ক্যারিয়ারজাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়বিসিএসশিক্ষা নিউজ

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কোচিং ছাড়াই বিসিএস ক্যাডার হলেন যেভাবে

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কোচিং ছাড়াই বিসিএস ক্যাডার হলেন যেভাবে. মো. আল আমিন সরকার। চট্টগ্রাম কলেজের এই ডাবল বিসিএস ক্যাডার হয়েছেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পড়াশোনা করলেও তিনি তার মেধার স্ফূরণ ঘটিয়েছেন। অদম্য ইচ্ছায় জয় করেছেন স্বপ্ন।

ইংরেজি বিভাগের ওই ছাত্র এবার ৩৮তম বিসিএসে পররাষ্ট্র ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। এর আগে তিনি ৩৬তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। বর্তমানে তিনি এখন RAB-13 এ কর্মরত আছেন

তিনি বলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে বিসিএস ক্যাডার হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করার কারণে আমার অনেক কাছের মানুষও আমাকে নিয়ে উপহাস করেছেন। কিন্তু আমার পরিবার বরবারই সাহস জুগিয়ে গেছে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কোচিং ছাড়াই বিসিএস ক্যাডার হলেন যেভাবে
মো. আল আমিন সরকার

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার বিকেলে ৩৮তম বিসিএস পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। এতে ২ হাজার ২০৪ জন প্রার্থীকে ক্যাডার পদের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে পররাষ্ট্র ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হলেন আল আমিন। আল-আমিনের জন্য এডুকেশনন্স ইন বিডি পরিবারের পক্ষ থেকে রইলো শুভকামনা।

তিনি নিয়মিত লেখাপড়া করার ফলে বিসিএস ক্যাডার হতে পেরেছেন , যে কেউ চাইলেই ক্যাডার হতে পারেন এজন্য দরকার শক্ত মনোবল আর চেষ্টা। নিয়মিত করে পড়ালেখা করলে সফলতা আসবে এটা নিশ্চিত।

যেভাবে লেখাপড়া করার ফলে বিসিএস ক্যাডার হতে পেরেছেন তা নিম্নে দেয়া হল।

১) পুরাতন বছরের প্রশ্নগুলো প্রচুর এনালাইজ করতাম।

২) রিটেনের সময় খুব নোট করে গুছিয়ে পড়তাম।এতে খুব সুবিধা হতো রিভাইজ করতে।

৩) ড্যাটা, টেবিল, ডায়াগ্রামের জন্য আলাদা খাতা ছিলো। সোর্স সহ নোট করে ফেলতাম। এজন্য নেট সার্ফিং করতাম বেশি বেশি

৪) রিটেনের সময় হাত চালু রাখার জন্য প্রচুর লিখতাম ক্লকিং করে। সাড়ে ৩ মিনিটে এক পাতা এভাবে।

৫) গ্লোব কিনেছিলাম। চোখ বুলাতাম সবসময়। আন্তর্জাতিক এবং ভাইভার জন্য খুব খুব উপকারী

অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়ার সময় বিসিএস নিয়ে আশপাশের বন্ধু ও বড় ভাইদের দৌড়ঝাঁপ-প্রস্তুতি দেখে নিজেও আগ্রহী হই। এর পর থেকেই পরিচিত বা জানাশোনাদের মধ্যে কোনো ভাই বিসিএস ক্যাডার হয়েছেন শুনলে পরামর্শের জন্য ছুটে গেছি। আমার বিসিএস প্রস্তুতির শুরুটা এভাবেই। ওনারা একটা কথাই বারবার বলেছেন—ক্যাডার হতে হলে অনেক পড়তে হবে। কিন্তু কী পড়ব? কিভাবে পড়া শুরু করব? বুঝতে পারছিলাম না। একদিন এক বড় ভাই বললেন, ‘আজকাল যে (প্রার্থী) ইংরেজি আর গণিতে ভালো, তার জন্য চাকরি রেডি! তোমার হাতে এখনো অনেক সময়, এক কাজ করো—শুধু গণিত আর ইংরেজি নিয়েই লেগে থাকো। আপাতত অন্য কিছু পড়তে যেয়ো না। বাকি বিষয়গুলো ছয় মাস পড়লে এমনিতেই পারবা। কিন্তু গণিত-ইংরেজি দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতির বিষয়। তাই এখন থেকেই লেগে থাকো, সময়টা কাজে লাগাও।’

এসএসসি পর্যন্ত গ্রামের স্কুলে পড়েছি। ইংরেজি-গণিতে শিক্ষকদের কাছ থেকে খুব বেশি ট্রিটমেন্ট পাইনি। এ দুই বিষয়ে নিজের দুর্বলতার কথা ভেবে চিন্তায় পড়ে যাই।

