উপবৃত্তি নিউজজাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিদেশে উচ্চ শিক্ষা!

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিদেশে উচ্চ শিক্ষা! অনেক দিনের ইচ্ছা ছিলো যারা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্নাস/ ডিগ্রি/ মাস্টাস/ প্রফেশনাল কোর্স করছে তাদের নিয়ে লিখবো। আমি যখন কলেজে পড়তাম তখন একটা মেসে থাকতাম। যেখানে একই তলায় প্রায় পনেরো জনের মতো থাকতাম। দুই বছর তাদের সাথে থাকার পর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে মোটামুটি একটা ধারণা হয়েছিল। Higher Study in Abroad and National University of Bangladesh.

আমি মনে করি যারা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে তাদের ৬০-৭০ % মাঝারি সারির পরিবার থেকে আসা। আর্থিক ভাবে অতটাও সচ্ছল না যে টাকা দিয়ে ভালো কোন প্রাইভেট ভার্সিটিতে পড়বে। আবার এমন অনেকেই আছে যে টাকা থাকা সত্ত্বেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে। এটা আমার মূল বিষয় নয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৮০% শিক্ষার্থীর স্বপ্ন থাকে পড়া শেষ করে ভালো একটা সরকারি চাকুরী করা। কিন্তু সবার কপালে তা জোটে না। শেষমেশ অনেকেই কোম্পানির চাকুরী করতে বাধ্য হয়। অন্তত আমি তাই দেখেছি।

এখন মূল কথায় আসি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা ভুল ধারণা আছে যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি কি বা আর করতে পারবো। পড়া শেষ কোন একটা বিশ হাজার টাকা চাকরি পেলেই জীবন চলে যাবে। কিন্তু আমার অভিজ্ঞতা বলে আপনি চাইলে অনেক কিছুই করতে পারেন। এরজন্য আপনার মন মানসিক পরিবর্তন করতে হবে। তার মধ্যে একটা হলো বিদেশে উচ্চ শিক্ষা।

বিদেশে উচ্চ শিক্ষা এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়!

অনেক সময়ই ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট দেখি আমি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। জিপিএ, আমি কি দেশের বাহিরে পড়তে পারবো? জাতীয়তে পড়েছি বলে কি কোন সমস্যা হবে কি না।

এই প্রশ্নের উওর হলো আপনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্নাস শেষে করে পৃথিবীর যে কোন দেশে মাস্টার্স করতে যেতে পারবেন। এখন কথা হচ্ছে কি কি করে আপনি নিজেকে প্রস্তুত করতে পারবেন। এখানে একটা মূল বিষয় হলো জিপিএ।

১। যদি চিন্তা ভাবনা থাকে যে স্কলারশিপ নিয়ে মাস্টার্স করবেন তবে জিপিএ ৩.৫ রাখার চেষ্টা করুন। এখন বলতে পারেন জিপিএ ৩.০ পেলেও তো স্কলারশিপ পাওয়া যায়। হা যায়, এমন অনেকেই আছে ২.৮ নিজেও ফুল ফান্ডে লেখাপড়া করে। তবে সেটা কয় জনই বা পায়? এর থেকে ভালো হয় না যে জিপিএ ৩.৫ রাখা? তাহলে আপনার স্কলারশিপ পাওয়ার সুযোগ অনেক গুণ বেড়ে যাবে।

২। IELTS, মোটামুটি যারা দেশের বাহিরে পড়তে আসতে চান এই শব্দটার সাথে পরিচিত। এই পরীক্ষার রেজাল্টের উপর আপনি ইংরেজি ভাষায় উপর কতটা দক্ষ তা বিবেচনা করা হয়। ইউরোপের প্রায় সব দেশের ভার্সিটিতে এডমিশন এবং ভিসা পেতে গেলে IELTS লাগে। IELTS এ ৬.৫ পাওয়া মানে আপনি নিরাপদ। ৬.০ দিয়েও অনেক ইউরোপীয় ভালো ভার্সিটি গুলোতে চান্স পাওয়া যায়। তবে স্কলারশিপ পেতে গেলে যত বেশি স্কোর থাকবে আপনার সুযোগ তত বাড়বে।

যদি মনে করেন IELTS দিবেন না, তাহলে চীন, মালয়শিয়া, ব্রুনাই, রাশিয়া ছাড়াও আরো বেশ কিছু দেশের গভঃ স্কলারশিপে আবেদন করতে পারবেন। সেগুলোর তথ্য আপনার নিজেকেই কালেক্ট করতে হবে।

৩। কলেজে থাকা অবস্থায় বিভিন্ন এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিস এর সাথে জড়িত হতে পারেন। বলতে পারেন এতে লাভ কি। লাভ আছে, অনেক ক্ষেতেই আপনি সার্টিফিকেট পাবেন। আর স্কলারশিপ পাবার ক্ষেএে এগুলো ভালে কাজে দেয়।

