শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পরীক্ষা বন্ধ রাখার সুপারিশ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেগুলো বন্ধ আছে সেগুলো বন্ধ রাখা, যেকোনো পাবলিক পরীক্ষা (বিসিএস, এসএসসি, এইচএসসি, মাদ্রাসা, দখিলসহ অন্যান্য) বন্ধ রাখাসহ ১২ দফা সুপারিশ করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। মঙ্গলবার এসব বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে লিখিতভাবে জানানো হয়। অধিদপ্তর মনে করে, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এসব বিধিনিষেধ বাস্তবায়নের বিকল্প নেই।
আরো পড়ুন- শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যা বললেন
মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কনফারেন্স রুমে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সভাপতিত্বে কোভিড-১৯ প্রতিরোধ ও বর্তমানে করণীয় সম্পর্কে জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ১২টি প্রস্তাব গৃহীত হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ১২ দফা সুপারিশ গুলো হচ্ছে:
১. শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেগুলো বন্ধ আছে সেগুলো বন্ধ রাখতে হবে। অন্যান্য কার্যক্রম সীমিত রাখতে হবে।
২. যেকোনো পাবলিক পরীক্ষা (বিসিএস, এসএসমি, এইচএসসি, মাদ্রাসা, দখিলসহ অন্যান্য) বন্ধ রাখতে হবে।
৩. সম্ভব হলে কমপ্লিট লকডাউনে যেতে হবে। সম্ভব না হলে ইকোনমিক ব্যালান্স রেখে যেকোনো জনসমাগম বন্ধ করতে হবে।
৪. কাঁচা বাজার, পাবলিক ট্রান্সপোর্ট, শপিংমল, মসজিদ, রাজনৈতিক সমাগম, ভোট অনুষ্ঠান, ওয়াজ মাহফিল, পবিত্র রমজান মাসের ইফতার মাহফিল ইত্যাদি অনুষ্ঠান সীমিত করতে হবে।
৫. কোভিড পজিটিভ রোগীদের আইসোলেশন জোরদার করা।
৬. যারা রোগীদের কন্ট্রাকে আসবে তাদের কঠোর কোয়ারেন্টিনে রাখা
৭. বিদেশ থেকে বা প্রবাসী যারা আসবেন তাদের ১৪ দিনের কঠোর কেয়ারেন্টিনে রাখা এবং এ ব্যাপারে সামরিক বাহিনীর সহায়তা নেওয়া
৮. আগামী ঈদের ছুটি কমিয়ে আনা
৯. স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে আইন প্রয়োজনে জোরদার করা
১০. পোর্ট অব এন্ট্রিতে জনবল বাড়ানো, মনিটরিং জোরদার করা,
১১. সব ধরনের সভা ভার্চুয়াল করা এবং
১২. পর্যটন এলাকায় চলাচল সীমিত করা।
জানা গেছে, প্রস্তাবগুলো ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ে এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে। সরকারের পরবর্তী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কাজ করবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
এসব প্রস্তাবের পাশাপাশি কয়েকজন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আরও ৫টি প্রস্তাবনা দিয়েছেন। সেখানে তারা বলেছেন- বইমেলা বাতিল করতে হবে, বদ্ধস্থানে বা কক্ষে ইফতার পার্টি না করতে নির্দেশনা দিতে হবে, ঈদের ছুটি কমিয়ে ১ দিন করতে হবে, কক্সবাজারসহ পর্যটন এলাকায় যাতায়াত সীমিত করতে হবে এবং মসজিদে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নামাজের ব্যবস্থা করতে হবে।
আরো পড়ুন- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত রিভিউ হতে পারে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দ্রুত বাড়তে থাকায় জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে আগের মতো কঠোর হওয়ার কথা বলেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেছেন, মানুষ যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে, তা নিশ্চিত করতে আবারও ভ্রাম্যমাণ আদালত বসবে। মাস্ক না পরলে-স্বাস্থ্যবিধি না মানলে জরিমানা করা হবে। এ বিষয়ে জেলা পর্যায়ে কয়েকটি নির্দেশনা দিয়ে ইতোমধ্যে চিঠিও পাঠানো হয়েছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, তাদের চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে, আমাদের সিদ্ধান্ত যেগুলো ছিল, সেগুলো যেন প্রয়োগ করে। অর্থাৎ মোবাইল কোর্ট করে। যারা মাস্ক না পরে তাদেরকে জরিমানা করবে। নো মাস্ক নো সার্ভিস কর্মসূচিকে আরও কঠোরভাবে প্রয়োগ করবে। বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে গেস্ট কন্ট্রোল করবে।
এদিকে গত ডিসেম্বরের পর সংক্রমণের মাত্রা ধীরে ধীরে কমতে থাকলেও চলতি মার্চের শুরু থেকে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। দৈনিক শনাক্ত রোগীর হার সোমবারও ৯ শতাংশ পেরিয়ে গেছে, যা দুই মাস আগে ৩ শতাংশের নিচে নেমেছিল। দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা আবার ১৭ শর ঘরে উঠেছে, যা এক মাস আগেও তিনশর ঘরে ছিল। গত দুই দিনেই ২৬ জন করে মারা গেছেন এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে।
দেশে করোনা শনাক্তের এক বছর পার হওয়ার পর দুই মাসের ব্যবধানে গত বুধবার আবারও হাজারের ঘরে পৌঁছায় শনাক্তের সংখ্যা। এরপর থেকে করোনা শনাক্তের সংখ্যা হাজারের নিচে নামেনি। রোববার (১৪ মার্চ) স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ১১৫৯ জনের করোনা শনাক্তের কথা জানিয়েছিল। সোমবার শনাক্ত হয়েছিল ১৭৭৩ জন। এটি ছিল গত ৩ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। তবে মঙ্গলবার শনাক্তের সংখ্যা কিছুটা কমে দাঁড়িয়েছে ১৭১৯ জনে। এই সময়ে মৃত্যু হয়েছে ২৬ জনের। শনাক্ত বিবেচনায় গত ২৪ ঘণ্টায় প্রতি ১০০ নমুনায় ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ এবং এখন পর্যন্ত ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ শনাক্ত হয়েছে।
Vera good