শিক্ষা নিউজ

নারী শিক্ষা অনুচ্ছেদ: জাতীয় জীবনে নারীশিক্ষার গুরুত্ব

নারী শিক্ষা অনুচ্ছেদ: জাতীয় জীবনে নারীশিক্ষার গুরুত্ব । ভূমিকা : বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারী। এই অর্ধেক অংশকে বাদ দিয়ে দেশের কোনো উন্নয়ন যথার্থভাবে সম্পন্ন হতে পারে না। নারীশিক্ষার বিষয়টিও আমাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত। বর্তমান সময়ে নারী-পুরুষ-নির্বিশেষে সবার মৌলিক অধিকার সমান ও অভিন্ন। আধুনিক বিশ্বে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক পালাবদলে নারী ও পুরুষ অভিন্ন সহযোদ্ধা। কিন্তু নারীকে নিরক্ষরতার অন্ধকারে রেখে সেই আকাঙ্ক্ষিত ফল লাভ করা তাদের কাছ থেকে সম্ভব নয়। তাই আজ নারীশিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম।

নারীশিক্ষার পটভূমি : প্রাচীনকালে প্রচলিত মাতৃতান্ত্রিক অনেক আদিবাসী সমাজে নারীর প্রাধান্য ছিল নিরঙ্কুশ। বাংলাদেশে খাসিয়া, গারো ও রাজবংশীসমাজে নারীর গুরুত্ব রয়েছে। প্রাচীন হিন্দু ও বৌদ্ধ সাহিত্যে শিক্ষিত নারীর সাক্ষাৎ পাওয়া যায়। কিন্তু পরবর্তীকালে নারীকে করে রাখা হয় অন্তঃপুরবাসিনী। আধুনিককালে নারীর স্বতন্ত্র মর্যাদা স্বীকৃত হয় পাশ্চাত্যে—দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর। ভারতে ইংরেজ শাসন প্রতিষ্ঠিত হলে নারীশিক্ষার সূচনা ও প্রসার ঘটে। ইংরেজ আমলে নারীশিক্ষার বিকাশের প্রত্যক্ষ ফল হচ্ছে প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যায়ে সহশিক্ষার প্রবর্তন। মাধ্যমিক পর্যায়ে ছেলে ও মেয়েদের জন্য আলাদা শিক্ষাব্যবস্থা—যদিও কোনো কোনো বিদ্যালয়ে চালু হয়েছিল সহশিক্ষাপদ্ধতি। পরে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার সহশিক্ষা প্রচলিত হয়। মেয়েদের জন্যও পৃথক কলেজ গড়ে ওঠে। যেমন—ইডেন কলেজ, হলিক্রস কলেজ, বেগম রোকেয়া কলেজ প্রভৃতি। এসব অগ্রগতি সত্ত্বেও শিক্ষা ক্ষেত্রে নারীর অবস্থান পুরুষের চেয়ে অনেক পশ্চাত্পদ।

প্রিমিয়াম সাজেশন Premium Suggestion

নারীশিক্ষায় বেগম রোকেয়া : আমাদের দেশে নারীশিক্ষার প্রচলন হয় ঊনবিংশ শতাব্দীতে। এ দেশে নারীশিক্ষার প্রচার ও প্রসারে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর অনন্য অবদান রেখে গেছেন। তবে মুসলিম নারী সম্প্রদায়ের মধ্যে নারীশিক্ষার প্রকৃত দ্বার উন্মোচনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন বেগম রোকেয়া। তিনি নারীশিক্ষার প্রয়োজন অনুধাবন করেছেন বলেই ১৯০৯ সালে ‘সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল’ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন, নারীশিক্ষার মধ্যেই অগ্রগতি, তথা পারিবারিক-সামাজিক মুক্তি সম্ভব। তাই তিনি নারীশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে গ্রন্থ ও অসংখ্য প্রবন্ধ রচনা করেন।

প্রাচীন ও মধ্যযুগে নারীশিক্ষা : প্রাচীনকালে নারীরা পুরুষের পাশাপাশি বিভিন্ন কর্মযজ্ঞে অংশগ্রহণ, শিক্ষা গ্রহণ, তথা জ্ঞান অর্জন করেছে। নারীসমাজ কি প্রাচীন কি মধ্যযুগ—কোনোকালেই খুব একটা অগ্রসর হতে পারেনি। ধর্মীয় কুসংস্কার ও সামাজিক গোঁড়ামি তখনকার নারীদের শৃঙ্খলিত ও অবরোধবাসী করে রেখেছিল। উঁচু মহলেও নারীশিক্ষার প্রসার বাড়ির দোরগোড়া পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল। নারীর প্রধান আশ্রয়স্থল ছিল অন্তঃপুরের বন্দিশালা। বাল্যবিয়ে, বহুবিয়ে ও কঠোর কৌলীন্য প্রথায় নারীর জীবন অভিশপ্ত হয়ে ওঠে।