৪। ৩য় বর্ষে উঠে একটা লিস্ট বানাতে পারেন। লিস্টে স্কলারশিপের তথ্য, ভার্সিটির রিকয়ামেন্ট গুলো নোট করতে পারেন। এতে করে পরে আবেদনের সময় সুবিধা হবে।

৫। তয় বর্ষের শেষের দিক থেকে IELTS এর প্রস্তুতি নিন।

৬। ৪র্থ বর্ষের প্রথম দিক থেকে ভালো মানের সিভি, রিসার্চ প্রপোজাল, মোটিভেশনাল লেটার লেখার চর্চা করুন। পারলে লিখে গুগল ক্লাউডে সেভ করে রাখুন।

৭। প্রফেসরকে আগেই বলে রাখুন তার থেকে আপনি রিকমেন্ডেশন লেটার নিতে চান, অর্নাস শেষ হবার আগেই এটা নিয়ে রাখতে পারেন।

৮। এই চার বছরে ছোট ছোট প্রজেক্ট করতে পারেন যেগুলো সুন্দর ভাবে সিভি তে গুছিয়ে লিখতে পারেন।

৯। পাবলিকেশন, স্কলারশিপ পাবার ক্ষেএে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে রিসার্চ এর সুযোগ নেই বললেই চলে। আর সেখানের শিক্ষক গুলোর পাবলিকেশন নিয়ে মাথাব্যথা নেই। তাই অনেকটা নিজ প্রচেষ্টায় আপনাকে পেপার লিখে পাবলিশ করার চেষ্টা করতে হবে। অন্তত একটা পেপার থাকলে ভালো হয়।

অর্নাস শেষ করার পর এখন আপনি আবেদন করার জন্য প্রস্তুত। ঐ যে লিস্ট বানিয়েছিলেন, সেগুলো দেখে অনলাইন রিসার্চ করে বা গ্রুপের কারো হেল্প নিয়ে আবেদন করে ফেলুন। স্কলারশিপ পাওয়া অনেক সময় ভাগ্যর উপরও নির্ভর করে। আর যদি কিছু টাকা পয়সা থাকে সমস্যা নেই আপনি দেশের বাহিরের মোটামুটি অনেক ভালো ভার্সিটি তে মাস্টার্স করতে পারবেন। এমন অনেক উদাহরণ আছে।

লিস্ট বানানোর সময় ভার্সিটির রিকয়ামেন্ট গুলো একটু ভালো করে চেক করে নিবেন। কিছু ভার্সিটিতে হয়তো আবেদন করতে পারবেন না৷ তবে তাতে কি, দুই- দশটাতে যদি আবেদন করতে নাই পারেন সমস্যা নেই।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন বলে নিজেকে আড়ালে রাখবেন না। পরিশ্রম করুন, ভালো কোথাও যেতে পারবেন, হয়তো পড়া শেষে দেশ বা বিদেশের কোন অফিসের উচ্চ পদেও চাকুরী পাবেন। কিন্তু সঠিক সময় সঠিক সিদ্ধান্ত আপনাকেই নিতে হবে। আপনাকেই ঠিক করতে হবে বিশ – চল্লিশ হাজার টাকার চাকরি করবেন নাকি চার বছর কষ্ট করে নিজেকে প্রস্তুত করে দেশের বাহিরের উচ্চতর শিক্ষা নিবেন তাও ফ্রী তে। ফুল ফান্ড পেলে আপার পকেটে প্রতি মাসে ভালো পরিমাণ টাকাই থাকবে।

এমন অনেকেই আছেন যারা ১০-২০ লক্ষ টাকা খরচ করে সরকারি চাকুরী নেন কিন্তু বেতন হয়তো ১০-৩০ হাজার টাকা। একবার চিন্তা করেছেন কি এই টাকা টা দিয়ে যদি দেশের বাহিরে ভালো কোন ভার্সিটি থেকে ভালো ভাবে পড়তে পারেন তাহলে কোন পজিশনে থাকতে পারেন? একটু ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করুন। ভুল কিছু বলে থাকলে দুঃখিত।

Written by Imam Hasan
University of applied science

Berlin, Germany

শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে EducationsinBD.com এর ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন YouTube Channel জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল নোটিশ দেখুন এখানে একসাথে National University Notice Board অনার্স /মার্স্টাস/ ডিগ্রি পরীক্ষার প্রিমিয়াম সাজেশন পেতে ফেসবুক পেজে মেসেজ দিন। https://www.facebook.com/PremiumSuggestion আমাদের ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করুন Facebook Group

Leave a Reply