একদিন বাজারে লাইব্রেরী  থেকে চৌধুরী অ্যান্ড হোসাইনের Advanced Learners Functional English আর সাইফুরসের Student Vocabulary বই দুটি কিনে এনে পড়া শুরু করে দিই। প্রথম প্রথম যতই পড়ি, গ্রামারের নিয়মে হালকা দখল নিতে পারলেও ভোকাব্যুলারির কিছুই মনে রাখতে পারিনি। হলের বড় ভাইদের সঙ্গে ব্যাপারটা শেয়ার করলাম। ওনারা বললেন, ‘প্রথম যখন ভোকাব্যুলারি পড়ো, ধরে নেবে এটা এমনিতেই পড়ছ (যেভাবে আমরা পত্রিকা পড়ি। পত্রিকা পড়ার সময় কিন্তু সাবলীলভাবেই পড়ি, সেটা তখন মুখস্থ করা উদ্দেশ্য থাকে না)। এভাবে প্রথমবার পড়লে হয়তো মনে থাকবে না। কিন্তু দ্বিতীয়বার পড়লে কিছু কিছু মনে থাকবে। তৃতীয়বার পড়লে আরো অনেক কিছু মনে থাকবে। এভাবে মনে রাখার মতো অবস্থা আস্তে আস্তে বাড়বে। আর পড়ার সময় অবশ্যই খাতায় শব্দগুলো লিখে রাখবে। পরে আবার দেখবে।’ এ পরামর্শটা বাস্তবে কাজ করতে শুরু করল। একটু একটু করে অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। তবে এতটুকুতেই সন্তুষ্ট ছিলাম না। ঠিক করলাম—ঘুম থেকে উঠে নাশতার আগ পর্যন্ত শুধু ভোকাব্যুলারি পড়ব। এভাবে টানা চার মাস চর্চা করে ভোকাব্যুলারি বইটা শেষ করেছি। দেখলাম—আগের চেয়ে অনেক বেশি ভোকাব্যুলারি পারি। তখন ভোকাব্যুলারির আরেকটি বড় বই কিনি, আগের প্রস্তুতির কারণে সেটা শেষ করতে বেগ পেতে হয়নি। এরপর পিসি দাশের Applied English Grammar & Composition বইটি নিয়ে বেছে বেছে গুরুত্বপূর্ণ চ্যাপ্টারগুলো শেষ করি।

এবার আসি ইংরেজি গ্রামারে। প্রথমে ভালো করে Parts of Speech শেষ করি। তারপর Tense, Subject Verb Agreement, Right Forms of Verb, Preposition। এগুলো শুধু বিসিএসই না, যেকোনো চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য একেবারে কমন। তারপর Group Verb এবং Phrase & Idioms শেষ করার পর মনে হলো, ‘প্রস্তুতি পাকাপোক্ত’।

ইংরেজি গ্রামারের জন্য চৌধুরী অ্যান্ড হোসাইন এবং পিসি দাশের বই দুটি বেশ কাজে এসেছে। পাশাপাশি English For Competitive Exam বইটিও খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়েছি। ইংরেজি পত্রপত্রিকার সম্পাদকীয় নিয়মিত পড়েছি।

গণিত প্রস্তুতির জন্য প্রথমে গণিতের সূত্রের চার্ট কিনে বেসিক সূত্রগুলো মুখস্থ করে ফেলি। দিনে দু-তিনটি করে দেখেছি। একসঙ্গে বেশি সূত্র পড়লে অনেক সময় মনে থাকে না। আর গণিতের ক্ষেত্রে সূত্রেই যদি ভুল হয়, তাহলে গোটা অঙ্কটাই ভুল হবে; সমাধান পর্যন্ত যাওয়া যাবে না। দেখলাম, মাস দুয়েকের মধ্যে সব সূত্র শেখা শেষ। পাশাপাশি রুটিন করে করে পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণির গণিত বইয়ের অঙ্কগুলো করেছি। এগুলো শুধু বিসিএস প্রিলি না, পরে রিটেন ও ব্যাংকের পরীক্ষাগুলোয়ও আমাকে দারুণভাবে হেল্প করেছে। এরপর বিসিএস প্রিলিতে আসা আগের বছরগুলোর গণিত প্রশ্নগুলোর সমাধান করেছি। যখন কোথাও খটকা লেগেছে, তখনই ক্লিয়ার হয়েছি।

বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় আসা গণিত প্রশ্নের বই বাজারে পাওয়া যায়, সেগুলোও দেখেছি।