স্বাধীন বাংলাদেশে নারীশিক্ষা : মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হলে জাতীয় জীবনে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি হয় ও গণতান্ত্রিক চেতনার ব্যাপক সম্প্রসারণ ঘটে। সমাজে নারী-পুরুষের ব্যবধান কমে আসে। স্বীকৃতি পায় নারী-পুরুষের সমান মৌলিক অধিকার। সক্রিয় হয়ে ওঠে বিভিন্ন নারী সংগঠন। ধীরে ধীরে নারীমুক্তি আন্দোলনের মাধ্যমে নারীরা তাদের অধিকার আদায়ে দেশে নানা প্রক্রিয়া শুরু করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিশ্বের সঙ্গে সৃষ্টি করে যোগসূত্র। বর্তমানে শিক্ষা ক্ষেত্রে নারীরা পুরুষের সমকক্ষ তো বটেই, অনেক ক্ষেত্রে অগ্রগামী। সাম্প্রতিক সময়ে প্রাইমারি, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রভৃতি স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মেয়েরা অনেক ক্ষেত্রে ছেলেদের চেয়ে ভালো ফল করছে। গ্রামাঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে শিক্ষার আলো। আজ এমন কোনো গ্রাম নেই, যেখানে কিছু না কিছু উচ্চশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত বা অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন নারীর দেখা পাওয়া যাবে না।

নারীশিক্ষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা : শিক্ষাই উন্নয়নের চাবিকাঠি। একটি দেশের অর্ধাংশ যদি অশিক্ষার অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকে, তবে সে দেশের উন্নতি আদৌ সম্ভব নয়। শিক্ষিত ও স্বনির্ভর জাতি হিসেবে পৃথিবীতে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হলে নারীশিক্ষার বিস্তার অপরিহার্য। নারীশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব উপলব্ধি করেই নেপোলিয়ন বলেছিলেন—

‘আমাকে তোমরা শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদের একটা শিক্ষিত জাতি দেব।’

একজন শিক্ষিত মা তাঁর সন্তানকে শিক্ষিত ও নিজের আদর্শে আদর্শবান করে গড়ে তুলতে পারেন। কারণ সন্তানের ওপর মায়ের প্রভাবই বেশি পড়ে। মায়ের কাছ থেকে তারা আচার-আচরণ, আদব-কায়দা ইত্যাদি শিক্ষা গ্রহণ করে থাকে। পুরুষের পাশাপাশি নারীশিক্ষার প্রসার ছাড়া জাতীয় প্রতিভার সামগ্রিক বিকাশ সম্ভব নয়। এ প্রসঙ্গে মহামতি লেনিনের উক্তি স্মরণীয়। তিনি বলেছেন—

‘নারীর সাহায্যে, তার চিন্তা ও সচেতনতায় সভ্যসমাজের নির্মাণ সুদৃঢ় হতে পারে।’

সুতরাং নারীর চিন্তাশীলতা ও সচেতনতা জাতীয় জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দিক। কিন্তু এই সচেতনতা সৃষ্টির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা। তাই নারীশিক্ষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। বস্তুত নারীর স্বাবলম্বিতা অর্জনে, গৃহস্থালি কাজে, দেশ গঠনে, দারিদ্র্য বিমোচনে, ফতোয়াবাজি-বাল্যবিয়ে রোধে, বখাটের উত্পাত ও কুসংস্কার রোধে নারীশিক্ষার গুরুত্ব অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। সে জন্যই বিদ্রোহী কবি বলেছেন—

‘বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর।

অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর।’

নারীশিক্ষা প্রসারের উপায় : প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে নারীসমাজ যাতে শিক্ষার সুযোগ পায়, সে জন্য প্রয়োজন প্রচলিত ধারার পাশাপাশি বিশেষ ধরনের শিক্ষা পরিকল্পনা। সে ক্ষেত্রে রেডিও, টিভি ইত্যাদি মাধ্যম, লোকরঞ্জনমূলক ও কর্মমুখী শিক্ষা কর্মসূচি গ্রামীণসমাজ ও পরিবেশ উন্নয়ন কর্মসূচির সঙ্গে সম্পৃক্ত ও সমন্বিতভাবে বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। এসব দিক বিবেচনায় রেখে নারীশিক্ষা সম্প্রসারণে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো নেওয়া যেতে পারে :

সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, যেন স্কুলগামী ছাত্রী তাদের প্রতিষ্ঠানে নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারে।

প্রতিটি নারীর প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য গ্রামপর্যায়ে ছোট ছোট স্কুল স্থাপন, যেন বাড়ি থেকে স্কুলের দূরত্ব খুব বেশি না হয়।

শিক্ষাগ্রহণে নারীকে উদ্যোগী ও উত্সাহিত করার লক্ষ্যে সরকারি উপবৃত্তি যথাযথভাবে কাজে লাগানো।

