চতুর্থ বর্ষের ফল নিয়ে শিক্ষার্থীদের নানা অভিযোগ, যা বললেন উপাচার্য
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯ সালের অনার্স ৪র্থ বর্ষের পরীক্ষার ফল নিয়ে নানান অভিযোগ উঠেছে। উপস্থিত থাকলেও অনেক পরীক্ষার্থীকে অনুপস্থিত দেখিয়ে ফেল দেখানো, ভালো পরীক্ষা দিয়েও আশানুরূপ ফল না পাওয়া, খারাপ পরীক্ষা দিয়ে পাস কিন্তু ভালো পরীক্ষা দিয়ে ফেল সহ নানা ধরনের অভিযোগ তুলেছে শিক্ষার্থীরা৷ দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব ভুল সংশোধন করা না হলে আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
আরো পড়ুন- জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ৪র্থ বর্ষ পরীক্ষার CGPA রেজাল্ট প্রকাশ
গত ২০ জুলাই ঈদের আগের দিন রাতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯ সালের অনার্স চতুর্থ বর্ষ পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। অনার্স ৪র্থ বর্ষের পরীক্ষায় মােট ৬৭৬ (ছয়শত ছিয়াত্তর) টি কলেজের ২,১৪,৮৪৪ (দুই লক্ষ চৌদ্দ হাজার আটশত চুয়াল্লিশ) জন পরীক্ষার্থী ৩০ টি বিষয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। এবার গড় পাশের হার ৭২ শতাংশ। প্রকাশিত এ ফলাফলে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন সারা দেশের বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা।
চট্টগ্রামের ওমরগণি এমইএস কলেজের মো. ফরহাদ জানান, ‘ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট’ বিষয়ে তাকে ফেল দেয়া হয়েছে। এই পরীক্ষার্থীর দাবি কোনোভাবেই তার ফেল করার কথা ছিল না।
একই কলেজের আফরিন সুলতানা বলেন, তিনি ‘ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড’ বিষয়ে ফেল করেছেন। অথচ তিনি এ বিষয়ে খুব ভালো পরীক্ষা দিয়েছেন। চাঁদপুরের পুরানবাজার ডিগ্রী কলেজ থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন উম্মে হাবিবা। সবগুলো বিষয়ে ভালো জিপিএ পেলেও ‘রিসার্চ মেথোডোলজি’ বিষয়ে ফেল করেছেন তিনি।
তেজগাঁও কলেজ থেকে পরীক্ষায় অংশ নেন ইকবাল হাসান। অনার্স চূড়ান্ত বর্ষের ফলে তাকে ‘অর্গানাইজেশনাল বিহেভিয়ার’ বিষয়ে অকৃতকার্য দেখানো হয়েছে। এই শিক্ষার্থী জানান, তার কলেজে অনেক শিক্ষার্থীকে এ বিষয়ে গণহারে এফ গ্রেড দেয়া হয়েছে। খাতা দেখায় অসঙ্গতির কারণেই এমন ফলাফল বলে তিনি মনে করেন।
সব পরীক্ষায় অংশ নিলেও ‘ওয়েস্টার্ন লিটারেরি থিওরি’ বিষয়ের পরীক্ষায় অনুপস্থিত দেখানো হয়েছে মুহাম্মদ আলী আনছারকে। দ্রুত এসব ভুল সংশোধন করা না হলে ভুক্তভোগী সকলে মিলে আন্দোলনে নামবেন বলে জানান তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. মশিউর রহমান বলেন, ‘পরীক্ষা দিয়েছে শিক্ষার্থীরা আর কলেজের শিক্ষকরাই খাতা মূল্যায়ন করেছেন। আমরা শুধু ফল প্রকাশ করেছি। ফলাফল প্রকাশের ক্ষেত্রে প্রোগ্রামিং এ কোথাও ভুল হতে পারে, যেটা খুব সামান্য। এমনটি হলে সংশোধন করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিজ্ঞান বিষয়ের ল্যাব পরীক্ষা নেয়া সম্ভব না হওয়ায় আমরা আগের বর্ষের ফল গড় করে নম্বর দিয়েছি। তারপরও যদি কারো অভিযোগ থাকে সেক্ষেত্রে পুনরায় নিরীক্ষণের জন্য আবেদন করার সুযোগ রয়েছে। আবেদনকারীদের প্রতিটি খাতা আবারও মূল্যায়ন করা হবে।’
উপাচার্য বলেন, ‘কেউ পরীক্ষায় অংশ নিলে তার তো রেকর্ড থাকবে। মৌখিক পরীক্ষা জুম প্লাটফর্মে নেয়া হয়েছে। যদি শিক্ষকরা কোনো পরীক্ষার্থীর খাতার বিষয়ে রিপোর্ট করেন তবে তার ফল আটকে থাকবে। তারপরও যদি এ ধরনের ভুল হয়ে থাকে তবে কলেজের মাধ্যমে আবেদন করতে বলা হয়েছে।’
অনার্স চতুর্থ বর্ষের ফলাফল প্রকাশের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছিল প্রকাশিত ফলাফলে কোন প্রকার অসঙ্গতি বা ভুলক্রটি পরিলক্ষিত হলে তা সংশােধন অথবা ফলাফল সম্পূর্ণ বাতিল করার ক্ষমতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সংরক্ষণ করে। অনার্স ৪র্থ বর্ষের প্রকাশিত ফলাফলে কোনাে গড়মিল পরিলক্ষিত হলে পরীক্ষার্থী তা সংশােধনের জন্য আগামী এক মাসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কলেজ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রয়ােজনীয় তথ্য সহ লিখিতভাবে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বরাবর আবেদন করতে পারবে।
আরো পড়ুন- অনার্স ৪র্থ বর্ষ পরীক্ষার ফলাফল পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করবেন যেভাবে
এদিকে অনার্স চতুর্থ বর্ষের ফলাফল পুনরায় নিরীক্ষণের আবেদন ২৯ জুলাই থেকে শুরু হবে। অনার্স ৪র্থ বর্ষ পরীক্ষার প্রকাশিত ফলাফলের উত্তরপত্র পুনঃনিরীক্ষণের জন্য আগামী ২৯ জুলাই সকাল ১০টা থেকে ২১ আগস্ট রাত ১২টা পর্যন্ত অনলাইনে আবেদন করা যাবে। ২২ আগস্ট (রোববার) বিকেল ৪টা পর্যন্ত ব্যাংকে টাকা জমা দেয়া যাবে।