আমার মতে, গণিতের সূত্র মুখস্থ করার পর ব্যাপকভাবে চর্চা করলে দুর্বল প্রার্থীও গণিতের ‘মাস্টার’ হয়ে উঠবে! আর এর জন্য শর্টকাট চিন্তা না করে বিস্তরভাবে আগাগোড়া চর্চা করতে হবে। তখন নিজেই শর্টকাট মেথড বের করতে পারবেন; কিন্তু শেখা বা চর্চার সময়ই যদি শর্টকাট অ্যাপ্লাই করেন, তাহলে গোড়ায়ই গড়বড় থেকে যাবে। তবে হ্যাঁ, কিছু কিছু ক্ষেত্রে শর্টকাটে মনে রাখা যায়, তবে সব কিছুতে নয়।

দিন-রাত বাসায় অনেকটা রুটিনমাফিক পড়াশোনা করতাম। তখন শুধু বিসিএস গাইড না, অনেক প্রাসঙ্গিক বই, ম্যাগাজিন, নিউজ পেপার পড়তাম। লিখিত পরীক্ষার জন্য আমি টপিক ধরে প্রস্তুতি নিতাম। আর যে টপিকটা শিখতাম, চেষ্টা করতাম এমনভাবে শিখতে যাতে ওই টপিক থেকে যে প্রশ্নই আসুক আমি যেন শতভাগ শুদ্ধ উত্তর দিতে পারি।

লিখিত পরীক্ষার পরপরই ভাইভার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছিলাম। ভাইভার জন্য বিভিন্ন বই, নিউজ পেপার, টিভি নিউজ ছাড়াও ফেসবুকের বিভিন্ন বিসিএস গ্রুপ থেকে নিয়মিত প্রস্তুতি নিতাম। এমনকি রাতের খাবারের পরে আমি খন ছাদে হাঁটতে যেতাম তখনো পড়া মনে করার চেষ্টা করতাম; এভাবে প্রস্তুতির দিনগুলোতে প্রত্যেকটি মুহূর্তকে আমি কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছিলাম।

যেহেতু পররাষ্ট্র ক্যাডার পেতে হলে সবসময়ই বিসিএস পরীক্ষার মেধাতালিকায় প্রথম দিকে থাকতে হয়। তাই চেষ্টা থাকতে হবে সর্বোচ্চ নম্বর কিভাবে পাওয়া যায়। বিশেষ করে লিখিত পরীক্ষায় নিজেকে অন্যদের থেকে আলাদাভাবে উপস্থাপন করতে হবে। সেক্ষেত্রে বর্ণনামূলক উত্তর লেখার থেকে পয়েন্ট বা সাবপয়েন্ট দিয়ে, বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক ফিগার, চার্ট, গ্রাফ, উৎসসহ স্ট্যাটিসটিকস ব্যবহার করলে তুলনামূলকভাবে ভালো নম্বর পাওয়া সম্ভব। আর ইংরেজিতে ভালো দখল থাকতে হবে। অনেকে হয়তো বলবে যে, পররাষ্ট্র ক্যাডার পেতে হলে খুব ভালো ব্যাকগ্রাউন্ড থাকতে হয়। মানে খুব ডিমান্ডিং কোনো সাবজেক্টে, খুব ভালো কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি থাকতে হয়, সুদর্শন হতে হয় ইত্যাদি ইত্যাদি। এগুলোর কোনটাই আসলে ঠিক না। তবে হ্যাঁ, তুমি যেখানেই পড়াশোনা করো আর দেখতে যেমনই হও, তোমাকে যোগ্যতার প্রমাণ রাখতে হবে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায়।

পিএসসি তোমার সাবজেক্ট বা বিশ্ববিদ্যালয় কতটা ভালো তা বিচার করবে না, বিচার করবে ব্যক্তি তুমি মেধায় আর যোগ্যতায় কূটনৈতিক হওয়ার যোগ্য কি-না। তাই যাদের স্বপ্ন পররাষ্ট্র ক্যাডার, তাদেরকে বলবো সময় নষ্ট না করে আজ থেকেই নিজস্ব স্টাইলে গুছিয়ে প্রস্তুতি নিতে শুরু করো, এলোমেলো ভাবে না। শুধু ভালো পরীক্ষার মাধ্যমেই তুমি তোমার স্বপ্নকে সত্যি করতে পারো। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, নিজের উপর বিশ্বাস রেখে আর লক্ষ্যে অটুট থেকে কঠোর পরিশ্রম করো, সফল তুমি হবেই।

ইবিডি/ ক্যাম্পাস২৪

শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে EducationsinBD.com এর ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন YouTube Channel জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল নোটিশ দেখুন এখানে একসাথে National University Notice Board অনার্স /মার্স্টাস/ ডিগ্রি পরীক্ষার প্রিমিয়াম সাজেশন পেতে ফেসবুক পেজে মেসেজ দিন। https://www.facebook.com/PremiumSuggestion আমাদের ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করুন Facebook Group

One thought on “জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কোচিং ছাড়াই বিসিএস ক্যাডার হলেন যেভাবে

  • অনার্সে সিজিপিএ কত ছিল??

    Reply

Leave a Reply