সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা স্থায়ীভাবে ৩২ করার দাবি
করোনার কারণে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ২১ মাস ছাড়ের পরিকল্পনা করছে সরকার। তবে চাকরিপ্রত্যাশী একদল তরুণ চাকরির বয়সসীমা ৩২ বছর করার দাবিতে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। একইসঙ্গে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি বিবেচনায় চাকরিতে প্রবেশের বয়সের ক্ষেত্রে ২১ মাস ছাড় দেওয়ার পরিকল্পনাকে ‘বৈষম্যমূলক’ বলেও উল্লেখ করেন তারা।
শুক্রবার (১৩ আগস্ট) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতিতে সংবাদ সম্মেলন করে তারা বলেন, চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ বছর না করা হলে আগামী ২১ আগস্টের পর শাহবাগে লাগাতার কর্মসূচি পালন করা হবে। প্রয়োজনে আমরণ অনশন।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা জানান, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ হওয়ায় কয়েক লাখ তরুণ-তরুণী ইতোমধ্যেই চাকরির পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়ার সুযোগ না পেয়েই ৩০ এর গণ্ডি অতিক্রম করেছেন এবং আরও কয়েক লাখ বিপদসীমার কাছাকাছি রয়েছেন।
এর আগে গত বছরের ২৫ মার্চের পর থেকে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত যাদের সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ ছাড়িয়ে গেছে, তাদের ক্ষেত্রে ২১ মাস ছাড় দেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানায় সরকার।
চাকরিপ্রত্যাশীরা জানান, ২১ মাস ছাড় দেওয়ার পরিকল্পনাটি বৈষম্যমূলক এবং এই পদ্ধতিতে সমাধানের চেষ্টা করা হলে মূলত যাদের বয়স ৩০ পার হয়েছে তাদের জন্য কোনো রকম উপকার হলেও যাদের বয়স এখন ২৭, ২৮ বা ২৯ তারা চরমভাবে বঞ্চিত ও বৈষম্যের স্বীকার হবেন।
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ করার দাবিতে এর আগে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি ও খোলা চিঠিও দেয়া হয়েছে বলে জানান আন্দোলনকারীরা।
এই প্রসঙ্গে লিখিত বক্তব্যে তারা জানান, ‘ব্যাকডেট দেওয়া বা বয়স সমন্বয়ের মাধ্যমে সকল বয়সী শিক্ষার্থী তথা চাকরিপ্রত্যাশীদের ক্ষতিপূরণ সম্ভব নয়। করোনা শুধুমাত্র ৩০ বছর অতিক্রম করে যাওয়া চাকরিপ্রত্যাশীদেরই ক্ষতি করেনি, বরং সকল বয়সীদের ক্ষতি করেছে। যে ছেলেমেয়েরা বিগত দেড় বছর ধরে অনার্স বা মাস্টার্স পর্যায়ে আটকে আছে তারাও সামনে ভুক্তভোগী হবে। কোভিড-১৯ শুরুর সময়ে যাদের ২৬ বছর ছিল তাদের বয়স এখন ২৮। তাই এখন ব্যাকডেট দিলে যাদের বয়স ৩০ পার হয়েছে তাদের জন্য কোনোরকম উপকার হলেও যাদের বয়স এখন ২৭, ২৮ বা ২৯ তারা চরমভাবে বঞ্চিত ও বৈষম্যের স্বীকার হবেন। কেননা তারাও তাদের বয়স থেকে ২টি বছর হারিয়ে ফেলেছেন, যার কোনো ক্ষতিপূরণ ব্যাকডেট প্রক্রিয়ায় হচ্ছে না।’
গড় আয়ু বৃদ্ধি পেলেও সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধি করা হয়নি জানিয়ে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘১৯৯১ সালে শেষবার সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ২৭ থেকে বৃদ্ধি করে ৩০ করা হয় যখন গড় আয়ু ছিল ৫৭ বছর। এই ৩০ বছরে গড় আয়ু ১৬ বছর বৃদ্ধি পেয়ে ৭৩ বছর হলেও বৃদ্ধি পাই নাই চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা।’
এ সময় প্রধানমন্ত্রীর নিকট নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণের সুযোগ চেয়ে তারা জানান, ‘করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত যুব প্রজন্ম কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট চাল-ডাল বা অর্থ সাহায্য প্রত্যাশা করছে না। চাকরি প্রাপ্তির দাবি বা বেকার ভাতা চাইছে না। মহামারির প্রকোপে জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়া ২টি বছর ‘৩২’ এর মাধ্যমে ফিরে পেলে সবাই নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণের সুযোগটুকু অন্তত পাবে।’