ক্যারিয়ার

চাকরীর ভাইভায় ভয় কাটানোর উপায় গুলো জেনে নিন

চাকরীর ভাইভায় ভয় কাটানোর উপায় গুলো জেনে নিন। প্রথমেই আসুন জেনে নেই চাকরীর ইন্টারভিউ দিতে নার্ভাস হওয়ার কারন গুলো কি কি?

১। ভালো সিভি না থাকার জন্যে অনেকে তিন চার মাসেও একটি কল পান না। যখন কল পান, তখন নার্ভাস হয়ে পড়েন। ইমোশনালও হয়ে যান অনেকে।

২। চাকরীটি না হলে কি যে হবে, এই চিন্তা অনেকেরই কাজ করে। কারো পারিবারিক, কারো প্রণয়ঘটিত, এক এক জনের এক এক টেনশান।

৩। কথা বাংলায় বলতে হবে নাকি ইংরেজিতে এটা নিয়ে অনেকে নার্ভাস থাকেন।

৪। রেজাল্ট তো আমার ভালো না, আমারতো চাকরীতে গ্যাপ আছে, আমি তো সেক্টর চেঞ্জ করছি, এগুলো নিয়ে যদি কিছু জিজ্ঞেস করে কি যে বলবো।

৫। যে যে কাজের কথা বিজ্ঞপ্তিতে লেখা আছে তার কোন একটি হয়তো জানেন না যা কি না আপনাকে নার্ভাস করে তোলে। টেকনিকাল প্রশ্ন কি হতে পারে তা নিয়েও অনেকে টেনশান করেন।

৬। যারা চাকরী করেন, হয়তো ডিউটি আওয়ারে কাজ ফাকি দিয়ে আসেন। বস ফোন দেয় কি না, ক্লাইন্ট মেইলের উত্তর না পেয়ে হার্ট ফেইল করে কি না, সেই চিন্তায় আপনার হার্ট এইদিকে লাফালাফি শুরু করে দেয়।

৭। ইন্টারভিউ দিতে অপেক্ষমানরত অবস্থায় ফেসবুকিং বা অফিসে কথা বললে টেনশান বাড়ে।

৮। আমারতো অত্র কোম্পানিতে পরিচিত কেউ নেই, আমার কি চাকরী হবে? এটা নিয়ে অনেকে ভাবেন।

৯। কোন প্রশ্নের উত্তর না জানলে, সেটার জন্যে টেনশান বাড়ে। রিক্রুইটারের সাথে তর্ক করতে গেলে টেনশান বাড়ে।

১০। ইন্টারভিউ দিতে যে যাচ্ছেন, সেটা কেউ জেনে গেল কি না সেটা একটা কারন। ট্রাফিক সমস্যার কারনে ইন্টারভিউ দিতে দেরি হলে টেনশান বাড়ে, ঘাম হয়।

এতসব কারনের মধ্যে আপনি ভুলেই যান আপনি যে একটি ইন্টারভিউ দিতে এসেছেন। কি নেই, কি হবে, এই চিন্তা মস্তিস্ককে গ্রাস করে। ফলে আপনি আপনার কি আছে, কি লক্ষ্য সেসব চিন্তা থেকে সরে যান। আপনার চিন্তা ভিন্নদিকে ধাবিত হয়। এর ফলে আপনার চাকরী হয় না, হতাশা বাড়ে। সেই হতাশা আরো টেনশান বাড়ায়, যেটা আপনাকে দীর্ঘ সময় বেকার রাখে। আপনি এসেছেন ইন্টারভিউ দিতে, কিন্তু মন আপনার অন্যদিকে। সব নেগেটিভ চিন্তা যখন আপনার মাথায় আসে, টেনশান তো হবেই। এখন কি কি করা যেতে পারে এই টেনশান দূর করতে?

