আর কত দেরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে
করোনার প্রাদুর্ভাবে এক বছর তিন মাস ধরে বন্ধ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এই সময়ে নেওয়া হয়নি কোনো পরীক্ষা। শহরের কিছু শিক্ষার্থী অনলাইনে লেখাপড়া করলেও মফস্বলের শিক্ষার্থীদের সেই সুযোগ নেই। গত বছরের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ‘অটোপাস’ দেওয়া হলেও এ বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা বড় সংকটে পড়েছে। নিয়মিতই বাড়ির বাইরে বের হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে না পেরে হতাশ শিক্ষার্থীরা। এমনকি শিক্ষকদের পক্ষ থেকেও বিশ্ববিদ্যালয় খোলার দাবি উঠেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে আর কত দেরি, তা জানার জন্য এখন সবচেয়ে বেশি উদগ্রীব শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি বারবার বাড়িয়ে সর্বশেষ আগামী ২৯ মে পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু এর পরও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সম্ভাবনা খুবই কম। কারণ করোনা সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের নিচে না এলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে মত নেই কভিডসংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক কমিটির। বর্তমানে করোনা সংক্রমণের হার প্রায় ৮ শতাংশের কাছাকাছি। ফলে আরো কিছুদিন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে চায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
গত সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদসচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এসব কাজ শেষ হলে করোনা পরিস্থিতি দেখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে সরকার।
জানা যায়, গত বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীদের ‘অটোপাস’ দিয়ে অনেকটাই সমালোচনার মুখে পড়েছে শিক্ষা প্রশাসন। তাই আপাতত বড় কোনো পাবলিক পরীক্ষায় ‘অটোপাসে’র চিন্তা তাদের নেই। ফলে চলতি বছরের ৪০ লাখ এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী নিয়ে মহাসংকটে পড়েছে তারা। এসব শিক্ষার্থীকে ক্লাস না করিয়ে কোনোভাবেই পরীক্ষা নেওয়া যাচ্ছে না। আবার সরাসরি ক্লাসরুমেও নেওয়া যাচ্ছে না।
বর্তমানে শহরের বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অনলাইনে ক্লাস করলেও মফস্বলের শিক্ষার্থীদের সেই সুযোগ নেই। কারণ মফস্বলের শিক্ষকরাও অনলাইন ক্লাস পরিচালনা করছেন না। আবার শিক্ষার্থীদের কাছেও ডিভাইস নেই। যাদের আছে তাদের অনেকেরই ইন্টারনেট নেই। এ ছাড়া গ্রামে ইন্টারনেটের ধীরগতি মারাত্মক, যা দিয়ে অনলাইন ক্লাস ঠিকমতো করাটাও সম্ভব নয়।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (মাধ্যমিক) মো. বেলাল হোসাইন বলেন, ‘আমরা আপাতত অনলাইন শিক্ষায়ই জোর দিয়েছি। এ জন্য শিক্ষকরা কী কী সমস্যায় পড়ছেন, তা আমরা স্কুলগুলো থেকে জানার চেষ্টা করছি। এরপর সমস্যাগুলো সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ ছাড়া সরকারি বিধি-নিষেধ তুলে নেওয়ার পর ফের আমরা শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়ার পরিকল্পনা করেছি।’
এদিকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো না খোলায় বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন শিক্ষার্থীরা। গত মার্চে তাঁদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতেই বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ঘোষণা দিয়েছিল সরকার। কিন্তু করোনার ঊর্ধ্বগতিতে ফের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছুটি আগামী ২৯ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীরা বর্তমানে অনলাইনে একত্র হচ্ছেন। ২৯ মের পর বিশ্ববিদ্যালয় না খুললে তাঁরা আবার বড় আন্দোলনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও তা প্রত্যাখ্যান করেছেন শিক্ষার্থীরা।