার আগে সেগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে কিনা সে ব্যাপারে মনিটরিং চলছে বলে জোনান তিনি।
স্কুল খোলার পর শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর গুরুত্বারোপ করা হবে জানিয়ে দীপু মনি বলেন, “প্রতিটি জেলা থেকে একজন প্রশিক্ষিত কাউন্সিলর তৈরি করব আমরা, এরপর সারাদেশে দুই হাজার মাস্টার ট্রেনার তৈরি করব, যারা শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে লক্ষ্য রাখবে।”
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সোহেল আহমেদ, বাংলাদেশে ইউনিসেফের উপ-প্রতিনিধি ভিরা মেন্ডোনকা এবং কানাডা হাই কমিশনের হেড অব ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিট্যান্স ফেদ্রা মুন মরিস।