সমস্যা অনুযায়ী সমাধান গুলো পর্যায়ক্রমে দেওয়া হলঃ  

১। দৃষ্টিনন্দন সিভি তৈরি করুন। সিভি, লিঙ্কডইন আপডেট রাখুন। সঠিকভাবে আবেদন করুন। ভালো সিভি থাকলে আপনি বেশ ঘন ঘন ইন্টারভিউ কল পাবেন। তখন নিজেকে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী মনে হবে। টেনশান কাজ করবে না। অর্ধেক টেনশান আপনার এখানেই শেষ।

২। আপনি একটি ইন্টারভিউ দিতে এসেছেন। চাকরীটি হওয়ার জন্যে এরা যেমন লোক খুঁজছে, নিজেকে তেমন লোক হিসেবে তাদের সামনে প্রমাণ করতে হবে। তারপর আপনার চাকরী হবে। তারপর পরিবার ও প্রণয়ঘটিত ব্যাপারের সমাধান হবে। পরীক্ষায় ফেল করলে কি হবে, সেটা কি পরীক্ষার হলে বসে ভাবলে হবে? যে কাজে এসেছেন সেটা ভালোভাবে করুন। ইন্টারভিউর দিকে ফোকাস করুন। অন্য চিন্তা নয়।

৩। মনে রাখবেন, বাংলায় প্রশ্ন করলে বাংলায় উত্তর দিতে হয়। বাংলায় প্রশ্ন করলে ইংরেজিতে উত্তর করা বেয়াদপি। ইংরেজিতে প্রশ্ন করলে ইংরেজিতে উত্তর দিবেন। যদি মনে করেন, আপনার ইংরেজি অতো ভালো না, সেক্ষেত্রে রিক্রুইটারের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে বাংলায় কথা বলবেন। টেনশান কমে যাবে। ভুল ইংরেজি বলবেন না। যা যা প্রশ্ন করে সাবলীল উত্তর দিবেন।

৪। আপনারা যারা রেজাল্ট, গ্যাপ, সেক্টর চেঞ্জ ইত্যাদি নিয়ে টেনশান করেন, তাদের বলছি। ভাই, এসব কিন্তু আপনার সিভিতে ছিলো। তবুও আপনাকে ডাকা হয়েছে। তার মানে, এসব বিষয় জেনেই তো আপনাকে ইন্টারভিউর জন্যে ডাকা হয়েছে, তাইনা? এগুলো নিয়ে তাদের যদি টেনশান থাকতো, তাহলে তো তারা আপনাকে ডাকতোই না ইন্টারভিউর জন্যে। যখন আপনাকে ডেকেই ফেলেছে, তখন আর আপনার এসব নিয়ে টেনশান কিসের? এখন শুধু সিভিতে যা লিখেছেন, সেগুলো ডিফেন্স দিবেন।

৫। বিজ্ঞপ্তিতে ১০টি কাজ বলা আছে। আপনি ২টি পারেন না। আপনি ৮টি কাজ পারেন, এই মনবল দিয়ে কি ২টি কাজ না পারার টেনশান দূর করা যায় না? যা জানেন সেটা ফোকাস করুন। যে দুইটি কাজ জানেন না, ওগুলো জয়েনের পর এক মাসেই শিখা হয়ে যাবে। নয়তো ট্রেনিং করে শিখে নিবেন। মনে রাখবেন, ৮০ পেলেও লেটার, ১০০ পেলেও লেটার। যাদের একটু দুর্বলতা আছে, তারা বারবার কমন ইন্টারভিউ প্রশ্নের উত্তরগুলো পড়ুন।

৬। টেনশানের ৫টি স্তর পার করে এসে কি আপনি বসের ভয়ে আটকে যাবেন? নিশ্চয়ই না। কি করবেন তাহলে?  আপনার বসের দিক তাকান। উনি দুইটি হাত, দুইটি পা, একটি নাক ওয়ালা প্রাণী তো, নাকি? এবার আবার নিজের দিকে তাকান। আপনারও কি দুইটি হাত, দুইটি পা, একটি নাক আছে কি না চেক করুন। সব যদি মিলে যায় তাহলে ভয় কেন? টেনশান কেন? আপনার বসও তো মানুষই। ভয়ের কিছু নেই। ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছেন, চুরি করতেতো আর যাচ্ছেন না? এসব ব্যাপার বসদের না জানানোই ভালো। মনে রাখবেন, বিয়েতে প্রথম স্ত্রীর অনুমতি লাগে, চাকরীতে বসের অনুমতি লাগে না। চাকরীর সাথে তো আর বিয়ে বসেননি। আপনার ক্যারিয়ার আপনার বেক্তিগত। ক্লাইন্টের মেইল এক ঘন্টা পরে উত্তর দিবেন। মনে রাখবেন, যে নিজেই নিজেরটা বোঝে না, সে আরেকজনেরটা কি বুঝবে? তবে, এক ধরনের ব্যতিক্রম বস আছে, তাদের বলা হয় লীডার। তারা সর্বদা আপনাকে ক্যারিয়ারে ভালো নির্দেশনা দিবে। ফোন সাইলেন্ট রাখুন, এক ঘন্টা অফিস থেকে বিচ্ছিন্ন। পরে এক ঘন্টা কাজ করে পুষিয়ে দিয়েন।  মনে রাখবেন, “বনের বাঘে খায় না, মনের বাঘে খায়।”

