জামিন কিভাবে নিতে হয়?
জামিন কিভাবে নিতে হয়? আইনে জামিন সংক্রান্তে অপরাধগুলোকে দুইভাগে ভাগ করা হয়েছে- ১) জামিনযোগ্য অপরাধ ২) জামিনের অযোগ্য অপরাধ। জামিনযোগ্য ধারার কোন অপরাধ হলো সেই সকল অপরাধ যেগুলোর ক্ষেত্রে আসামী নিজ অধিকারবলে জামিনের প্রাথর্না করতে পারে্। সহজভাবে বললে যে সকল অপরাধে অভিযুক্ত হলেও আদালতে যাওয়ার পর আদালতে জামিন প্রার্থনা করলে সাথে সাথে আদালত জামিন দিতে বাধ্য। অপরদিকে অজামিনযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে আদালত আপনার জামিন মঞ্জুর করতে বাধ্য নয়।আদালত এই সকল ক্ষেত্রে অপরাধে অভিযুক্ত ব্যাক্তির বয়স, অপরাধের গুরুত্ব ও মাত্রা, মহিলা ও শিশু বা বয়োবৃদ্ধ কিনা বা মামলার বিশ্বাসযোগ্যতা ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করেই জামিন দেয়।
যদি আপনার বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে তা জামিনযোগ্য ধারার কোন অপরাধ হয়ে থাকে তাহলে চিন্তা করার কোন কারণ নেই। আপনি কোন নতুন আইনজীবীকে নিয়োগ করে অল্প খরচে আদালত থেকে জামিন নিতে পারেন্। আরেকটি কথা বলে রাখি আদালত জামিন দেওয়ার সময় কিছু টাকা বন্ড হিসাবে নির্ধারন করে। যেমন ১০,০০০ টাকা বা ২০,০০০ টাকা বন্ডে আদালত জামিন দেয়া আদালত এই বন্ড নির্ধারন করে কেউ জামিনের অপব্যবহার করলে জামিনদারকে এই টাকা দিতে হয় পরে। কিন্তু শোনা যায় অনেক কোশুলী আইন সম্পর্কে অজ্ঞ সাধারণ বিচারপ্রার্র্থীদের কাছ থেকে জামিন নেওয়ার সময় এই টাকা নিয়ে নেয় কৌশলে এই বলে যে এই বন্ডের টাকা আদালতে জমা না দিলে জামিন হবে না। এটা কিছু খারাপ আইনজীবীর বড় ধরনের দূর্ণীতি। জামিন নেওয়ার পর আদালতে কোন টাকা জমা দিতে হয় না। তবে এই ধরনের খারাপ আইনজীবীর সংখ্যা খুব বেশি নয়।
সাজাপ্রাপ্ত আসামীর জামিন কিভাবে নিতে হয়?
যদি কোন আসামী কোন ফৌজধারী আদালত কর্তৃক দোষী সাব্যস্থ হয় তাহলে সেই আসামী উচ্চ আদালত হতে আপীল এর শর্তে বা আপীলে জামিন পেতে পারে। সাধারনত যদি কোন ফৌজধারী আদালত ১বৎসর পর্যন্ত কোন সাজা প্রদান করে এবং ঐ দন্ডের বিরুদ্ধে আপীল করার বিধান থাকে, তবে দন্ডিত ব্যাক্তি বা সাজা প্রাপ্ত আসামী আপীল করার ইচ্ছা পোষন করলে করাদন্ড প্রদানকারী আদালতের কাছে রায় ঘোষনার দিন জামিনের প্রার্থনা করতে পারেন এবং উক্ত রায় প্রদানকারী আদালত উক্ত সাজাপ্রাপ্ত আসামীকে আপীল যে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে করতে হয় সেই সময় পর্যন্ত দন্ড স্থগিত করে আসামীকে জামিনে মুক্তি প্রদান করতে পারেন। অন্যকোন কোন বর্ধিত মেয়াদের সাজার ক্ষেত্রে একজন অভিজ্ঞ আইনজীবি নিয়োগ করা প্রয়োজন। জামিন হবার পর বেইলবন্ড দিতে হয় কোর্টে এবং যদি ওয়ারেন্ট থাকে কোর্টে তাহলে তা রিকল করতে হয় রিকল ফর্মের মাধ্যমে।
জামিন দরখাস্তের একটা নমুনা দিলাম, যদিও বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে জামিনের দরখাস্ত প্রস্তুত করতে হয়।
মাননীয়,
বিজ্ঞ প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এবং শিশু আদালত, চট্টগ্রাম।
সূত্র: লোহাগড়া থানার মামলা নং 10(10)2016
ধারা: 380/411 দন্ডবিধি
রাষ্ট্র
………….বাদী
বনাম
জয়নাল আবেদীন(13)
…………আসামি
বিষয়: হাজতী আসামি পক্ষে জামিনের প্রার্থনা।
বিনীত নিবেদন এই যে,
1) অত্র আসামি একজন অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশু। সে সম্পূর্ণ নির্দোষ, কথিত ঘঠনার সাথে অত্র আসামি কোনোভাবে জড়িত নয়।
2) অত্র আসামিকে লোহাগড়া থানার পুলিশ বিগত 21/10/16 ইং তারিখ গ্রেফতার করার পর অদ্য তারিখ পর্যন্ত তিন মাস জেল হাজতে আটক রহিয়াছে।
3) সংবাদ দাতা তার অভিযোগে আসামীর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ আনয়ন করেনি, শুধুমাত্র সন্দেহমূলকভাবে অত্র আসামিকে গ্রেফতার করে উক্ত মামলায় যুক্ত করা হয়েছে।
4) অত্র আসামি গরীব অসহায় নাবালক। এছাড়াও বিজ্ঞ আদালত তার রিমান্ডও নামঞ্জুর করেছে, দীর্ঘ তিনমাস জেলহাজতে আছে। এমতাবস্থায় অ ত্র আসামির জামিন মঞ্জুরের আদেশ দানে বিনীত মর্জি হয়।
5) অন্যান্য যুক্তিসমূহ শুনানীর সময় বাচনিকভাবে পেশ করা হইবে।
অতএব, মহোদয়ের কাছে প্রার্থনা, ন্যায় বিচারের স্বার্থে আসামির জামিন মঞ্জুরের আদেশ দানে বিনীত মর্জি হয়।
ইতি তাং:
লেখক : মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, আইনজীবী, জজ কোর্ট সিলেট।