শিক্ষা খাতে সরকারের বরাদ্দ অর্থ অবকাঠামো নির্মাণের চেয়ে নারীশিক্ষা সম্প্রসারণে বেশি করে কাজে লাগানো এবং সে ক্ষেত্রে জবাবদিহির ওপর গুরুত্ব প্রদান।

ধসারা দেশে নারীশিক্ষা আন্দোলন গড়ে তোলা। এই আন্দোলনে শিক্ষানুরাগী সম্প্রদায়কে কার্যকরভাবে সম্পৃক্ত করা। অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষকদের এ কাজে বিশেষভাবে নিয়োগ প্রদান।

সামাজিক কুসংস্কার, আর্থিক দারিদ্র্য ইত্যাদি অন্তরায় কাটিয়ে শিক্ষার ক্ষেত্রে এগিয়ে আনার জন্য সামাজিক প্রণোদনা সৃষ্টি করা। এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যম ও বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনকে বিশেষভাবে কাজে লাগানো।

উপসংহার : মানবাধিকার, অগ্রগতি ও প্রগতির একুশ শতকে বিভিন্ন বাধা কাটিয়ে নারীকে এগিয়ে আসতে হবে মানুষের ভূমিকায়। আলোকিত মানুষ হিসেবে তাকে গড়ে উঠতে হবে। যুগ যুগ ধরে যে নারী চোখের জলের কোনো মূল্য পায়নি, আধুনিক সমাজে সে নারীকে দাঁড়াতে হবে শিক্ষিত, মার্জিত, আলোকিত মানুষ হিসেবে। তাহলেই সমাজে ফিরে আসবে নারীর মর্যাদা। এ ক্ষেত্রে নারীশিক্ষার কোনো বিকল্প নেই
নারী শিক্ষা
বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারী। জ্ঞান-বিজ্ঞানের সাধনায় ও কর্মজীবনে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের স্থান করে দিতে হবে। সমাজের ভারসাম্য ও স্থিতি নির্ভর করে নারী ও পুরুষের পারস্পরিক সহযোগিতার ওপর। উচ্চশিক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও কর্মের ক্ষেত্রে নারীকে আসন দিতে হলে যে মানসিক প্রস্তুতি প্রয়োজন, সহশিক্ষা তার পথ নির্মাণ করবে। উচ্চশিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণের ফলে ইউরোপ ও আমাদের দেশে কখনো কখনো যে বিশৃঙ্খলা ও সামাজিক বিপর্যয় সৃষ্টি করেনি তা নয়। কিন্তু এর জন্য নারী শিক্ষাকে দায়ী না করে ব্যক্তি ও তার পরিবেশকেই দায়ী করা উচিত। অনেকে মনে করে, নারী শিক্ষার ধুয়াটি নিতান্ত হাল আমলের সৃষ্টি। আসলে তা সত্য নয়। এই উপমহাদেশে প্রাচীন যুগেও নারী শিক্ষার প্রচলন ছিল। গুল বদন ও জেবুন্নিসার মতো বিদুষী মুঘল রমণীর গৌরবময় ইতিহাস সে কথাই মনে করিয়ে দেয়। ইসলাম নির্দেশিত পর্দাপ্রথা যখন অবরোধ ব্যবস্থায় পরিণত হলো, তখন থেকে মুসলিম নারীদের অধ্যয়নের পথ সংকুচিত হয়েছে। মনুর সমাজব্যবস্থা থেকেই কিন্তু নারী শিক্ষার পথ দুর্গম হয়ে ওঠে। ইংরেজ শাসনকালে শিক্ষা বিস্তারের জন্য যে আন্দোলন গড়ে ওঠে, তার ফলে নারী শিক্ষার পুনর্বিস্তার ঘটে। নারী শিক্ষা বিষয়ে সমাজের রক্ষণশীল মনোভাব আজ এক প্রকার পর্যুদস্ত হয়েছে বলা হয়। আমাদের দেশে নারী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অত্যধিক। দেশের অনগ্রসরতা দূর করার জন্য পুরুষের পাশাপাশি জনসংখ্যার অর্ধেক নারী সমাজকে যথার্থ কাজে লাগাতে হবে। তাই নারী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

post releated keyword

নারী শিক্ষা pdf

নারী শিক্ষা কাকে বলে

নারী শিক্ষা নিয়ে উক্তি

নারী শিক্ষা কেন প্রয়োজন

নারী শিক্ষার সমস্যা

পুডিং অনুচ্ছেদ

আমাদের বিদ্যালয় অনুচ্ছেদ
শিক্ষার গুরুত্ব রচনা

শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে EducationsinBD.com এর ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন YouTube Channel জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল নোটিশ দেখুন এখানে একসাথে National University Notice Board অনার্স /মার্স্টাস/ ডিগ্রি পরীক্ষার প্রিমিয়াম সাজেশন পেতে ফেসবুক পেজে মেসেজ দিন। https://www.facebook.com/PremiumSuggestion আমাদের ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করুন Facebook Group

Leave a Reply