৭। অনেকে ইন্টারভিউ দিতে এসেও অফিসের কর্মকাণ্ড নিয়ে মাথা গরম করে ফেলেন, ফোনের পর ফোন, ফোনের পর ফোন। কাজ করে যেন ফাটিয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু ইন্টারভিউ বোর্ডের সামনে টেনশান। দেখুন, প্রধানমন্ত্রী যখন ভাষণ দিতে মঞ্চে ওঠেন, উনি কি ফোন নিয়ে ওঠেন? উনি যদি মঞ্চে ফোন ছাড়া থাকতে পারেন, তাহলে আপনি কেন একটা ঘন্টা ফোন ছাড়া থাকতে পারবেন না? আপনি নিশ্চয়ই উনার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ নন? আপনি নিশ্চয়ই উনার চেয়ে বেশি কাজ করেন না? মনে রাখবেন, দুনিয়ায় কেউ ব্যস্ত নয়। আপনি কোনটিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন তার উপর নির্ভর করে আপনার ব্যস্ততা। অনেকে হয়তো বলবেন রেস্পন্সিবিলিটি। এতোই যদি রেস্পন্সিবল হবেন তাহলে ইন্টারভিউ দিতে এসেছেন কেন? ইন্টারভিউ দিতে এসেছেন মানেই তো আপনি কোম্পানি পরিবর্তন করবেন, তাইনা? এক ঘন্টার জন্যে নিজেকে এসব টেনশান থেকে দূরে রাখুন। প্রধানমন্ত্রী কথা বলার সময় শ্রোতাদের ফোকাস করে কথা বলেন। আপনি ইন্টারভিউর দিকে ফোকাস করুন।

৮। লিঙ্ক না থাকলে চাকরী হবে না, বদ্ধ এক ধারনা তরুনদের মধ্যে। কিন্তু কিছু নেগেটিভ রেফারেন্স টেনে টেনশান করে তো লাভ নেই। অনেক ভালো রেফারেন্সও আছে। আড়াই ফিট লোক চাকরী পেয়েছে, অন্ধ লোক চার্টার্ড একাউন্ট হয়েছে। এরকম কত উদাহরন আছে। হাজার হাজার, লাখ লাখ। ঢাকায় দুই কোটি লোক বাস করে। অথচ এমন অনেক দিন আছে কোন সড়ক দুর্ঘটনাই হয় না। পৃথিবীর আর কোথায় এটা আছে, বলুন। আপনি কি এখন দুর্ঘটনার ভয়ে বেরোবেন না? তাহলে গন্তব্যে যাবেন কিভাবে? টেনশান একটি মানুসিক সমস্যা। তাই সর্বদা পজিটিভ থাকুন। আপনাকে নেওয়ার সম্ভাবনা আছে বলেইতো ডেকেছে। সুতরাং নেগেটিভ চিন্তা করবেন না।

৯। কোন প্রশ্নের উত্তর জানা না থাকলে সাবলীল ভাবে বলুন, যে আপনি এটি জানেন না। রিক্রুইটার পরের প্রশ্নে চলে যাবে। ভুল উত্তর করে, সেটাকে আবার প্যাচাতে গেলে নিজেই শেষ পর্যন্ত প্যাচে পড়ে যাবেন। মিথ্যা বলবেন না ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে। মানুষ যখন মিথ্যা বলে, তখন ঘেমে যায়, টেনশান বাড়ে।

১০। ইন্টারভিউ দিতে যাওয়া চৌর্যবৃত্তি নয়। কাজেই ভয়ের কিছু নেই। বর্তমান কোম্পানির কোন গোপন তথ্য ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে বলবেন না। এতে আপনাকে বিশ্বাসঘাতক ভাববে। ইন্টারভিউ দিতে একটু আগেই পৌঁছান। সময় হাতে নিয়ে রওনা দিন। গেট আপ চেক করুন। রিলেটেড কাগজপত্র ও কলম আগের দিনই গুছিয়ে নিন। টেনশান মুক্ত থাকতে পারবেন। হাসি মুখে কথা বলুন। আই কন্টাক্ট ঠিক রাখুন। শেষ মুহূর্তে কাজ করার বাজে অভ্যাস ত্যাগ করুন। “পরে” বলে কোন শব্দ নেই। ২৪ ঘন্টাই “এখন”। যেটা করার সেটা এখনই করার অভ্যাস করুন।

মনে রাখবেন, “লজ্জা, ঘৃণা, ভয়, এ তিন থাকার নয়” যারা স্কাইপির মাধ্যমে ইন্টারভিউ দিবেন, তারা তাদের স্কাইপি সংযোগ, মোডেমে টাকা আছে কি না সেগুলো আগে থেকে দেখে প্রিপারেশান নিন। এগুলো টেনশান দেয়। ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে অপেক্ষা করতে হয়, তখন টেনশান বাড়ে। তাই তখন কাজের বিবরণী ও আপনার নিজের কাজ সম্পর্কে ভাবুন। কেউ ইন্টারভিউ দিয়ে বেরোলেই তাকে সবাই জিজ্ঞেস করি কি প্রশ্ন করলো। সে যখন তার অভিজ্ঞতা বলে তখন টেনশান হয়। এগুলো জিজ্ঞেস করবেন না। এগুলোর চেয়ে বেশি আপনি জানেন। ইন্টারভিউ দিতে যাওয়ার আগের দিন পর্যাপ্ত ঘুমাবেন, সেভ করবেন। আপনি সেভ ছাড়া গেলেন, আরেকজন সেভ করে গেল। দেখেই আপনার কনফিডেন্ট কিন্তু হাটুতে নেমে আসবে। টেনশান শুরু হয়ে যাবে। রেস্ট নিবেন। ভালো পারফিউম লাগাবেন। নার্ভে চাপ পড়লে টয়লেট যাওয়ার প্রবনতা বাড়ে। তাই বাসা থেকে ভালো ভাবে ফ্রেস হয়ে বেরবেন।

ভাববেন, আত্মীয়ের বাসায় এসেছেন। আত্মীয়ের বাসায় গেলেন, কি হয়? দরজা  নাড়েন, ভিতরে যান। পরিচিত হন, তাইনা? ইন্টারভিউ বোর্ডও তো একই রকম। তাহলে, চিন্তা কিসের? ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছেন এটা ভাবারই দরকার নেই। মনে করুন, বেড়াতে এসেছেন। একটা কোম্পানির অফিস দেখতে এসেছেন, তাদের সম্পর্কে জানবেন, নিজের কথা বলবেন। সিম্পল।

পরিশেষে, নিজেকে দক্ষ ভাবে উপস্থাপন করতে প্রাকটিসের বিকল্প নেই। সকলের গতি এক নয়। সেখান থেকেই খরগোস আর কচ্ছপের গল্পের সূচনা। কিন্তু বিজয়ী হয়েছিলো কচ্ছপ। তার লেগে থাকার পুরস্কার ছিলো সেটা। আপনি না হয় একটু দুর্বল। দুই দিন বাড়তি প্রাকটিস করুন।

শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে EducationsinBD.com এর ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন YouTube Channel জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল নোটিশ দেখুন এখানে একসাথে National University Notice Board অনার্স /মার্স্টাস/ ডিগ্রি পরীক্ষার প্রিমিয়াম সাজেশন পেতে ফেসবুক পেজে মেসেজ দিন। https://www.facebook.com/PremiumSuggestion আমাদের ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করুন Facebook Group

Leave a Reply